Breaking Bharat: মধ্যবিত্ত পরিবারের প্রিয় বাপুজী কেক (Bapuji Cake), এই বাপুজী কেক আজও বাঙালির নস্টালজিয়া! বাপুজী সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষে পড়তে চলেছে! ভাবতে পারছেন সেই আটপৌরে আশি বা নস্টালজিক নব্বই এর বাপুজী কেক আজ এত বড় যাত্রাপথ সম্পূর্ণ করছে?
ছেলেবেলাটা হারিয়ে যায়নি আজও আছে খুঁজে নিতে হয়। মেয়ে বেলার ছোট্ট ছোট্ট ভালো লাগা গুলো কোথায় যেন লুকিয়ে রয়েছে প্রকাশ্যে আসতে আজও বাধা। স্মৃতিচারণায় পুরনো কথা মনেই এলেই সেই দিনগুলোতে ফিরে যেতে বড্ড মন কেমন করে। ছোট বেলায় বাবার হাত ধরে স্কুল যাবার সময় টিফিনের জন্য রাস্তার মাঝেই বাপুজী কেক কিনে নেওয়া।
বাপুজী কেক আজও বাঙালির নস্টালজিয়া! (Bapuji Cake):
কিংবা পাড়ায় কোনো স্পোর্টসের আয়োজন, আর টিফিনে বাপুজী কেক উপহার দেওয়া। টিফিন বক্স খুলে শিশুর সেই হাসি, কারণ আছে বাপুজী। ভাবতে পারেন , সেই ৮০ বা ৯০ এর দশকে বেড়ে ওঠা ছাপোষা মধ্যবিত্ত পরিবারের প্রিয় বাপুজী কেক আজ ৫০ ছুঁই ছুঁই (Bapuji Cake is a favorite)। এই কেক আজও বাঙালির প্রিয়, বাঙালি যুবক যুবতীদের নস্টালজিয়া, এক অন্য ভালো লাগা যা অস্বীকার করতে পারেন না কেউই।
নস্টালজিক কেকের শুরুর দিকের কথা এই লগ্নে একটু মনে করি। আজ যাকে আমরা কেক বলে জানি, তার যাত্রা শুরু সপ্তদশ শতকে । মনে করা হয় ইউরোপে প্রথম এই যাত্রা শুরু হয়েছিল। তখন অবশ্য কোন ধরনের বিশেষ উপকরণ বা বেকিং পাউডার আবিষ্কৃত হয়নি।
ডিমের সাদা অংশ, চিনি ও সুগন্ধি দিয়ে তৈরি হতো কেক। পরে ১৮৪০ সালে বেকিং পাউডার আবিষ্কার হয় যার কারণে কেক তৈরি করাটা অনেক সহজ হয়ে যায়। অবশ্য ভারতে কেকের আবির্ভাবের নেপথ্যে ব্রিটিশ বাহিনীর অবদান অস্বীকার করা যায় না। মানে তাদের হাত ধরেই যে কেক নিজের মতো করে চলতে শুরু করেছিল তা বলাই বাহুল্য ।
আসলে ১৮৩০ সাল নাগাদ ডেভিড উইলসন নামে এক সাহেব কলকাতায় প্রথম কেক তৈরি করেছিলেন বলে জানা যায়। ১৮৪০ সাল নাগাদ তিনি ধর্মতলায় অকল্যান্ড হোটেল খুলেছিলেন। এবং কিছুদিন পরেই নিউমার্কেট এলাকায় নাহুমস তৈরি হয়।যে প্রতিষ্ঠানের কেক আজও সবার পছন্দের তালিকায় আছে (Bapuji cake is still Bengali nostalgia!)।
এবার আসা যাক আজকের আলোচ্য বাপুজী কেকের যাত্রা প্রসঙ্গে। সূত্র বলছে আনুমানিক ১৯৭৩ সালে জানা পরিবারের হাত ধরে এই পথ চলা শুরু। অলোকেশ জানা নামে এক ব্যক্তি এই ব্যবসা শুরু করেন। যদিও বাপুজী হিসেবে কেক সংস্থাকে সবাই চিনলেও খাতায় কলমে এটি ‘নিউ হওড়া বেকারি প্রাইভেট লিমিটেড’ নামেই অফিসিয়ালি রেজিস্টার্ড।
প্রথম এই কেক তৈরির ফ্যাক্টরি ছিল হাওড়ার পল্লবপুকুর এলাকায়। পরে কলকাতার লেকটাউন এবং হুগলির শ্রীরামপুরেও কারখানা চালু হয়। আপনি জানলে অবাক হবেন যে গোড়ার দিকে এর বাজার মূল্য ছিল মাত্র ৬০ পয়সা। আজকের বাজার আর মূল্য বৃদ্ধির কথা মাথায় রেখে সেই দাম হয়েছে ৬ টাকায়।
আরো পড়ুন- Uttam Kumar : মহানায়ক উত্তম কুমারের জীবনের শেষ দৃশ্যর নাটকীয় মুহূর্ত! কেমন ছিল?
