Breaking Bharat: কেন আতঙ্কের নাম র্যাগিং? ব়্যাগিংয়ের নামে আর কত নিচে নামবে রাজ্য কথা দেশ? বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও হস্টেল গুলোতে মারাত্মক ব়্যাগিংয়ের সংস্কৃতি চলে আসছে বছরের পর বছর ধরে। তারা অভিযোগ করে বলছেন রাত বাড়লেই শুরু হয় অত্যাচার। উঁচু ক্লাসের দাদা-দিদিদের কথা মতো কাজ না করতে পারলে সে যে কি মারাত্মক অভিজ্ঞতা হয় সেটা আপনি হয়তো কল্পনাও করতে পারবেন না ?
ব়্যাগিংয়ের জন্য কয়েকটা রাত, কয়েকটা দিন তাঁদের ভিতরে এক গভীর ক্ষত তৈরি করে দেয়, কেউ আত্মহত্যা করেছেন কাউকে বা মেরে ফেলা হয়েছে কেউ আবার মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে চিরকালের মত চেনা জীবনযাত্রা থেকে ছিটকে গেছেন অনেকে এই ব়্যাগিংয়ের জন্য (Why panic is called raging)।
সিনিয়র হয়ে জুনিয়রদের ওপর কি নির্মম অত্যাচার:
চোখে অনেক স্বপ্ন আর বুকে অনেক আশা নিয়ে হোস্টেলে পড়াশোনা করার জন্য নিজেদের নাম লেখায় কৃতি ছাত্র-ছাত্রীরা। গ্রাম থেকে শহরে এসে নিজেদের মাথা গোঁজার আশ্রয়স্থল হিসেবে অনেকেই আলাদা করে মেস ভাড়া বা বাড়ি ভাড়া করতে পারেন না। আর নিজের প্রতিভার গুনে যখন বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের সুযোগ মেলে তখন তার সাথে হোস্টেলে আবাসিক হিসেবে থাকার অফারটাও আসে আর সেটা ফিরিয়ে দেওয়ার মতো কখনোই নয়।
কিন্তু পুরনো পড়ুয়া রা যারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে গেছে তারা দিনের পর দিন সিনিয়র হয়ে জুনিয়রদের ওপর কি নির্মম অত্যাচার করতে পারে সেটা বোধহয় বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা প্রকাশ্যে না এলে রাজ্য বা দেশের মানুষের কাছে পরিষ্কার হত না। সিগারেটের ছাঁকা থেকে বেধড়ক মার!
এমনকি উলঙ্গ করে চূড়ান্ত ঘটনা কখনোই একটা তরুণ তরতাজা কৃতি ছাত্রের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্নদ্বীপ কুন্ডুর সঙ্গে যেন ঠিক এমনটাই হয়েছিল। যেহেতু বিষয়টা বিচারাধীন এবং তদন্ত চলছে তাই এই সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট ভাবে কিছু বলা এখনই সম্ভব নয় তবে একজন সিনিয়র কে গ্রেফতার করার পর পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
কিন্তু গল্পটা এখানেই শেষ নয়। কারন আমরা হয়তো জানতেও পারি না যে এমন অজস্র পড়ুয়া রয়েছেন, যাঁরা ব়্যাগিং সহ্য করে কোনওমতে টিকে গিয়েছেন, পড়াশোনা শিখে চাকরিবাকরিও করছেন, জীবনে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু তাই বলে ওই ব়্যাগিংয়ের কয়েকটা রাত, কয়েকটা দিন তাঁদের ভিতরে এক গভীর ক্ষত তৈরি করে দিয়েছে।
কেউ আত্মহত্যা করেছেন কাউকে বা মেরে ফেলা হয়েছে কেউ আবার মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে চিরকালের মত চেনা জীবনযাত্রা থেকে ছিটকে গেছেন। স্বাধীনতার ৭৬ বছর পূর্তি হতে চলেছে অথচ দেশের রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে একাধিক ঘটনা প্রমাণ করে দেয় যে স্বাধীনতার শব্দটার ব্যবহার আজও দেশের একটা বিশাল সংখ্যক মানুষের কাছে স্বেচ্ছাচারিতা হয়ে দাঁড়িয়েছে আর তার সাক্ষী হয়ে রয়েছে স্বাধীন ভারতবর্ষ।
স্বপ্নদ্বীপের মৃত্যু ঘিরে অনেক প্রশ্ন তোলপাড় করে দিয়েছে রাজ্য রাজনীতি। হোস্টেলে এত পড়ুয়া থাকা সত্ত্বেও কেন সিসিটিভি নেই? যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো নামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কেন এত মাদকাসক্তির দাপাদাপি? বছরের পর বছর পাস আউট হয়ে যাওয়ার পরও কেন সিনিয়ররা হোস্টেল ক্যাম্পাস ছেড়ে যেতে চান না?
আরো পড়ুন- Women’s shirts : মেয়েদের শার্ট কেনার চল আছে? ছেলেদের ও মেয়েদের শার্টের পার্থক্য কোথায় জানেন?
