Breaking Bharat: কলকাতার অহংকার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল (victoria memorial kolkata)। ইতিহাস জানেন? কল্লোলিনী কলকাতার অহংকার কোন স্থাপত্য, জানা আছে? ইতিহাস ঘুরে দেখা যায় আর চুটিয়ে প্রেম করা যায় কোথায় বলুন তো?
শহর কলকাতার আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে অনেক গল্প। কিছু গল্প ইতিহাসকে মনে করায়। কিছু আবার ইতিহাস তৈরি করার দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। কলকাতা প্যাশন আর ফ্যাশনের শহর , তাকে প্রেমের চাদরে ঘিরে রেখেছে এখানকার মানুষের মন আর মানসিকতা।
শহরের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে উপন্যাসের অধ্যায়। পাতা ওল্টাতে শুরু করলে প্রথমেই শহরের প্রেমে পড়বেন আপনি। আর ইতিহাস সোজা টেনে নিয়ে চলে যাবে ব্রিটিশ পিরিয়ডের ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল এর সবুজ ঘাসে (Victoria Memorial is famous for?)।
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল ভ্রমণ (Victoria Memorial):
কলকাতার দর্শনীয় স্থানের মধ্যে প্রথম তিনে উঠে আসে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল এর নাম। পৃথিবীর নানা দেশ থেকে বহু পর্যটক কলকাতায় আসে ভিক্টরিয়া মেমোরিয়ালকে একবার চাক্ষুষ করার জন্যে। কলকাতার পার্ক স্ট্রিট বা ময়দান চত্বরে পৌঁছে গেলে চোখ বন্ধ থাকেও যেকোনো মানুষ সোজা চলে যেতে পারবেন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল এর গেটে।
তবে বলে রাখা ভালো সামনের দিক দিয়ে একটি এবং পিছনের দিক দিয়ে একটি গেট রয়েছে। দুটি দিক থেকেই প্রবেশ করতে পারবেন এই সৌধে । পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা ও শহর থেকে প্রচুর মানুষ সারাবছর এখানে ভীড় করে। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের পরিধিতে ঢোকার জন্যে একটি ১০টাকা মূল্যের টিকিট কাটার ব্যবস্থা আছে। তবে যারা এখানে প্রাতঃরাশ করেন তাদের ক্ষেত্রে টিকিটের ব্যবস্থা অন্যরকম। এবার একটু এর স্থাপন কালের ইতিহাসের পাতায় চোখ মেলা যাক (victoria memorial: history)।
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল কবে কোথায় প্রতিষ্ঠিত হয়?
যারা পুরনো দিনের ইতিহাস ভালোবাসেন তারা অনেকেই হয়তো জানেন, ১৯০৬ খ্রীষ্টাব্দে নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং দীর্ঘ ১৫ বছর পর ১৯২১ সালে এই নির্মাণ কার্য্য সম্পূর্ণ হয়। রাণী ভিক্টোরিয়ার মৃত্যুর পর তত্কালীন ব্রিটিশ ভারতের ভাইসরয় লর্ড কার্জন রাণীর স্মৃতি রক্ষার্থে স্মারক প্রাসাদ ও উদ্যান- “ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল” এর নির্মাণ পরিকল্পনা করেন।
সেই থেকেই এই সৌধটির নাম হয় ভিক্টোরিয়া হাউজ। বর্তমানে এই মিউজিয়াম এবং সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে প্রবেশ করলে আপনি ইতালিয়ান ভাস্কর্য দেখতে পাবেন সঙ্গে মুঘল আমলের অনেক স্মৃতি। তিতুমীর এর বাঁশের কেল্লার একটি রেপ্লিকা এবং সিরাজ-উদ-দ্দৌলার পরনের পোশাক সবটাই এখনো সংরক্ষিত ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল এর মিউজিয়ামে (At the Victoria Memorial Museum)।
এমন কি ছত্রপতি শিবাজীর আত্মরক্ষার স্বার্থে ব্যবহৃত স্মৃতিচিহ্ন এখনো পর্যন্ত সযত্নে রাখা আছে মেমোরিয়ালের অন্দরে। এই সৌধটির নকশা করেছিলেন ব্রিটিশ ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্ট স্যার উইলিয়াম এমারসন। বাগানের নকশা করেছিলেন লর্ড রেডেসডেল ও স্যার জন প্রেইন।
নির্মাণকাজ করেছিল কলকাতার মার্টিন অ্যান্ড কোং। প্রায় ৬৪ একর জমির উপর নির্মিত ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে রাজস্থানের মার্বেল ব্যবহার করা হয় । শুধুমাত্র একতলার আয়তন ৭৭,০৬৪ বর্গফুট। সেই সময়ে দাঁড়িয়ে কলকাতার এই জনপ্রিয় সৌধ নির্মাণে খরচ হয় প্রায় ১ কোটি ৫ লাখ টাকা।
আরো পড়ুন- Howrah Bridge: আজও কলকাতার সেরা আকর্ষণ রবীন্দ্র সেতু! পোশাকি নাম ‘ হাওড়া ব্রিজ’
আরো পড়ুন- Farmer : কৃষকের যন্ত্রনা বোঝেন? ফসল উৎপাদন করে আমাদের মুখে অন্ন তুলে দিচ্ছেন কৃষকরা !
ভিক্টোরিয়াকে দূর থেকে দেখলে সবার আগে চূড়া আর পরী আপনার নজরে আসবে। যদিও সেই পরী এখন আর নড়ে না। আসলে সৌধের মাথায় ৩ টন ওজনের ১৬ ফুট উচ্চতার বিউগল- রাণী বিজয়দূতীর ব্রোঞ্জমূর্তি আছে, তাকে সবাই ভিক্টোরিয়া পরী বলে থাকেন। বিশেষ বিশেষ দিনে লেজার শো দেখানো হয়।
আরো পড়ুন- Boudi Prem : বৌদির সাথে প্রেম করছেন? বৌদি প্রেম এটা কি ভালোবাসা নাকি শরীরের চাহিদা?
লেজারের আলোয় উঠে আসে অতীতের কলকাতার জীবন্ত ছবি। শহরের বিবর্তনের এই ধারাবিবরণী কলকাতার এক বিশেষ আকর্ষণ। এখনো বঙ্গের সংস্কৃতির কথা উঠলে বা দেশের গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় কে তুলে ধরতে হলে জাতীয় স্তরের ভাবনায় উঠে আসে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল এর নাম। তাই প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, অনুষ্ঠান করলে এই স্থানটি বেছে নেন।
মেমোরিয়াল এর অন্যতম আকর্ষণ এর বাগান যা ইদানিংকালে প্রেমের স্বর্গরাজ্য বটে। ভিক্টোরিয়ার ঘাসে হাতে হাত ধরে দুজন যদি পা না ফেলে থাকেন, তাহলে বাকি জীবনে একসাথে অনেকগুলো পা হেঁটে যাবেন কী করে!