The History of Oak Trees: সাউথ ফিনলে স্ট্রিটে রয়েছে একটি ‘ওক গাছ‘, অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য আছে, আসলে ওই গাছের মালিক গাছ নিজেই। গাছের মালিকানা মানুষের হাতে না থেকে যদি গাছ নিজেই নিজের মালিক হয় তাহলে কেমন হবে?
ছোটবেলা থেকে বইয়ের পাতায় পড়া একটাই লাইন গাছ লাগান প্রাণ বাঁচান প্রতিটা মানুষের জীবনের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ কথা। একটি গাছ সত্যি একটি প্রাণ সেটা অক্সিজেন এবং কার্বনডাই-অক্সাইডের সমীকরণ দেখলেই বোঝা যায়। যতদিন যাচ্ছে গাছ কেটে সভ্যতা তার অগ্রগতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে আর এর নেপথ্যে রয়েছে মানুষের মস্তিষ্ক।
কিন্তু গাছের মালিকানা মানুষের হাতে না থেকে যদি গাছ নিজেই নিজের মালিক হয় তাহলে কেমন হবে? আসুন এমন এক গাছের সঙ্গে পরিচয় করা যাক।
ওক গাছ – গাছের মালিক গাছ নিজেই:
আমেরিকার জর্জিয়ার অ্যাথেন্স শহর, সেখানেই সাউথ ফিনলে স্ট্রিটে রয়েছে একটি ‘ওক গাছ‘। ভাবতেই পারেন সব ছেড়ে ওই গাছের পিছনে কেন পড়লাম আমরা। আসল ব্যাপারটা হল গাছটার একটা অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য আছে,যা সকলের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। আসলে ওই গাছের মালিক গাছ নিজেই।
ভাবতে অবাক লাগলেও এটাই সব থেকে বড় সত্যি। সরকারিভাবে এর প্রামাণ্য নথিও আছে। আর এখানেই শেষ নয় ফিনলে স্ট্রিটের ঠিক ওই জায়গায় প্রায় ২০০ স্কোয়ার ফিট জমির মালিকানাও আছে ওই গাছটির নামে। তাহলে একটু ইতিহাসটা তুলে ধরা যাক?
গাছটির মালিকানাধীন ৮ ফিট পর্যন্ত জমি:
সময়টা অষ্টাদশ শতাব্দীর একদম শেষের দিক। প্রকৃতিকে ভালোবাসতো এক কিশোর, নিজের পরিবারের সঙ্গে ওই এলাকাতেই বসবাস করত সে। নিজের মনের খেয়ালেই ছুটির সময় খেলতে খেলতেই একটি গাছ পোঁতে সেই কিশোর। গাছের পরিচর্যার দায়িত্ব সে নিজেই তুলে নেয় নিজের হাতে। সবার সঙ্গে সঙ্গে কিশোরের বয়স বাড়ে সেই ‘ওক’ গাছেরও।
কিশোরটির নাম ছিল ‘উইলিয়াম এইচ জ্যাকসন‘, যিনি আমৃত্যু গাছকে রক্ষা করার সংকল্প নিয়েছিলেন আর করে দেখিয়েও ছিলেন। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় মৃত্যুর আগে গাছটির জন্য তিনি একটি ‘ডিড’ করে যান। আর সেই অনুযায়ী, চারিদিকের ৮ ফিট পর্যন্ত জমি গাছটির মালিকানাধীন।
আরো পড়ুন – Train horns: ট্রেনের হর্ন মানেই বিরক্তি? অথচ এই হর্ন বলে দেয় রেলের আসল তথ্য জানেন?
১৮৩২ সাল নাগাদ গাছটির সামনে ‘কর্নেল উইলিয়াম এইচ জ্যাকসনে’র স্মৃতিতে একটি ফলক লাগানো হয়। উইলিয়াম চলে যাওয়ার পর আশেপাশের মানুষ সেই গাছটিকে আগলে রেখেছিলেন। এবার কাট টু ১৯৪২। প্রায় ‘৫০ ফিটের উচ্চতার ওক গাছ‘টি তখন সুস্থ ভাবেই মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে।
আরো পড়ুন – সম্পর্ক নষ্ট করার ক্ষেত্রে একটা ইগো যথেষ্ট, তাই নয় কি? ইগো আসলে একটা অহংকার বোধ!
ততদিনে অবশ্য এই গাছ সাউথ ফিনলে স্ট্রিটের ল্যান্ডমার্ক হয়ে গেছে। তবে এক শীতের বিকেলে প্রবল তুষার ঝড়ে উপড়ে যায় গাছটি।এরপর গার্ডেন ক্লাবের সদস্যরা ওই একই জায়গায় ওক গাছের ফল নিয়ে আবার সেখানেই পুঁতে দেন যাতে নতুন গাছ জন্ম নেয়। কর্নেল জ্যাকসনের স্মৃতিবিজরিত এই গাছটির নিয়মিত পরিচর্যা শুরু করেন তাঁরা, শুরু হয় আবার প্রথম থেকে বেড়ে ওঠার গল্প।
আরো পড়ুন – মধু খেতে ভালোবাসেন? বাজারে গিয়ে খাঁটি মধু আর ভেজাল মধু চিনবেন কী করে?
নতুন গাছটিকে সরকারিভাবে পুরনো গাছের বংশধর বলে ঘোষণা করা হয়। তাই আইনিভাবে সেই গাছটির মালিক ওই গাছটি নিজেই। শুনতে একটু অদ্ভুত লাগলেও এটাই সত্যি আর সরকারিভাবে এটা করা সম্ভব যা দেখিয়ে দিয়েছে এই গাছ।
আরো পড়ুন – পাখির ডাক কি শয়তানের হাসি? লাফিং কুকাবুরা পাখি, যার কণ্ঠস্বর ‘পৈশাচিক হাসি’-র মতো?
অ্যাথেন্স শহরের মানুষজন এখনও ওই গাছটিকে নিজেদের গর্ব মনে করেন। শুধু তাই নয় গাছটির মালিকানাকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য প্রতিবছর শহরে বিশেষ উৎসব পালিত হয়। শহরের মেয়র থেকে শুরু করে উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা উপস্থিত থাকেন এই উৎসবে। পাশাপাশি চলে বৃক্ষ রোপন এবং গাছের জন্মদিন পালন।