Breaking Bharat: পৌষ মাসে শুভ কাজ হয় না, তবু কেন পোয়া বারো বোঝাতে এই মাসের কথাই বলা হয়? আর সর্বনাশের কথাই যদি বলেন তাহলে ভালো দিকটা আগে জেনে নেওয়া দরকার যে কেন পৌষ মাস মানে পোয়া বারো, তবে না হয় সর্বনাশের প্রসঙ্গে আসা যাবে। চলুন এবার তাহলে প্রতিবেদনকে বিস্তারিতভাবে আপনার সামনে তুলে ধরা যাক।
বাঙালি জীবনে একাধিক প্রবাদ ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। তার মধ্যে প্রচলিত এক প্রবাদ হলো, “কারও পৌষ মাস, কারও সর্বনাশ”। মানেটা খুব পরিষ্কার একজনের ভালো অন্য জনের খারাপ। কিন্তু আর বাকি মাস গুলো ছেড়ে কেন পৌষ মাসকেই এই ভালো ব্যাপারটার সঙ্গে তুলনা করা হয় বলুন তো?
পৌষ মাসে শুভ কাজ হয় না?
পৌষ মাস শুভ কাজের জন্য একেবারেই বাঞ্ছনীয় নয়। শীতের সময় বিয়ে মানে অঘ্রাণ বা মাঘ মাস মাঝে পৌষ একেবারেই বিয়েহীন। এটা অবশ্য আমরা সামাজিক শুভ অনুষ্ঠানের কথা বললাম মন্দির এবার রেজিস্ট্রি অফিসে এই মাসে বিয়ে হয় না এটা বলা মুশকিল। সে তথ্য আমরা যাচাই করে দেখিনি। তবে ছোটবেলা থেকে বাংলা রচনা বইতে পড়া হয়েছে পৌষ-মাঘ এই দুই মাস হল শীতকাল।
আর শীতকাল মানেই যে সেটা দারুন উপভোগ্য সে তো বলাই বাহুল্য। সবার আগে যেটা মনে করা হয় পৌষ মাস মানেই নবান্ন ঘরে ঘরে নতুন চাল। এমনিতেই সংসারের শ্রী বৃদ্ধির জন্য চালকে শুভ বা মা লক্ষ্মী হিসেবে ধরা হয়। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে ইতি মানুষের ভালো থাকার শুভ সূচনার ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
কিন্তু সেটা কি সত্যিই সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয় মানে সবাই কি এভাবেই সুদিন আগমনের ইঙ্গিত বুঝতে পারেন? শীতকাল মানেই প্রবল ঠান্ডার দাপট । বড়লোক বাড়িতে লেপ কম্বলের আড়ালে শীত লুকিয়ে রাখার চেষ্টা। কিন্তু গরিবের সে সামর্থ্য নেই।
পৌষ মাসটা ‘গরিব’ তাদের কাছে সর্বনেশে?
রাস্তার ধারে ফুটপাতের শুয়ে থাকা শিশুটা শীতে কুঁকড়ে মরে। তার গায়ে গরম জামা নেই তাই এই পৌষ মাসটা তার কাছে সর্বনেশে। যখন বড়লোক বাড়িগুলোতে এই পৌষ মাসে নানা স্বাদের মিষ্টি খাওয়া হয়, গুড়ের পায়েস তৈরি হয়, তখন গরিব বাচ্চাটা স্টেশনের পাশে তাকিয়ে থাকে এক মুঠো ভিক্ষার আশায়। না পৌষ মাসটা তার কাছে সুখের নয় সর্বনাশ টাই আগে চোখে পড়ে।
হয়তো একটা প্রবাদীর সঙ্গে মিলিয়ে একটা মাসকে এভাবে চিহ্নিত করা হয় কিন্তু বাস্তবে প্রতিটা মাসের প্রতিটা দিনই কারোর না কারোর জন্য যতটা শুভ উল্টো প্রান্তে ততটাই অশুভ হয়ে ওঠে। যার খবর আমরা রাখিনা।
আরো পড়ুন – জীবনে ঠিক কতটা শক্তিশালী হলে অন্যকে আঘাত না করেও জেতা যায়?
ভালো খারাপ নিয়ে এই পৃথিবী। আর্থ সামাজিক ব্যবস্থায় কেউ বড়লোক কেউ আবার গরিব। সমাজেরই শ্রেণীবিন্যাস যুগ যুগ ধরে চলে আসছে কোনও এক অজ্ঞাত কারণে। সবাই যত গেছে, এটা আরো গর্তে থেকেছে পারিপার্শ্বিকতার সামঞ্জস্যে। প্রথম যে মুহূর্তটায় গরীব আর বড়লোকের বিভাজনটা তৈরি হয়, সেই সময় থেকে আজ পর্যন্ত ফারাকটা বড্ড বেশি চওড়া হতে হতে এখন দুটো প্রান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আরো পড়ুন – আপনার কি যখন তখন কান খোঁচানোর অভ্যাস আছে? অভ্যাস বদলান না হলে বিপদ বাড়বে!
মাঝে মাঝে আপনার মনে প্রশ্ন জাগতেই পারি যে পৃথিবীর সব মানুষের কাছে কোনও একটা সময় কেন সুখের হতে পারে না। সেই সময় অন্য কিছু নিয়ে চিন্তা ভাবনা করা নয় শুধুই সকলের প্রতিটি মানুষের ভালো থাকা আনন্দে থাকা। সেটা কি আদৌ সম্ভব? উত্তরটা খুব স্পষ্টভাবেই না।
আরো পড়ুন – পৃথিবীতে আছড়ে পড়বে ‘২০২৩ ডিডব্লু গ্রহাণু’। ভালোবাসার দিনে পৃথিবীতে শুরু তারাদের যুদ্ধ?
এই পৌষ মাসে কার বাড়িতে অন্ন উঠল আর কে ভিক্ষে করছেন, নাকি কার বাড়িতে পিকনিকের আনন্দ আর কেউ না খেতে পেয়ে খিদের জ্বালা সহ্য করছেন – এগুলো প্রত্যেকটা দিনের ঘটতে থাকা একটা নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে আমাদের সমাজে। তাই একটা প্রবাদ বুঝিয়ে দেয় বাস্তব চিত্রকে। হ্যাঁ, কারোর পৌষ মাস কারোর সর্বনাশ বটে।