Breaking Bharat: ঝড় ঝাপটার মুখে আপনার বাড়ি? প্রকৃতির রোষানল থেকে কী করে বাঁচাবেন নিজের বাড়ি (Home)? রুদ্ধশ্বাস বেগে আবারো কি ধেয়ে আসছে? একের পর এক ঝড় সামলাবার পর নতুন কোন ঝাপটার মুখে আপনার বাড়ি?
আবারো কি প্রবল ঘূর্ণাবর্তের সৃষ্টি হল?
বিগত দু-তিন বছর ধরে এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে গোটা বিশ্ব। ভাইরাসের দৌরাত্ম্য আছেই, সঙ্গে দাপট আছে প্রকৃতিরও। ফনি, বুলবুল , আমফান, ইয়াস – এবার? প্রতিমুহূর্তে হাওয়া অফিসের ব্রেকিং নিউজ এলেই মাথার মধ্যে ঘোরে ফেলে আসা স্মৃতি। আবারো কি প্রবল ঘূর্ণাবর্তের সৃষ্টি হল? যদি এমনটা হয় কী করে বাঁচব আপনি আমি? (How to save your home)
যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে সব থেকে সমস্যায় পড়েন গরিব নিম্নবিত্ত মানুষজন। বলার অপেক্ষা রাখে না, সাইক্লোনের জন্য প্রতি বছর উপকূলবর্তী অঞ্চলে কাতারে কাতারে মানুষের ঘরবাড়ি ধুলিসাৎ হয়। স্বাভাবিকভাবেই সাইক্লোনের কোপে সবথেকে বেশি ধ্বংস হয় কাঁচা বাড়ি অর্থাৎ মাটির বাড়ি (save your home from natural disasters?)।
কিন্তু প্রকৃতিকে আটকাবার সাধ্য আমাদের নেই। বরং নিজেরাই প্রতিমুহূর্তে নিজেদের বিপদ বাড়াচ্ছি। প্রকৃতিকে ধ্বংস করছি প্রকৃতিও প্রতিশোধ নিচ্ছে। এই খেলা চলতে চলতে বাস্তবে ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে অনেকটা। মনের মাঝে এখনো জ্বলজ্বল করছে স্মৃতি। সাল ২০১৯ , আছড়ে পড়ল সাইক্লোন ফণী ঘণ্টায় ২৬০ কিলোমিটার বেগে। দাপট দেখল অন্ধ্রপ্রদেশ, উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গ।
সাল ২০২০, বাংলার জন্য এক বিভীষিকাময় বছর। মে মাসে ধেয়ে এল আমফান,গতিবেগ ঘন্টায় ২৬০ কিমি। তছনছ করে দিয়ে চলে গেল বাংলাকে। দক্ষিণবঙ্গ – কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা অসহায় হয়ে প্রকৃতির কাছে আত্মসমর্পণ করল (Helpless surrendered to nature)।
নিজের বাড়ি কী করে বাঁচিয়ে রাখবেন?
সাল ২০২১, সাইক্লোন ইয়াস, ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার বেগে। এখানেই শেষ নয় অশনি থেকে নিসর্গ যতবারই ঘূর্ণিঝড়ের খবর এসেছে চমকে উঠেছে প্রত্যেকেই। কিন্তু যেভাবে সুন্দরবন সহ উপকূলবর্তী এলাকা একেবারে শেষ হয়ে গেছে সেখান থেকে বাঁচার উপায় কী?
