Breaking Bharat: কুমারীদের কীভাবে ‘কুমারী পুজোয়’ নির্বাচন করা হয় ? কুমারীদের এই বিষয়টা জানা দরকার (Who started Kumari Puja in Bengal?)!
দুর্গাপূজা মানে মহাপুজো মহোৎসব। এই পুজোকে ঘিরে অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা সবটাই জুড়ে থাকে। পাঁচ দিনের পুজোর আনন্দ লুটে নেবার জন্য ৩৬০ দিন ধরে অপেক্ষা করতে হয়। এই পুজোয় একেক দিনে একেক রকমের রীতি মানা হয়।
কুমারীকে অর্থাৎ বালিকাকে দেবী জ্ঞানেই পূজা করা হয়:
দুর্গাপূজার গুরুত্বপূর্ণ একটি নিয়ম হল ‘কুমারী পুজো‘। ‘কুমারীকে অর্থাৎ বালিকাকে দেবী জ্ঞানেই পূজা করা হয়’ দুর্গাপূজার মহাষ্টমী তিথিতে। কিন্তু কী ভাবে নির্বাচন করা হয় কুমারীদের এই বিষয়টা একটু জানা দরকার আর এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকা কিছু সমাজ এবং সংস্কৃতিগত প্রশ্ন এখানে উঠতে পারে।
প্রথমেই জানিয়ে রাখি, ঋতুমতিদের কখনোই কুমারী হিসেবে ধরা হয় না। কারণ জানতে চাইলে সমাজ এবং সংস্কারের নানা ব্যাখ্যার দিকে আমাদের চোখ রাখতে হয়। বেলুড় মঠের স্বামী বিবেকানন্দের হাত ধরে ‘কুমারী পূজার‘ সূচনা।
এভাবেই কুমারীকে অষ্টমী তিথিতে পুজো করা হতো:
কিন্তু যদি বাংলার ইতিহাসে চোখ রাখা যায় তাহলে এর আগেও বিভিন্ন জায়গায় এভাবেই কুমারীকে অষ্টমী তিথিতে পুজো করা হতো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেটা অনেক বেশি করে ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক জায়গায় নবমীতেও এই পুজো করা হয়। সবার আগে এই পুজোর শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা জেনে নেওয়া দরকার।
পুরাণ মতে, কোলাসুর নামের দৈত্য যখন স্বর্গ, মর্ত্য অধিকার করে ফেলে এবং তার পরাক্রমশালী প্রভাব দেখাতে শুরু করে তখন দেব দেবীরা খুবই বিচলিত হয়ে পড়েন। কোনও উপায় না দেখে তখন তাঁরা মহাকালীর শরণাপন্ন হন। এরপর দেবী পুনর্জন্ম নিয়ে মর্ত্যে কোলাসুরকে বধ করেন।
দশ বছরের বেশি ‘বালিকাকে কুমারী’ হিসেবে ধরা হয় না:
তারপর থেকেই এই ‘কুমারী পুজোর শুরু‘। শাস্ত্র বলে দেবী নাকি পুরাণ মতেই পুজো নিয়েছিলেন। বৃহদ্ধর্ম পুরাণ মতে, “কন্যা রূপেন দেবানামগ্রত দর্শনং দদৌ”। কিন্তু মনে কি প্রশ্ন জাগে? দেবী দুর্গা তিনি উমা তিনি মাতৃরূপেন সংস্থিতা। তাহলে কেন শুধুমাত্র নারী ঋতুমতি হওয়ার আগে পর্যন্তই তাকে পূজা করা যাবে?
দশ বছরের বেশি বয়স হয়ে গেলে সেই বালিকাকে আর কুমারী হিসেবে ধরা হয় না। এক্ষেত্রে শাস্ত্রে বলছে বয়স অনুযায়ী কুমারীদের আলাদা আলাদা নামকরণ করা হয়। যেমন ধরুন উদাহরণ দিলে বিষয়টা বোঝা সহজ হতে পারে।
আরো পড়ুন – দাদার কীর্তি! মাধুরী দীক্ষিতের সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন তাপস পাল?
দুই বছরের কুমারীর নাম হয় কুমারিকা, তিন বছরের বালিকা যদি কুমারী হয় তাহলে তার নাম হয় ত্রিমূর্তি, চার বছর হলে কল্যাণী, পাঁচ বছরের কুমারী মেয়ের নাম হয় রোহিণী, আবার ছয় বছরের কুমারী মেয়ের নাম হয় কালিকা, সাত বছরে চণ্ডিকা, আট বছরের কুমারী মেয়েটির নাম সুভদ্রা।
এবং বয়স অনুযায়ী আলাদা আলাদা নিয়ম মেনে পুজো করতে হয় অর্থাৎ একেক বয়সের কুমারীদের জন্য একেক রকমের নিয়ম। জানেন শাস্ত্রে কিন্তু কোথাও বলা নেই যে ব্রাহ্মণ কন্যাদেরই কুমারী হতে হবে। এক্ষেত্রে সমাজের ব্রাহ্মণ জাতিদের নিয়মের কথাই বলতে হয়।
আরো পড়ুন – জানেন! ‘নিজের কাজ নিয়ে অখুশি’ হওয়া মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে? কিন্তু কেন এমন ঘটনা?
মূলত সমাজ ব্যবস্থা যেহেতু ব্রাহ্মণরাই পরিচালনা করতেন তাই তখন থেকে এই নিয়ম মেনে আসা হচ্ছে। এখানেই শেষ নয় একাধিক গোঁড়া সংস্কার জড়িয়ে এই ‘কুমারী পূজার ইতিহাস‘ ( History of Kumari Puja) এবং নিয়মের ক্ষেত্রে। রজঃস্বলা না হওয়া পর্যন্ত একটি মেয়ে কুমারী হতে পারে এ কেমন বিধান?
পিরিয়ডস হয়ে যাওয়া মানেই নারী অশুচি:
অবশ্য যে সংস্কৃতিতে হাজার বছর ধরে একটি মেয়ের সম্মান নির্ধারণ করা হয় ‘কুমারীত্ব’ আর ‘পুত্রসন্তান উৎপাদনের’ মধ্যে দিয়ে, সেই সমাজের সংস্কার নিয়ে তো প্রশ্ন উঠতেই পারে। বলা যেতে পারে এই সময় দাঁড়িয়ে প্রশ্ন তো ওঠা উচিত।
আরো পড়ুন – নাচ, গান, আঁকা, কবিতা এই সব নিয়েই আমাদের সাংস্কৃতিক! এবার নেশাই হবে পেশা! কিভাবে?
শুচিতা নিয়ে যে প্রশ্ন ওঠে , পিরিয়ডস হয়ে যাওয়া মানেই নারী অশুচি, পুজোর কাজে সে ব্রাত্য – এই ধারণা থেকে কবে মুক্তি পাবে সমাজ? তবেই তো গিয়ে সত্যিকারের দুর্গা বরণ হবে। পবিত্রতা মানুষের অন্তরে থাকে, বাইরের বা শারীরিক লক্ষণ দিয়ে কি তার বিচার হয়? একরাশ প্রশ্ন উঠে রইলো আজও উত্তর দেবার কেউ নেই।