Breaking Bharat: পৃথিবীতে যত রকমের অপরাধ আছে সব রকমের অপরাধের শাস্তির জন্য একটাই জেলে জায়গা মেলে? তাহলে চলুন ‘তিহার‘ জেলে প্রবেশ করা যাক!
প্রতিবেদন দেখে চমকে গেলেন নাকি? মানে শিরোনামে জেলে প্রবেশের কথা বলা হচ্ছে বলে ভাববেন না কোনও অন্যায় করার কথা বলছি আপনাদের। আসলে আজকের আলোচ্য বিষয় ‘তিহার জেল‘। কারাগার নিয়ে প্রতিবেদন করা খুব একটা সহজ নয়।
সাম্প্রতিককালে কারাগার শব্দটার অর্থ বদলে গেছে। আগে অন্যায় করলে আদালত থেকে শাস্তি স্বরূপ কারাগারে পাঠানো হতো। এখন সেই কারাগার হয়ে গেছে সংশোধনাগার। অর্থাৎ সংশোধন করার জন্য বা সংশোধিত হওয়ার জন্য এই জায়গায় পাঠানো হয়। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে নানা রকমের সংশোধনাগার রয়েছে। কিন্তু তিহার জেল এত বিখ্যাত হয়েছে তার একাধিক কারণের জন্য (why tihar jail is dangerous)।
তিহার জেলের নাম শুনেছেন নিশ্চই?
ভৌগোলিক অবস্থান জানতে চাইলে বলতে হয় নতুন দিল্লির চাণক্যপুরী অঞ্চল থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে তিহার গ্রামে এই সংশোধনাগার। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের জেল গুলিতে যেভাবে রোগীদের নানা রকমের কাজের সুযোগ দেয়া হয় সংশোধনাগারের ভেতরেই এখানেও তার কোন ব্যতিক্রম নয়। একটু ইতিহাস ঘাটলে জানা যায় ১৯৫৮ সালে তিহার গ্রামে তিহার জেল নির্মাণ করা হয়েছিল।
গোড়ার দিকে পাঞ্জাব রাজ্য পরিচালিত সর্বোচ্চ নিরাপত্তার কারাগার থাকলেও ১৯৬৬ সালে জাতীয় রাজধানী দিল্লি অঞ্চলের হাতে এই জেলের মালিকানা চলে আসে। আগেকার তিহার জেল তেবাতিয়া জাটদের সম্পত্তি ছিল বর্তমানে অবশ্য নাম বদলে তিহার প্রিজনস রাখা হয়েছে। এর নাম শুনলেই দাগি আসামিদের কথা মনে পড়ে তাই না?
খুব স্বাভাবিক কারণ জেলের রেকর্ড বুক খুললে দেখা যায় সেলিব্রেটি থেকে শুরু করে নামী দামি গুন্ডা সবাই এখানে থেকেছেন। অবশ্য কী কারনে যা তারা নামই সেটার বলার অপেক্ষা রাখে না যখন জেলে কাউকে থাকতে হয়। সে যাই হোক আমরা অবশ্য সেই নিয়ে কোন তর্ক বিতর্ক করব না।
ভারতের সবথেকে বড় জেল বা কারাগার হল এই তিহার জেল। কারেকশনাল ইনস্টিটিউট এই জেকের রক্ষণাবেক্ষণের কাজে নিযুক্ত আছে বলে জানা যায়। আপনার কি কোন ধারনা আছে এই কারাগারে কতজন বন্দি আছেন? বিভিন্ন তথ্য এবং পরিসংখ্যান ঘেঁটে জানা যাচ্ছে সরকারিভাবে সর্বোচ্চ ৫২০০ বন্দী রাখার অনুমোদন রয়েছে। কিন্তু এই জেলের মোট বন্দির সংখ্যা প্রায় ১২,০০০।
আরো পড়ুন – দুটি সন্তানের বেশি কখনই পরিবারে আনা উচিত নয়, কেন বলেন চিকিৎসকেরা?
তাহলেই বুঝুন কী হারে দেশে বাড়ছে অপরাধ করার প্রবণতা! চুরি ডাকাতি, রাহাজানি, খুন, যৌন নির্যাতন , ধর্ষণ মানে যত রকমের অপরাধ পৃথিবীতে সংঘটিত হতে পারে, সব ধরনের অপরাধে অভিযুক্ত এবং দোষী প্রমাণিতরাই এই জেলে রয়েছেন। তবে সময় বা পরিস্থিতি মানুষকে অনেক সময় বদলে দেয়।
আরো পড়ুন – কোন খাবার সত্যিই ভালো আর কোনটা খারাপ! জেনে নিন
এই ভাবনা থেকেই ১৯৯৩ সালে বিখ্যাত আইপিএস অফিসার, ইন্সপেক্টর জেনারেল কিরণ বেদী এই জেলের ভার পাবার পর জেলের বন্দীদের জীবনে একাধিক পরিবর্তন আনার চেষ্টায় অনেক রকমের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এমনও তো হতে পারে কেউ হয়তো ঘটনাচক্রে অন্যায় করেছেন কিন্তু তার মধ্যেও লুকিয়ে আছে শিল্পী সত্তা।
আরো পড়ুন – জীবনে প্রচুর অর্থ উপার্জন করতে ইচ্ছুক? কী করলে অনেক টাকা রোজগার করতে পারবেন আপনি?
এই সবটা মাথায় রেখে কয়েদিদের জন্য গানের ক্লাস, হস্তশিল্প, সেলাই ইত্যাদি শেখার ব্যবস্থা করা হয়েছে এখানে। জেলের মধ্যেই ফ্যাক্টরি, হস্ত ও যন্ত্রচালিত তাঁত, জুতো তৈরির কারখানা, নানারকম কেমিকাল তৈরির ফ্যাক্টরি সবটাই পেয়ে যাবেন। লক্ষ্য একটাই জীবনের আসল মন্ত্র এদের কানের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া যাতে আর অপরাধ করার মানসিকতা তৈরি না হয়।
আরো পড়ুন – সন্দেহবাতিক হওয়া কি দোষের? এটা কি একটা রোগ কী করে পরিত্রাণ পাওয়া যায় জানা আছে?
প্রার্থনা সভা উপাসনা ঘর সবটাই এখানে রয়েছে কারণ আধ্যাত্মিক ভাবেই জীবনের ভাবনার পরিবর্তন আসে সে কারণেই এই প্রচেষ্টা জেলের তরফে। দুবাইয়ে বিখ্যাত ডন থেকে শুরু করে মুম্বাইয়ের বিখ্যাত এক অভিনেতা প্রত্যেকেই এই জেলে থেকেছেন। এই জেল নিয়ে নানা কথা প্রচলিত আছে বাইরে।
কিন্তু জেলের ভেতরে যারা থাকেন তারাই জানেন কয়েদিদের জীবনটা বেশ কষ্টের। আমরা কোন অন্যায়কে সমর্থন করছি না কিন্তু দোষীর মন থেকে অন্যায় করার প্রবণতা দূরীকরণের চেয়ে চেষ্টা বা পরিবেশ তৈরি করে চলেছে তিহার জেল কর্তৃপক্ষ, তাকে সাধুবাদ না জানিয়ে কোন উপায় নেই। অন্ধকার শেষ কথা নয় জীবনের শেষ কথা আলো বলে, এ কথা বুঝতে হবে প্রত্যেককে।