Breaking Bharat: ফ্রুট স্টল থেকে মিউজিক কোম্পানি? প্রত্যেকদিনই ‘টি সিরিজ’ কোম্পানির গান-বাজনা শোনেন, কিন্তু ইতিহাসের সঙ্গে পরিচয় আছে কি?
কথাই বলে যোগ্যতা অর্জনের দিকে আগে লক্ষ্য দেয়া উচিত। কারণ একবার যোগ্য হতে পারলে সাফল্য সহজেই ধরা দেবে। এই কথাগুলো যেন বিশেষভাবে প্রমাণিত। আজকে যাদের কথা বলছি তাদের ইতিহাসটা অবাক করবে আপনাকে। ‘টি সিরিজ‘ মিউজিক কোম্পানির নাম শুনেছেন নিশ্চয়ই?
ভাবতে পারেন এরকম এক মিউজিক কোম্পানি এককালে ফলের দোকান চালাতো? অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটাই আসল সত্যি। আজ সেই ইতিহাসের সঙ্গেই পরিচয় করাবো আপনাদের।
টি-সিরিজ তৈরির গল্পটা জানেন?
গুলশন কুমারের নামটা সকলেই জানেন । টি সিরিজ মানেই তার ছবি চোখের সামনে ভেসে ওঠে। কিন্তু টি-সিরিজ তৈরির গল্পটা জানেন কি? তাহলে একটু ক্ল্যাসমাকে যেতে হবে। সালটা ছিল ১৯৮৩। ২৭ বছর বয়সী তরুণ গুলশন দিল্লির রাস্তায় বাবার সঙ্গে ফল বিক্রি করতেন।
কিছুদিনের মধ্যে নিজেই একটি দোকান খুলে বসেন। তবে শুধু ফল নয় তিনি দিল্লির রাস্তায় সাধারণ মানুষকে উপহার দেন ফলের রস। মুহূর্তেই হিট হয়ে যায় তার ব্যবসা। কিন্তু সেটাও ক্ষণস্থায়ী কারণ বাকিরাও একই পদ্ধতি শুরু করলে ব্যবসা মার খেতে শুরু করে।
এবার মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে মাথা দেন তিনি। সুপার ক্যাসেটস ইন্ডাস্ট্রিজ প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি আত্মপ্রকাশ করে ১৯৮৩ সালে। তখন গানবাজনা শোনার সখ শুধু বড়োলোকের থাকত বলে মনে করা হত। গ্রামফোনের রেকর্ড ছিল বটে কিন্তু সেটা এতটাই দামি ছিল যে, সাধারণ মানুষ তার ধারে কাছেও যেতে পারতেন না। ক্যাসেট থাকলেও মুহুর্তেই আউট অফ মার্কেট হয়ে যেত।
এই অবস্থা কাজে লাগিয়ে কপিরাইট আইনের ফাঁক-ফোঁকরের ফায়দা তুলে নিলেন গুলশন কুমার। বড় বড় শিল্পীদের গানের ডুপ্লিকেট কপি বের করলেন এবং নিশ্চিত করলেন যাতে ক্রেতাদের শূন্য হাতে বাড়িতে না ফিরতে হয়। ব্যাস কাজে লাগল এই ফর্মুলা, ব্যবসা সুপারহিট। কিন্তু সেখানেও এলো প্রতিদ্বন্দ্বী। তাই কপালে সুখ সইল না।জিরো লায়াবিলিটি মডেলের দিকে জোর দিলেন এবার।
আরো পড়ুন – ‘কন্যাদান’ কত বড় অন্যায় সে কথা জানেন? সমাজের কিছু নিয়মের পরিবর্তন আনতে এত সমস্যা কোথায়?
আসলে এটাই ছিল বুদ্ধিমত্তা। প্রোডাকশন হাউজ থেকে খুচরা বিক্রেতার কাছে ক্যাসেট পৌঁছনোর সময় অনেক ক্ষেত্রেই নানা কারণে ক্যাসেট ড্যামেজ হয়ে যেত। ফলে হামেশাই বেশ বড় ক্ষতির মুখে পড়তেন খুচরা বিক্রেতারা। এখানেই গুলশনের নয়া চাল। তিনি জানিয়ে দিলেন সব খারাপ ক্যাসেট তাকে ফেরত দিল তিনি মূল্য ফিরিয়ে দেবেন। এই দাওয়াই কাজ করল।
আরো পড়ুন – মধ্যবিত্তদের উচ্চশিক্ষা কি শুধুই স্বপ্ন নাকি আদৌ বাস্তবে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা আছে?
বলা যেতে পারে প্রায় এক রাতের মধ্যে সমস্ত ক্যাসেট ব্যবসায়ীরা গুলশন কুমারের কোম্পানির ক্যাসেট বিক্রির দিকে ঝুঁকে পড়লেন। ব্যাস ক্যাসেটের বাজার আবার রমরমা। আশা এবং লতার গানের তখন ভরপুর চাহিদা। সেই গান নতুন শিল্পীদের দিয়ে গাইয়ে নিলেন তিনি। খুব সহজেই প্রিয় গানের আরো এক ভ্যারিয়েশন মনে ধরল সিনে প্রেমীদের।
আরো পড়ুন – বুড়ো বয়সে ভীমরতি মানে কী? চক্ষু চড়ক গাছ? বুজরুকি কাণ্ড! বাংলা বাগধারার বাস্তব প্রয়োগ কতটা?
তারপর তো গুলশনের নামেই সিনেমার সুপারহিট তকমা জুড়ে যাওয়ার ইতিহাস তৈরী করে ফেলল “কয়ামত সে কয়ামত তক” থেকে শুরু করে “আশিকি”। সিনে প্রেমীরা অপেক্ষা করতেন কখন গুলশন কুমার প্রেজেন্টস কথাটা সিলভার স্ক্রিনে ফুটে উঠবে। সাধারণ ফল ব্যবসায়ী নিজের বুদ্ধি আর ইচ্ছের জেরে অসাধ্য সাধন করেছে। আর কয়েক কোটি ভারতীয়দের জন্য হয়ে উঠেছেন অনুপ্রেরণা।