Breaking Bharat: জবা ফুল ছাড়া কালী মায়ের পূজা হয়না তাইনা? জানেন কি কেন এমনটা করা হয়? কোন জাদু মন্ত্রে বা কোন লৌকিক মন্ত্রে ‘জবা ফুল’ এমন ভাগ্য পেয়েছে বলতে পারেন?
মা কালীর পূজো নিয়ে একটা বিশ্বাস আর ভক্তি সমান তালে পূজারী এবং ভক্তদের মধ্যে চলতে থাকে। কিছুটা ভয়ও কাজ করে কারণ মায়ের রূপ যে ভয়ংকর। তাই মা কালীর আরাধনায় যাতে কোন ভুল ভ্রান্তি না হয় সেই নিয়ে প্রতিমুহূর্তে একটু বেশি সতর্ক থাকতে হয় আয়োজকদের।
মা কালীর পুজোয় জবা ফুল কেন লাগে?
মা দুর্গার পুজো চন্ডী মতে হলেও মায়ের কালী রূপের পুজোতে তন্ত্র মতের একটা প্রাধান্য রয়েছে। মানে দেবী যেহেতু ভয়ঙ্করী তাই তার চামুন্ডা রূপের পুজো কালী পুজোতে হয়। এই কালী পুজোতে অনেক প্রয়োজনীয় উপচারের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে লাল জবা বা রক্ত জবা। জবা ফুল সোজা মায়ের চরণে স্থান পেয়ে যায়। ভাবুন গোলাপ পদ্মের রূপ আছে জুই বেল ফুলের গন্ধ আছে।
কিন্তু রূপ বা গুণ কোনো দিক দিয়েই তো জবা এদের সঙ্গে থাকে না। অথচ জবা ফুল সোজা আশ্রয় পেয়ে যায়, মায়ের শ্রীচরণে। কোন জাদু মন্ত্রে বা কোন লৌকিক মন্ত্রে জবা ফুল এমন ভাগ্য পেয়েছে বলতে পারেন?
লাল সৃজন ও শৌর্যের প্রতীক জবা ফুল?
আমরা সকলেই জানি মা কালীর পূজোয় জবা ফুল লাগে। কিন্তু কেন লাগে সেটা আমরা পরিষ্কারভাবে জানি না। একটু বলে রাখা দরকার যে বিষয়টা যেহেতু ধর্ম সম্বন্ধীয় তাই এখানে পৌরাণিক এবং প্রচলিত বিশ্বাস নিয়ে প্রাধান্য দিতে হবে। বিজ্ঞান দিয়ে হয়তো এর ব্যাখ্যা দেয়া সম্ভব হবে না।
একাধিক লোকস্রুতিও রয়েছে যা কিছুটা হলেও যুক্তি তৈরি করতে পারে। এমনিতেই নাকি জবা ফুলের মত দুর্বল কেউ নেই। ওই যে পদ্ম গোলাপ তার রং আর গন্ধের জন্য সকলের মনে জায়গা করে। গাঁদা ফুল দীর্ঘদিন তাজা থাকে তাই পকেটের সাশ্রয় হয়। জবা এই সব কিছু জানার পর মা কালীর পায়ের কাছে পড়ে জিজ্ঞাসা করে সে কেন এত দুর্বল?
আরো পড়ুন – ফুলন দেবী কে চেনেন? ডাকাত হিসেবে নাকি লোকসভার সদস্য হিসেবে? একই অঙ্গে এত রূপ!
রং বড্ড কটকটে, রূপ বা গন্ধ নেই তাজা থাকার ক্ষমতা নেই। মা কালীকে জবা বলে কোনও পুজোয় তাকে প্রয়োজন হয় না। মা যেন এর বিচার করে। সন্তানের আকুল আর্তি মা ফেরাতে পারেন? অতএব মা কালী বলেন, ‘আজ থেকে আমার পুজোয় তুমিই হবে অপরিহার্য। তোমার বর্ণ টকটকে লাল! আমি জগত্তারিণী, ক্রমাগত সৃজন এবং সংগ্রামে আমি রক্তলিপ্ত। লাল সৃজন ও শৌর্যের প্রতীক তুমি আমারই প্রতিনিধিত্ব কর’।
আরো পড়ুন – সন্ন্যাসিনী হয়েও রকস্টার – ‘অনি চোয়িং ড্রলমা’ আরেক নাম হল ‘দ্য সিংগিং নান’ আপনি চেনেন এনাকে?
এটাই যেন জবার কাছে সবথেকে বড় আশীর্বাদ বলে মনে করা হয়। ঠিক এভাবেই জবা কে আশীর্বাদ করেছিলেন স্বয়ং মা। পরবর্তীতে কিন্তু বিভিন্ন তথ্য এই কথাকে একটা যুক্তি-গ্রাহ্য জায়গায় প্রতিষ্ঠা করেছে।
লাল রঙের রক্ত জবা কালীপুজোয় অপরিহার্য:
লাল রং নিয়ে যে তথ্য পাওয়া যায় সেগুলো বিশ্লেষণ করলে বলতে হয়, শাস্ত্র মতে মা কালীর জিহ্বার রং লাল। আর জিহ্বা শব্দটার অর্থ হল পরম বাক। কন্ঠ, তালু, মূর্ধা, দন্ত… জিহ্বা স্পর্শ করলে তবেই ধ্বনি তৈরি হয়, উচ্চারণ হয়। সেই লাল জিভের প্রতীক জবা। আবার দেখুন লাল রং মহিলাদের গর্বের অহংকারের।
আরো পড়ুন – কলা খেতে ভালোবাসেন? ব্রেকফাস্টে কলা খাবারের উপর এত জোর কেন দেওয়া হয়?
এটি ঋতুচক্রের প্রতীক কারণ রক্তপাতের মাধ্যমে নতুন সৃষ্টি। মাসের পাঁচ দিন রক্তক্ষরণ মহিলাদের একদিকে যেমন দুর্বল করে তেমনি প্রকৃতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে এই রক্তপাত আবশ্যক। এই কারণেই লাল রঙের রক্ত জবা কালীপুজোয় অপরিহার্য। লাল রং আসলে শৌর্যের প্রতীক। রক্তবীজবিনাশিনী মায়ের শৌর্যের কথা সর্বজনবিদিত। তাই রক্তজবার অঙ্গ ভূষণ হবে এইতো স্বাভাবিক। সাথে কি আর সাধক বলেন মায়ের পায়ের জবা হয়ে ওঠনা ফুটে মন!