আয়লার কথাই তো এখনো ভুলতে পারিনি কেউ। এই অবস্থায় নিজের বাড়ি কী করে বাঁচিয়ে রাখবেন (How to save your home) এটা নির্ভর করে বাড়ি কী ভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে তার ওপর। এই কারণে আপনাকে কয়েক হাজার বছর পিছিয়ে যেতে হবে। তবেই তো জানতে পারবেন বাঁচার উপায়।
আজ থেকে প্রায় এক হাজার দেড় হাজার বছর আগের ঘটনা। যখন উঁচু দূর্গ থেকে শুরু করে সু-উচ্চ অট্টালিকা তৈরি করা হত কেবল মাটি, বাঁশ বা কাঠ, আর ইট দিয়ে। আর সেই দূর্গ আর অট্টালিকাগুলো এত বছর বাদেও ঝড়ঝঞ্ঝা কিংবা ভূমিকম্পকে সহ্য করে এখনো রয়ে গেছে।
কিছু ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে কিন্তু তাই বলে মাটিতে মিশে যাইনি। স্থাপত্যবিদ্যার ভাষায় ওয়াটেল এন্ড ডব প্রযুক্তি-ই টিকিয়ে রেখেছে এদের। আপনি জানেন, নিউ মেক্সিকোর হাজার বছর আগে বানানো টাওস পুয়েবলো আজও অক্ষুণ্ণ । আসলে হ্যারিকেন ঝড়ের প্রবণতা মাথায় রেখে এই প্রযুক্তিকে ব্যবহার করা হয়েছিল।
আজকের যুগেও এটা সমান ভাবে কার্যকরী যদি তা সঠিকভাবে প্রয়োগ করা যায়। মূলত গ্রামবাংলার মাটির বাড়ি নির্মাণের সঙ্গে সাদৃশ্য থাকলেও, এর ভিত মাটি থেকে কয়েক ফুট নিচে থাকে। ফলে সাইক্লোন থেকে বাঁচতে খানিকটা অবলম্বন এখান থেকেই পেয়ে যায় বাড়িগুলো। একটু গুছিয়ে আপনাকে বলা যাক বিষয়টা। ওয়াটেল কী?
আরো পড়ুন- বাড়িতে কি প্যারালাইজ়ড রোগী আছেন? এবার স্বস্তি পাবেন আপনি, কারণ তিনিও হাঁটাচলা করবেন সহজেই!
মূলত কাঠ দিয়ে তৈরি বাড়ির কাঠামো হল ওয়াটেল। কাঠগুলোকে খুব শক্তভাবে একটার সঙ্গে আরেকটা কে বেঁধে বানানো হয়। বলা যেতে পারে, কাঠগুলোকে লম্বালম্বি ও আড়াআড়িভাবে একটার সঙ্গে আরেকটা জড়িয়ে একটা পোক্ত বুনন তৈরি করা হয়। আর ডব হল ওয়াটেলের ওপর বসানো প্রলেপ যেটি বালি, মাটি, খড়, এবং তন্তুজ পদার্থ দিয়ে তৈরি করা হয় । ডব কাজ করে ব্লটিং পেপারের মতো।
আরো পড়ুন- Electric cars : জ্বালানির যন্ত্রণা ভুলতে ইলেকট্রিক গাড়িতেই ভরসা বিশেষজ্ঞদের?
বৃষ্টির জলকেও ব্লটিং পেপারের মতো শুষে নিয়ে, মাটির বাড়িটির ধসে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমায়। আপনি জানলে অবাক হবেন, এই প্রযুক্তিতে তৈরি বাড়ির দেওয়ালে মাত্র চার থেকে ছয় ইঞ্চি মোটা । তবে সাইক্লোন বা ভূমিকম্পের হাত থেকে বাঁচতে দেওয়ালের এই পুরুত্বই যথেষ্ঠ।
আরো পড়ুন- Avoid online traps : বাড়ছে প্রতারণা! অনলাইনের ফাঁদ থেকে বাঁচতে মনে রাখুন এই নিয়ম
আড়াআড়ি ও লম্বালম্বিভাবে একটার সঙ্গে আরেকটা আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা কাঠ বা বাঁশই সেই অবলম্বন দেয় অনেকটা। আসলে যতদিন যাবে বছরে ঝড়ের সংখ্যা তত বাড়বে। প্রতিবছর ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য মোটা টাকা খরচ করতে হয়। তাই আগে থেকে যদি উপায় বার করে প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায় তাহলে হয়তো বাঁচানো যেতে পারে অনেকের আশ্রয়।