Breaking Bharat: সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিতে কোথায় দাঁড়িয়ে আজ মেয়েরা? নারী (Girls) মানে ব্যাক বেঞ্চারের মত সংসারের মধ্যেই নিজেকে আটকে রাখা?
রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন,
“নারীকে আপন ভাগ্য জয় করিবার, কেন নাহি দিবে অধিকার,হে ভাগ্যবিধাতা!” এ প্রশ্ন কবির একার ছিল না । এ প্রশ্ন সমাজ সচেতন, সমাজ সংস্কারক প্রত্যেকেরই ছিল। ঘটনাচক্রেই তারা বেশিরভাগই পুরুষ আর এই পুরুষই আবার নারীকে চিরকাল ঘরের মধ্যে আটকে থাকতে শিখিয়েছে।
আসলে দাম্পত্য জীবনের দায় চাপিয়ে দিয়ে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে চুক্তির সম্পর্ক তৈরি করেছে, এই সমাজের কিছু প্রাচীনপন্থী ভাবনা। যার ফল হিসেবে আজও পিছিয়ে আছে নারী, পিছিয়ে আছে সামাজিক সভ্যতা। ডিজিটাল ইন্ডিয়ার যুগে আজও মান্ধাতার আমলের ভাবনা কতটা ক্ষতি করছে আমাদের, সে বিষয়ে কল্পনাও করতে পারি না আপনি আমি।
পুরান থেকে শুরু করে কাব্যগ্রন্থ সবেতেই নারীকে চিরকাল পুরুষের বিলাস সঙ্গিনী হিসেবে রাখা হয়েছে। এতটুকু পড়ার পর আপনি হয়তো বলতেই পারেন যদি তাই হবে তাহলে নারী কি করে শক্তির আধার? নারী তো পৃথিবী জুড়ে পূজিতা, তাই না?
কিন্তু একবার ভেবে দেখুনতো প্রাচীন মুনি ঋষি দের ধ্যান ভঙ্গ করা থেকে শুরু করে দেবতাদের অস্ত্রে বলিয়ান হয়ে স্বয়ং দেবী দুর্গার রণক্ষেত্রে যাওয়া- এইসব টা কি প্রমাণ করে দেয় না যে নারীকে ওই নিচুস্তরেই রাখা হয়েছে পুরুষ এবং নারীর সম্পর্কের বিভেদ তৈরি করে?
এবার আসুন বাস্তব সমাজের কথায়। সেখানেও তো বাড়িতে মেয়ে বা কন্যা সন্তান জন্ম নিলে সবার আগে তার বিয়ের জন্য ভাবনা-চিন্তা শুরু হয়ে যায়। যেন মেয়ে মানেই বোঝা, তাকে অন্যত্র পাঠিয়ে দেওয়াটাই তার পরিবারের একমাত্র লক্ষ্য। চাকরি করে একটা মেয়ে সংসার চালালে, তার বাবা-মা এর দিকে আঙুল তুলে সমাজ উল্টে প্রশ্ন করে মেয়ের পয়সায় খাচ্ছে তারা কোন যুক্তিতে?
ছেলে হলে এটা তার নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পড়তো। বরং না করাটাই কর্তব্যে অবহেলা করা। বিয়ের পর একটি মেয়ের প্রধান কাজ সংসার সাজানো আর সন্তান উৎপাদন ও প্রতিপালন। একটু ভেবে দেখুন তো কোথাও শারীরিকভাবে মেয়েদেরকে (Physically girls) একটু পিছিয়ে দেওয়া হলো না? আর মানসিক ভাবনা?