অবশ্য আরো এক টাকা বেড়ে কোথাও কোথাও সাত টাকা নেওয়া হয়। আহা কি অপরূপ গন্ধ! আজও দোকানে গিয়ে মানুষ তেলতেলে কাগজে মোড়া বাপুজী কেকের খোঁজ (Search for Bapuji Cake) করতে ভোলেন না ছোটো থেকে বড় কেউই।
আরো পড়ুন- বাড়িতে কি প্যারালাইজ়ড রোগী আছেন? এবার স্বস্তি পাবেন আপনি, কারণ তিনিও হাঁটাচলা করবেন সহজেই!
রাস্তাটা সহজ ছিল না । তাড়াতাড়ি তৈরি হয়েছিল প্রতিযোগিতার যুদ্ধের ময়দান। হোয়াইট বা ব্ল্যাক ফরেস্ট, স্ট্র বেরি, ব্লু বেরির যুগেও বহু বাঙালির টিফিন কেক বাপুজী, ভাবা যায়!। প্লাস্টিকে মোড়া প্যাকেটের বদলে কাগজে মোড়া এই কেক, তাই দূষণ নিয়ে চিন্তা কম। একবিংশ শতাব্দীতে মাল্টিন্যাশানাল ব্র্যান্ডগুলির বাড়বাড়ন্ত থাকা সত্ত্বেও প্রবল লড়াইয়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে রয়েছে এই সংস্থা।
আরো পড়ুন- Home : ঝড় ঝাপটার মুখে আপনার বাড়ি? প্রকৃতির রোষানল থেকে কী করে বাঁচাবেন নিজের বাড়ি?
কিছু বছর আগে, যখন সরকার নোট বন্দির ঘোষণা করেছিলেন, সেই সময়ে কিছু দিনের জন্য বাজারে বিক্রি বন্ধ ছিল এই কেকের। আর তাতেই খবরের শিরোনামে চলে আসে বাপুজী কেক। শহরের প্রতিটি বড় সংবাদপত্রেই ছাপা হয় এই খবর। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে থাকলে শুরু হয় নতুন লড়াই।
এই প্রসঙ্গে বলা দরকার যে কেক প্রস্তুতির ক্ষেত্রেও নিজস্বতা বজায় রেখেছে এই সংস্থা। কেক তৈরি করতে মেশিনের ব্যবহার হলেও বেশিরভাগ জিনিসই নিজের হাতে করতে পছন্দ করেন প্রস্তুতকারকরা। অলোকেশ জানার মৃত্যুর পর এখন কোম্পানির দ্বায়িত্ব সামলাচ্ছেন তাঁর দুই বংশধর অমিতাভ জানা এবং অনিমেষ জানা।
আরো পড়ুন- Electric cars : জ্বালানির যন্ত্রণা ভুলতে ইলেকট্রিক গাড়িতেই ভরসা বিশেষজ্ঞদের?
তাঁরা বলছেন, ‘আজও প্রতিদিন ৫০ হাজার বাপুজী কেক বিক্রি হয়’ (50 thousand Bapuji cakes are sold every day)। সেভাবে ব্র্যান্ডিং হয় না, তবুও বাংলার বাংলার প্রতিটি কোণে ছড়িয়ে পড়েছিল বাপুজী কেকের নাম। আসলে কিন্তু এটা ফ্রুট কেক মানে ফল দিয়ে তৈরি হয়। স্বাদ মন ভোলানো।
দেখতে দেখতে এতগুলো বছর পেরিয়ে গেল তবু বাপুজী কেক তার ঐতিহ্য ধরে রেখে এগিয়ে চলেছে যা গতকাল ছিল, আজও আছে, থেকে যাবে আগামীতেও।