Breaking Bharat: সব লোকে কয় লালন কী জাত সংসারে? লালন ফকির (Lalan Fakir) কে ছিলেন? বাউল না ফকির বাবা? কে তিনি? কোথায় আলাদা বাকিদের থেকে? লোকসংস্কৃতি আর সঙ্গীতের কথা উঠলেই লালন ফকির নামটা উঠে আসে সবার আগে।
মনের মানুষ খুঁজে যাওয়া মানুষটি সম্পর্কে অনেক কিছুই অজানা। আজ চেনার চেষ্টা আমাদের। দেহের ভিতরে লুকিয়ে থাকা অচিন পাখির সন্ধান পেয়েছেন যিনি, তাঁকে কতটা চিনি আমরা?
১৭ অক্টোবর ১৭৭৪ – ১৭ অক্টোবর ১৮৯০ – এই ছিল জীবনকাল। লালন ফকির (Lalan Fakir) বিশ্বাস করতেন সব মানুষের মধ্যেই বাস করে এক ‘মনের মানুষ’। আর সেই মনের মানুষের সন্ধান পাওয়া যায় আত্মসাধনার মাধ্যমে। পৃথিবীতে যুগে যুগে সাধক পন্ডিৎ ব্যক্তিরা এসেছেন মানুষের কল্যানে, সমাজের কল্যান সাধনে। নিজেদের নয় তাঁরা ভেবেছেন মানবজাতির কথা।
মানুষের মুক্তি খুঁজেছেন, দেখিয়েছেন আলোর পথ। লালন বলেছেন দেহতত্ত্বের কথা। তিনি একাধারে একজন আধ্যাত্মিক বাউল সাধক, সমাজ সংস্কারক এবং দার্শনিক। তিনি অসংখ্য গানের গীতিকার, সুরকার ও গায়ক ছিলেন। প্রকৃতপক্ষে লালন ছিলেন মানবতাবাদী।
মানুষকে ভালোবেসেছেন তিনি, গেয়েছেন মানুষের মনের গান। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী একজন বাঙালি, যিনি ফকির লালন, লালন সাঁই, লালন শাহ, মহাত্মা লালন ইত্যাদি নামেও পরিচিত। লালনের জীবদ্দশায় তাঁর একমাত্র স্কেচটি তৈরি করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাই জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর।
৫ই মে ১৮৮৯ সালে ,লালনের মৃত্যুর আগে পদ্মায় তাঁর বজরায় বসিয়ে তিনি পেন্সিল স্কেচটি করেন। কলকাতার জাদুঘরে যা সসম্মানে সংরক্ষিত। সাম্প্রদায়িকতার বেড়াজালে নিজেকে আটকে রাখেন নি লালন। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ।
ধর্ম, জাত, কূল, বর্ণ, লিঙ্গ এইসব দিয়ে যে মানুষের ভেদাভেদ করা যায়, তা তিনি বিশ্বাস করতেন না।শৈশবে পিতৃহারা হওয়ায় অল্প বয়সেই তাঁর ওপর সংসারের দায়িত্ব এসে পড়েছিল। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষালাভের সুযোগ তাঁর হয়নি। তবু তিনিই শিখিয়েছেন জীবনের সারমর্ম।
তিনি বুঝিয়েছেন দেহের ভেতরেই সেই মনের মানুষ বা যাকে তিনি ‘অচিন পাখি’ বলেছেন, তার বাস।অনেকে লালনের গানে দেহতত্ত্বের উপস্থিতি নিয়ে গবেষণা করেন। তিনি প্রায় দু হাজার গান রচনা করেছিলেন বলে লালন গবেষকরা বলেন।
আরো পড়ুন- Cat Scratch: বিড়াল কখনো আঁচড় কেটেছে? বিড়ালের এই চরিত্র কি তার হিংস্রতার লক্ষণ?
লালন কোনও একটি ধর্মের অনুসারী বা অনুগামী ছিলেন না। সব ধর্মকেই তিনি সমান মর্যাদা আর ভালোবাসায় আপন করে নিয়ে ছিলেন। তাই লালনের কোনও জাত আছে কিনা বা কী জাত তা বিশ্ব সংসারে কেউই জানেন না।
আরো পড়ুন- রাস্তায় একা একা চলাফেরা করতে হয়?ছিনতাইবাজের পাল্লায় পড়লে কী করা উচিত ?
আপনারা অনেকেই হয়তো জানেন যে বাউল গান যাঁরা ভালবাসেন বা শিক্ষা নেন তাঁদের কাছে লালন দেবতা তুল্য। এখনও কিছু মানুষের মধ্যে অমলিন হয়ে রয়ে গেছে লালনের ভাবতত্ত্ব। দেহের মধ্যেই ভাবের মানুষ, মনের মানুষ, অচিন পাখি বাস করে।
আরো পড়ুন- Chhau Dancer : আমি নৃত্য প্রেমী! নাচ দেখতে ভালোবাসি, কিন্তু ছৌ নৃত্যশিল্পীদের ব্যাপারে জানতে চাই?
তাই এই দেহ কে আশ্রয় করেই গান লিখেছেন বেঁচেছেন আর শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন লালন ফকির। আজ তাঁর গান দিকে দিকে সমাদৃত। তাঁকে আদর্শ করে তাঁর গান নিয়ে বেঁচে আছেন বহু বাউল শিল্পী। আর গাইছেন, ” সব লোকে কয় লালন কী জাত সংসারে..?”