সে কথা বাদ দিন। এই সময় দাঁড়িয়েও মেয়েদের মনের কথা সমাজ শুনতেও চায় না। যেন অলিখিত নিয়ম রয়েছে, ছেলে মানে এই কাজ, আর মেয়ে মানে এই কাজ। পরিসংখ্যান বলছে এই ভাবনা ভারতবর্ষে সবথেকে বেশি।
ঠিক সেই কারণেই ভারতবর্ষে চাকরির সুযোগ পান না বেশিরভাগ মহিলারা (Most women do not get job opportunities)। প্রথমত পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের ভ্যাকেন্সি কম। এছাড়াও কোন মহিলা কি চাকরিতে যোগদান করতে বলার সময় কোম্পানির মাথায় হাজার একটা চিন্তা থাকে।
যেমন ধরুন, সেই মহিলার অফিসের পরিবেশে কাজ করতে অসুবিধা হবে না তো?
কাজ করতে করতে রাত হলেই তাকে বাড়ি ফেরার জন্য অফিসকে কতটা খরচ করতে হবে ?
কিংবা মেয়েটি সন্তান সম্ভাবনা হয়ে পড়লে ছুটি নিয়ে কি বড় প্রশ্ন তৈরি হতে পারে?
সত্যি কথা এতো ভাবনার পরে, নিজের এত লোকসান অবশ্যম্ভবী জেনেও, মহিলাদেরকে কি চাকরি দেবে কোম্পানি? দেশের নিরিখে কাজে যোগ দেওয়ায় নারীদের হার অত্যন্ত কম ভারতবর্ষে, পুরুষদের বেশি যথারীতি। কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্য একটা বড় ফ্যাক্টর , তাই ভয় পেয়ে পিছিয়ে আসে মেয়েরা।
তথ্য এবং পরিসংখ্যার প্রসঙ্গ যদি আনা হয় তাহলে বলতে হয় ভারতবর্ষের প্রায় ৮০ শতাংশ মহিলা পুরুষের উপর নির্ভরশীল। তারা এখনো সম্পূর্ণভাবে স্বাবলম্বী নন । কেউতো আংশিক স্বাবলম্বী হওয়ার কথাও ভাবতে পারেন না। করোনা কালে বহু মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। তাহলে ভাবুন কত পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে শুধুমাত্র বাড়ির পুরুষের চাকরি চলে যাওয়ার কারণে!
আরো পড়ুন- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স? মানুষের সৃষ্টি মানুষকেই ধ্বংস করে দেবে?
কারণ পুরো সংসারটাই তো পুরুষের উপর নির্ভরশীল নারী সেখানে কোথায়? দুর্গাপূজার পাঁচটা দিন ভক্তি ভরে মায়ের পায়ে ফুল দিয়ে প্রণাম করলে, নারীকে যথাযোগ্য সম্মান দেওয়া হয় না। একথা সমাজ কবে বুঝবে? ভারতের প্রতিবেশীদের রাষ্ট্র চিন এবং বাংলাদেশে পর্যন্ত মহিলাদের চাকরিতে যোগ দেওয়ার হার এই দেশের থেকে অনেক বেশি (Women in employment)।
আরো পড়ুন- patabahar gach : বাড়িতে পাতাবাহার সাজানো আছে কি? সাবধান! এই গাছই হতে পারে আপনার মৃত্যুর কারণ
এটা সম্ভব হয়েছে দেশীয় মানসিকতার পরিবর্তনের কারণে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন এই সমস্যাটা ইউরোপের তুলনায় এশিয়াতে অনেক বেশি। বিদেশে নারী-পুরুষ দুজনেই কর্মরত, এই ঘটনা প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই দেখা যায়। এর সঙ্গে আবার যৌন নির্যাতনের বিষয়টা তো রয়েই গেছে।
আরো পড়ুন- Sourav Ganguly : লর্ডসে ঘুরপাক জামা মানে দাদাগিরি! মনে পরে সৌরভের সেই গৌরবময় ইতিহাস?
কোন কিছু থেকে নারীকে আটকাতে হলে যৌন নির্যাতনই একমাত্র হাতিয়ার মনে করে বিকৃত সমাজের বিকৃত মস্তিষ্ক। অর্থাৎ সবমিলিয়ে নারী আপন ভাগ্য জয় করবার অধিকার না নিজে অর্জন করতে পারল, না সেই অধিকার ভাগ্য বিধাতা তাকে দিলেন।