Breaking Bharat: ভারত নেপাল সীমান্তে থাকা মেয়েদের ঋতুমতী হলে তাদের সঙ্গে কী করা হয় জানেন? পৃথিবী আজ এগিয়েছে অনেকটাই, কিন্তু ভারত নেপাল সীমান্তে থাকা মেয়েদের দেখে সেটা বোঝা যায় কি? পশ্চিম নেপালের প্রায় ৭০ শতাংশ মহিলা এই ভাবেই বেঁচে আছেন। জানেন ঋতুমতী হলে তাদের সঙ্গে কী করা হয়?
আজকে প্রতিবেদনের শুরুতেই এমন একটা প্রশ্ন চিহ্ন উঁকি দিচ্ছে যার গভীরে লুকিয়ে আছে চরম অমানবিকতার ছবি। যেখানে মানুষ চাঁদে পৌঁছে সেখানে পাকাপাকি ভাবে থাকার বন্দোবস্ত করতে ব্যস্ত, সেখানে এই দেশের সীমান্তে কোথাও গিয়ে মাসের অর্ধেক দিন মহিলারা বাধ্য হন গোয়াল ঘরে গিয়ে থাকতে (Chhaupadi and Menstruation Taboos)।
সন্তান প্রসবের জন্য গোয়াল ঘরে যেতে হয় মহিলাদের?
এই ঘটনা যে নিঃসন্দেহে মানবিকতার কোন প্রমাণ দেয় না সেটা বোধহয় স্পষ্ট। আপনি কি জানেন নেপালের বাজুরা অঞ্চলে সন্তান প্রসবের জন্য গোয়াল ঘরে চলে যেতে হয় মহিলাদের? পশ্চিম নেপালের প্রায় ৭০ শতাংশ মহিলা এই ভাবেই বেঁচে আছেন বা বলা যেতে পারে মৃত্যুর মুখে তাদেরকে এইভাবে ঠেলে দেয়া হচ্ছে যুগের পর যুগ ধরে।
এক এক দেশের এক এক রকমের নিয়ম। কিন্তু ‘মহিলাদের পিরিয়ড‘ হবে এটা তো সারা বিশ্ব সংসারে সব মেয়েদের ক্ষেত্রেই একই নিয়ম। অথচ কুসংস্কারের জেরে এই সময়টাই মেয়েরা হয়ে যায় অপবিত্র। তাই সেই অপবিত্র তকমা নিয়ে প্রায় দু সপ্তাহের জন্য নিজের ঘর ছেড়ে গোয়াল ঘরে বা পর্ণ কুটিরে থাকতে হয় মহিলাদের।
এই অবস্থায় তিনি কোনও আসবাব স্পর্শ করলে সেখানেও নাকি মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যাওয়ার মতো অন্ধবিশ্বাস এখনো রয়ে গেছে। ভারতের প্রতিবেশী দেশ নেপালের ধর্মসংস্কৃতির অন্দরমহলের ছবিটি এরকমই। ‘চৌপদি‘ নামটা সঙ্গে পরিচিত আছেন কি?
চৌপদি এটা কোন রীতি বা প্রথা?
এটা কোন রীতি বা প্রথা নয়, হিন্দু ধর্মেরই একটি পরম্পরা বলে ধরে নেওয়া হয়। ২০০৫ সালে সরকার কড়া মনোভাব দেখিয়ে এই প্রথায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে, কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হয়নি। ১৪ দিন জনসমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার ফলে প্রত্যেক মাসে মেয়েদের পড়াশোনার কতটা ক্ষতি হয় সেটা নিশ্চয়ই আন্দাজ করতে পারছেন।
মানে নেপালের মধ্য-পশ্চিম অঞ্চলে ১৫-৪৯ বছর বয়সী মেয়েদের অর্ধেকের বেশি অংশ ‘চৌপদি প্রথা‘ পালন করে। যেকোনো সামাজিক প্রথা বা নিয়মের বেড়াজালে আটকে থেকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মেয়েদের প্রাপ্য শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে হয়। এক্ষেত্রেও তেমনটাই ঘটেছে।
আরো পড়ুন – সাউথ ফিনলে স্ট্রিটে রয়েছে একটি ‘ওক গাছ’, অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য! আসলে ওই গাছের মালিক গাছ নিজেই।
অন্ধবিশ্বাসের কালো ছায়াকে টপকে বেরিয়ে আসতে হবে মানুষের মানসিকতাকে তা নাহলে আইন করে কোন লাভ হবে না। তাই সরকার উদ্যোগ নিয়েছে ঠিকই কিন্তু সেটা বাস্তবে মেয়েদের কোন উন্নতিতেই কাজে লাগেনি। কখনো সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার ভয়ে, শারীরিক নির্যাতনের চাপে, মৃত্যু যন্ত্রণার সম্মুখীন হয়ে লড়াই করতে হয়েছে।
আবার কখনো এইসব সহ্য করতে না পেরে হেরে গিয়ে মরে যেতে হয়েছে। গোয়াল ঘরের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রোগের সংক্রমণের ভয়ের পাশাপাশি সাপের আক্রমণের চিন্তাও থাকে। নেপালের আইন বলেছিল এই প্রথা মানতে কাউকে বাধ্য করা হলে সেক্ষেত্রে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।
আরো পড়ুন – Train horns: ট্রেনের হর্ন মানেই বিরক্তি? অথচ এই হর্ন বলে দেয় রেলের আসল তথ্য জানেন?
কিন্তু সবটাই ওই কথার কথা হয়ে খাতায় কলমে রয়ে গেছে। আপনি জানেন ভারতেরও বেশ কিছু রাজ্যে এই প্রথা এখনো রয়েছে? তামিলানাড়ু ,মহারাষ্ট্র, ছত্তিশগড়, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং উড়িষ্যার গোন্ড এবং মাদিয়ার মতো উপজাতিদের মধ্যে এই রীতি মেনে চলার প্রচলন নতুন কিছু নয়। শিক্ষার আলো এখানে সঠিকভাবে পৌঁছইনি তাই মানসিকতা যে শিক্ষিত হতে পারিনি, সেটা বুঝিয়ে বলার প্রয়োজন হয় না।
আরো পড়ুন – মধু খেতে ভালোবাসেন? বাজারে গিয়ে খাঁটি মধু আর ভেজাল মধু চিনবেন কী করে?
পিরিয়ড চলাকালীন একটা মহিলা বা মেয়ে কতটা যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যায় তার ওপর চলে এই মানসিক নির্যাতন। এই সব কিছুকে পেরিয়ে কবে সভ্যতা সমাজ সত্যিকারের উন্নত হতে পারবে, শিক্ষিত হতে পারবে – সেটা নিয়ে বড় প্রশ্ন থেকেই যায়