Breaking Bharat: আপনি কি ‘বাংলা ছবি’ দেখতে ভালবাসেন? ভালো মানের বাংলা ছবি কি আজও হয়?সিনেমা মানে বিনোদন, কিছুটা সময় মুড রিফ্রেস করে দেওয়া। তবে বাংলা সিনেমার সঙ্গে বাঙালির একটা আবেগ জড়িয়ে আছে।
তুলসী চক্রবর্তী ,ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের সময় থেকে উত্তম কুমার ,সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় কে দেখা – বাঙালি এখনো সিনেমা বলতে নস্টালজিক সাদা ফ্রেমকে বড্ড বেশি করে মনে করে। কিন্তু যুগ বদলেছে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়েছে বাংলা সিনেমা। যদিও অনেক বাঙালি দর্শকই বাংলা ছবির পরিবর্তন সেভাবে আপন করে নিতে পারেননি।
তাহলে কি সত্যিই আর ভালো বাংলা ছবি হয় না?
বিনোদন জগতে ভালো বা খারাপ বলাটা খুব কঠিন জানেন। একটা সিনেমা তৈরীর পেছনে এত অসংখ্য মানুষের অবদান থাকে যে একটা লাইনে সেটাকে খারাপ বলে দেওয়াটা অনুচিত। আসলে ভালো বাংলা ছবি আগেও যেমন হয়েছে ইদানিং কালেও হচ্ছে কিন্তু এখনকার যুগ বিজ্ঞাপনের তাই কোনটা কতটা মানুষের কাছে পৌঁছেছে সেটা নিয়ে একটা বড় প্রশ্ন থেকে যায়।
আর এটাই বলা দরকার যে একটা ছবি তৈরি হলে হলো না তার সঠিক প্রচার, সেই মতো সিনেমা হল পাওয়া, সেখানে টিকিট বিক্রি হওয়া একটা পুরো চেইন কাজ করে একটা ছবির সাফল্যকে তুলে ধরার জন্য। মাল্টিপ্লেক্সের যুগে আজকাল সিঙ্গেল স্ক্রিন প্রায় হারিয়ে যাচ্ছে। গ্রামের মানুষের সিনেমা নিয়ে যে চাহিদা আর শহরের মানুষের যে প্রত্যাশা সেটা সম্পূর্ণ আলাদা।
নাহলে যে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় “শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ” ছবি করেন তিনি আবার “প্রাক্তন” নামের ছবিতে অভিনয় করেন। দুটো ছবি দুটি আলাদা আলাদা সময়ের। আর এটা বললে একটুও বাড়িয়ে বলা হবে না যে এই দুই ছবির দর্শক বাঙালি হলেও সেই দর্শক কিন্তু আলাদা (Are good quality Bengali films)।
বাংলা ছবির আমূল পরিবর্তন হয়েছে:
সুতরাং গ্রামের জন্য ছবি এবং শহরের জন্য ছবি এই সমীকরণ অনেকদিন আগেই বাংলা সিনেমায় হয়ে গেছিল। এই প্রসঙ্গে যদি সত্যজিৎ রায়ের উদাহরণ টেনে আপনি পথের পাঁচালীর ভাবনা নিয়ে আসেন, তাহলে আপনাকে বলতে হয় সেই ছবিও কিন্তু সব বাঙালির ভালো লেগেছে এমনটা নয়।
কথাটা শুনে আপনি ভাবতে পারেন ধৃষ্টতা, কিন্তু এটাই সত্যি কারণ গ্রামে গঞ্জে খেটে খাওয়া মানুষ বিনোদন বোঝেন তারা সিনেমা নিয়ে চিন্তাভাবনা করার মত জায়গায় থাকেন না। তাই খুব স্বাভাবিকভাবেই আজকের পরিচালক শ্রীজিৎ মুখোপাধ্যায়ের ছবি তাদের কাছে সেভাবে পৌঁছয় না যতটা রাত চক্রবর্তীর দক্ষিণ ভারতের নকল করা ছবি গিয়ে পৌঁছয় কারণ সেখানে আছে মারকাটারি বিনোদন।
আপনি শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও নন্দিতা রায়ের কিছু ছবিকে অবশ্যই সবার ভালো লাগা ছবি বলতেই পারেন। কিন্তু সেখানেও এমন কিছু সমীকরণ আছে যা পশ্চিমবাংলার প্রায় ১০ কোটি মানুষের কাছে সমানভাবে উপভোগ্য নয়। আসলে এখন ডিজিটাল যুগ সেখানে দাঁড়িয়ে মোবাইল লোকের হাতে হাতে।
আরো পড়ুন – সুরভিত অ্যান্টিসেপটিক বোরোলিন তো নিশ্চয়ই ব্যবহার করেন, কিন্তু ইতিহাস জানেন কি?
এর ফলে বিনোদনের জন্য যে একটা চাহিদা তৈরি হওয়া সেটা অনেকটাই কমে গেছে তার কারণ অনেক বেশি অপশন হাতে এসেছে। আগেকার দিনের ছবি ভাল বা খারাপ সেই তর্কে না গিয়েও বলা যায় আগেকার দিনের মানুষ এত বেশি সংখ্যায় নানা ধরনের ছবি দেখার সুযোগ পেতেন না তাই সেভাবে তুলনা টানা সম্ভব ছিল না।
বাজারদর থেকে শুরু করে মানুষের জীবন শৈলী, কতটা পাল্টে গেছে ৭০ এর দশক থেকে এই ২০২২। তাহলে ভাবনা চিন্তার পরিবর্তন হবে না তাই বা কেমন করে হয়?
আরো পড়ুন – খেলোয়াড় একজন করে শিশুকে নিয়ে কেন মাঠের দিকে রওনা দেন?
বাংলা ছবি বাঙালির গর্ব ।তাই ভালো ছবি সব সময়ই হয়েছে , শুধু দরকার সেটি বোঝার মতো মানসিকতা এবং পরিস্থিতি। উত্তম কুমারের ছবি যারা ভালবাসেন তারা এখনকার যুগে দাঁড়িয়েও ভালো ছবি হলে অবশ্যই দেখবেন। যার প্রমাণ দিয়ে গেছেন স্বয়ং সত্যজিৎ রায় থেকে শুরু করে ঋতুপর্ণ ঘোষ, অপর্ণা সেনরা।
আরো পড়ুন – সাপের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়? মা মনসার বাহনে যথেষ্ট শ্রদ্ধা রাখেন?
এই সময় দাঁড়িয়ে বলা যায় ‘বাংলা ছবির আমূল পরিবর্তন হয়েছে‘ যদিও নব্বইয়ের শেষ থেকে কিছুটা হলেও বলিউড বা দক্ষিণ ভারত নির্ভরশীলতা বাংলা ছবির উত্তরনে একটা বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবে এখন ভালো ছবি অবশ্যই হচ্ছে আর বাঙালি দর্শক হল ভুড়িয়ে সেই ছবি উপভোগও করছেন।