Breaking Bharat: পুজোর অনুষঙ্গ আরতি, কিন্তু দেবী বিগ্রহ বা ছবির সামনে ঠিক কোন কারণের জন্য আরতী করা হয় সে বিষয়ে জানা আছে কি (Why is aarti performed to deities in temples)?
ঈশ্বর পালনকর্তা, তিনিই সৃষ্টিকর্তা আবার তিনি চাইলে সব এক নিমেষে শেষ হয়ে যেতে পারে। এই দেবতার আরাধনার মধ্যে দিয়ে প্রতিমুহূর্তে আমরা যেন নিজেদের এবং প্রিয়জনদের ভালো রাখার প্রার্থনা করতেই ব্যস্ত থাকি।
দেবতার পূজোর বিভিন্ন নিয়ম শাস্ত্রে বলা আছে সেই মতোই সাধারণ মানুষ দেব দেবীকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করেন। আর এই পুজো অর্চনার অন্যতম অঙ্গ হল আরতি। বাড়ির পুজো হোক বা মন্দির আরতি করতেই হয়। কিন্তু কেন করতে হয় সেটা জানা নেই অনেকেরই।
আরতি দর্শন চাক্ষুষ করেন তাদেরও পূণ্য লাভ হয়:
ভগবান ঈশ্বর কারোর কাছে বিগ্রহে আছেন কারোর কাছে আছেন মনের অন্তরে। ঈশ্বরকে পুজো করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন উপচারের শরণাপন্ন হতে হয়। যদিও মনের টানই আসল কথা। শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব বলে গেছেন যে অন্তর থেকে যদি ভগবানকে ডাকা যায় তিনি অবশ্যই সাড়া দেন।
তখন আর বাহ্যিক কোনো নিয়ম বা উপচার কিংবা আড়ম্বরের কোনও আবশ্যিকতা থাকে না। তবু হিন্দু শাস্ত্রমেনে কিছু নিয়ম পুজো খেতে পালন করা হয়। যেমন প্রাণ প্রতিষ্ঠা, ঘট স্থাপন, নৈবেদ্য অর্পণ তেমনই আরতি। মনে করা হয়, পুজোর সময় আরতি করলে একদিকে যে পুজক তারও যেমন মঙ্গল সাধন হয় পাশাপাশি যারা সেই আরতি দর্শন চাক্ষুষ করেন তাদেরও পূণ্য লাভ হয়।
ঠিক সেই কারণের জন্যই মন্দিরে বা কোন মন্ডপের পূজোয় আরতি হচ্ছে দেখলে সেখান দিয়ে যারা যাতায়াত করছেন খানিক সময়ের জন্য থমকে যান। প্রাচীন মুনি ঋষিদের কথাই আরতির মাধ্যমেই ভগবান নিজ রূপের প্রকাশ করেন।
আরো পড়ুন – কী করে একটা গোটা গ্রাম রাতের অন্ধকারে গায়েব হয়ে যেতে পারে?
তার কৃপাদৃষ্টি পড়ে পুজক এবং সেই পরিবারের সকলের দেহ মনের উপরে। সত্ত্বগুণ, তমো গুণ, রজ গুণ- এই তিনগুণ নিয়ে মানব জীবন। আরতির মাধ্যমে সব অসৎ মানসিকতা দূরে চলে যায়।
সত্ত্বগুণ প্রকাশিত হয়।
পৌরাণিক কাহিনী ঘেঁটে দেখা যায় আরতির প্রতিটি স্তরের ক্ষেত্রে এক একটা করে নিয়ম বা উদ্দেশ্য গ্রহণ করা হয় । প্রথমে পঞ্চ প্রদীপ দিয়ে আরতি, তারপর শঙ্খ দ্বারা, বস্ত্র দিয়ে আরতি কিংবা চামর সবার একটা অর্থ আছে।
আরো পড়ুন – পিকনিক ছাড়া শীতকাল? কিন্তু বাঙালির চড়ুইভাতির চর্চা বিশ্বজুড়ে, এটা কেমন করে সম্ভব?
শাস্ত্রে কথিত আছে প্রদীপ জ্বালিয়ে আরতি করলে আলোর প্রকাশ ঘটে অন্ধকারের বিনাশ হয়। পৌরাণিক মতে শঙ্খ হল মঙ্গলের প্রতীক। সুতরাং শঙ্খের আরতিতে রোগ মুক্ত হয় দেহ মনের। ধুপের সুগন্ধে মন সুরভিত হয়, নতুন বস্ত্রে চিত্ত প্রফুল্লিত বোধ করে। আসোনি প্রতিটা পর্যায়ে যেন ঈশ্বরের আরাধনার আর আবাহনের একটা মাধ্যম মাত্র।
আমরা জানি আগুন সব কিছুকে গ্রাস করতে পারে আগুনে শুদ্ধ হয় মন দেহ। তাই প্রথমেই সেই শুদ্ধিকরণ। এরপর শঙ্খর মধ্যে থাকা জল দিয়ে স্নান করানো, গামছা বস্ত্র দিয়ে সিক্ত দেহকে মুছিয়ে দেওয়া। ফুলের সজ্জায় সাজানোর পর ধূপ দ্বারা সুগন্ধি দেবতাকে অর্পণ করা।
আরো পড়ুন – মন্দিরের অলৌকিক ঘটনা কি চাক্ষুষ করেছেন কখনো? ভাঙা শিবলিঙ্গ জুড়তে দেখেছেন?
ঠিক এই ভাবেই দেবীকে বা ঈশ্বরকে নিজের মনে করে তার আবাহন করা, এভাবেই মনের নিবেদন পৌঁছে যায় ভগবানের কাছে। আর পূর্ণতা পায় আরতি।