কেন জুনিয়রদের কাছে দাদাগিরি ফলিয়ে তাদের জীবনটাকে তছনছ করার এই কান্ডকারখানা জানা সত্ত্বেও নিশ্চুপ কর্তৃপক্ষ? মানসিক অত্যাচার যৌন হেনস্থা শারীরিক নিগ্রহ সহ্য করতে হয় জুনিয়রদের। এসব কথা ভাবতে গেলে শিউরে উঠতে হবে। গ্রাম থেকে মফস্বল থেকে দু চোখ ভর্তি স্বপ্ন নিয়ে যারা বড় হতে আসে তারা বড় শহরের এ কোন ছবি দেখছে বলতে পারেন?
কেন আতঙ্কের নাম র্যাগিং?
আজ অনেক পড়ুয়াই অভিযোগ করেছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে মারাত্মক ব়্যাগিংয়ের সংস্কৃতি চলে আসছে বছরের পর বছর ধরে। তারা অভিযোগ করে বলছেন রাত বাড়লেই শুরু হয় অত্যাচার। উঁচু ক্লাসের দাদা-দিদিদের কথা মতো কাজ না করতে পারলে সে যে কি মারাত্মক অভিজ্ঞতা হয় সেটা কোনোভাবেই ভাষায় লিখে বোঝানো যাবে না।
পোস্টমর্টেম এর রিপোর্ট বলছে স্বপ্নদীপের শরীরেও মিলেছে একাধিক কালশিটে, ক্ষতের দাগ। তার মানে ভাবুন রীতিমতো যোগ্যতার পরীক্ষায় নিজেকে প্রমাণ করে যাদবপুরের মতো বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় জায়গা করেছিল যে ছেলেটা তাকে শেষ হয়ে যেতে হল শুধুমাত্র কয়েকজন ছেলের অত্যাচার।
দেশের বেশিরভাগ ইঞ্জিনিয়ার যে নামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়েছে তাদের প্রত্যেকের কম বেশি এই যন্ত্রণা সহ্য করেছে। কিছুদিন আগে খড়গপুর আইআইটির মতন নামী প্রতিষ্ঠানেও এইভাবেই ছাত্র হেনস্থার খবর প্রকাশ্যে এসেছিল। কেন আতঙ্কের নাম র্যাগিং?
আরো পড়ুন- Toothbrush: ব্যবহার করা টুথব্রাশ ফেলে দিচ্ছেন? পুরনো টুথব্রাশ ব্যবহার করুন নানা কাজে
দেখা দেখায় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার একাধিক আইন প্রণয়ন করছেন। ব্রিটিশ আমলের উপনিবেশিক আইনের পরিবর্তন করা হচ্ছে কিন্তু তা সত্ত্বেও এই মারাত্মক সমাজের ব্যাধিকে কিছুতেই নির্মূল করা যাচ্ছে না। আজকাল কথার বার্তায় সব দিকে এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের মধ্যে অবক্ষয়ের ছবি স্পষ্ট। আর সব থেকে বড় কথা হচ্ছে তারা এটাকে অবক্ষয় বলে ধরেনই না।
আরো পড়ুন- Haridwar : তীর্থ ভ্রমণে গিয়ে টাকার চিন্তা! এবার হরিদ্বার গেলে থাকা খাওয়ার কোন খরচ লাগবে না!
তারা মনে করেন এটাই ট্রেন্ড এবং এটাই স্বাভাবিক যেটা আজ থেকে বেশ কিছু বছর আগেও লজ্জা এবং কলঙ্কের ছিল। আগেকার দিনে স্কুল কলেজে প্রবীণরা নবীনদের জন্য একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করতেন যার নাম ছিল নবীন বরণ। সেখানে প্রতিভার অন্বেষণ করা হতো অথচ আজ সেটাই র্যাগিং হয়ে ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদ আর কোনো ঘটনা ঘটে গেলে সেটা নিয়ে আন্দোলন ব্যাস এইটুকুই তারপর আবার ব্যাক টু স্কোয়ার ওয়ান। স্বপ্নদ্বীপ বারবার করে বলেছিলেন তিনি সমকামী নয় অর্থাৎ একটা আন্দাজ পাওয়াই যায় যে তার যৌনতার ওপর বা তার শারীরিক ক্ষমতার উপর প্রশ্ন চিহ্ন তোলা হয়েছিল যেটা কোনভাবেই একজন তরুণের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।
আরো পড়ুন- Guava Market : জমিতে নয় বাজার ভেসে আছে জলে! এহেন অদ্ভুত বাজারের দেখা মিলল, কোথায় জানেন?
ঠিক কী হয়েছিল সেটা হয়তো কোনদিনই প্রকাশ্যে আসবেনা। তবু চেষ্টা করে যেতেই হবে এরকম একটা মারাত্মক জঘন্য অন্যায়কে আমাদের জীবন থেকে চিরকালের মতো ভ্যানিশ করার জন্য।