Breaking Bharat: মহানায়ক উত্তম কুমারের (Uttam Kumar) জীবনের শেষ দৃশ্যর নাটকীয় মুহূর্ত! কেমন ছিল? লাইট ক্যামেরা অ্যাকশনেই বুকে ব্যথা নিয়েও শেষবারের জন্য টেক দিলেন মহানায়ক! কেমন কেটেছিল মহানায়কের মৃত্যুর আগের চব্বিশ ঘণ্টা?
বাঙালির ম্যাটিনি আইডল চলে গেছেন বিনোদন জগতকে অন্ধকার করে দিয়ে। জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহটা বাঙালির কাছে ভারাক্রান্ত এক অনুভূতি আজও। তার সঙ্গে সিলেবাস স্ক্রিনে কত অনুরাগীর ‘সপ্তপদী’ যাত্রা। ‘চাওয়া পাওয়া’র হিসেব ছেড়ে দিয়ে ‘সন্ন্যাসী রাজা’ শেষ দিনেও সম্মান জানিয়েছিলেন নারীকে বলেছিলেন ‘ওগো বধূ সুন্দরী’।
সিনেমায় রোমান্সের ‘ মৌচাক’ আর ভালোবাসায় ভরা ‘বনপলাশীর পদাবলী’ যেন শেষ হলো হঠাৎ করেই। তিনি ‘ নায়ক’ তিনিই মহানায়ক। তাইতো যে রূপকথার গল্প তিনি উপহার দিয়েছিলেন বাংলা বিনোদন জগতকে সেই রূপ কথার মঞ্চেই তার শেষ বিদায়। কেমন ছিল সেই দিনটা? কী বলেছিলেন তার সহ অভিনেতারা?
বিদায় নিয়েছেন রূপকথার নায়ক উত্তম কুমার:
চিরদিনের মতো বাঙালিকে ছেড়ে বিদায় নিয়েছেন তার রূপকথার নায়ক? মহানায়কের মৃত্যু সংবাদে থমকে গেছিল রাজপথের গতি। যে যেখানে ছিল সেখান থেকে একবার শেষ প্রণাম জানাতে হাজির হয়েছিল মহানায়কের কাছে। অনেকেই পৌঁছতে পারেননি কিন্তু সেদিন অনেক বাড়িতে মহিলারা রাতে আর রান্না করতে পারেননি। চোখের জলে তখন তারা শয্যা নিয়েছেন, চলে গেছেন উত্তম (uttam kumar death reason)।
তারকার মৃত্যু হয় নিঃশব্দে। পৃথিবী থেকে তার আঁচটুকুও পাওয়া যায় না। আর এমন উজ্জ্বল তারকার মতোই মৃত্যু হয়েছিল ‘নায়ক’-এর অরিন্দম মুখার্জির চরিত্রাভিনেতার। বাঙালি যাঁকে চেনে উত্তমকুমার নামে। কাজটাকে ভালোবাসতেন পাগলের মত প্রথমে পড়া যায় তাকে হারাতে পারিনি। তিনি জিতে ছিলেন আর তাই তিনি টপে পৌঁছেছিলেন।
ওগো বধূ সুন্দরী (Ogo Bodhu Shundori) ছবির শুটিং তখন চলছে। শরীর ভালো নেই উত্তমের। গৌরী দেবী বারণ করলেন যেতে। কমল বনশাল প্রযোজিত ছবির কোন ক্ষতি যাতে না হয় তাই অসুস্থ শরীরেই স্টুডিওতে পৌঁছলেন অরুন কুমার। দিনটা ছিল ১৯৮০ সালের ২৩ জুলাই। সকাল সকাল নিয়মমাফিক পুজো সারলেন উত্তম।
তারপর খাওয়া-দাওয়া সেরে রওনা দিলেন স্টুডিওর দিকে। সঙ্গে ছিলেন প্রযোজক অসীম সরকার। একদিকে বাজারে প্রচুর দেনা, তার ওপর সুপ্রিয়া দেবী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। দুশ্চিন্তা যেন আর কাটে না। কিন্তু এত কিছুর মধ্যেও নিয়মমাফিক লৌকিকতা সারছেন তিনি।
প্রত্যেকবার ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালেই হয়ে উঠছেন এক অন্য জগতের মানুষ। তখন আর তিনি টলিজগতের চিরপরিচিত খাদ্যরসিক, আড্ডাপ্রিয় উত্তমকুমার নন। অভিনয়ের মুনশিয়ানায় তিনি তখন মহাকাব্য রচনা করেছেন। অকল্পনীয় অভিনয়ে ফুটিয়ে তুলছেন, ‘বাঘবন্দী খেলা’ বা ‘নগর দর্পণ’-এর চরিত্রদের। সেদিন গাড়িতে উঠতে গিয়ে প্রথম ধাক্কাটা খেলেন উত্তম।
তিনি দেখলেন, তাঁর বহু পুরনো টেপরেকর্ডারখানা গাড়ির ভেতর থেকে বেমালুম উধাও হয়ে গেছে। বুঝতে বাকি রইল না, যন্ত্রটা চুরি হয়েছে। তাঁর কত বছরের বন্ধু এই টেপরেকর্ডার। শুটিংয়ে যাওয়ার সময় প্রত্যেকদিন এই টেপরেকর্ডারে নিজের পছন্দ মতো গান বাজাতেন তিনি। আজ তার অনুপস্থিতি যেন সত্যিই বন্ধু-বিচ্ছেদের মতো। বিষণ্ণ হয়ে পড়লেন উত্তম।
স্টুডিওতেও সারাদিন আনমনা হয়ে রইলেন। হয়তো শেষ হয়ে যাবেন তিনি এটা বোঝেন নি , কিন্তু শেষের শুরু হয়েছে এটা আঁচ করতে পেরেছিলেন। মেক আপ শেষ ,ডাক পড়ল শুটিং ফ্লোরে। দৃশ্যটা ছিল সুমিত্রা মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন আর উত্তমকুমার দাড়ি কামাতে কামাতে ডায়ালগ বলছেন।
আরো পড়ুন- Temple : পদ্মনাভস্বামী মন্দিরে যাব পুজো দিতে কিন্তু সেখানেও বিধি নিষেধ! বিশেষ পোশাক? কেন?
‘আমিও দেখে নেব, আমার নাম গগন সেন…।’ দৃশ্য হলো পরিকল্পনামাফিক। উত্তমকুমার সংলাপও বললেন। কিন্তু দৃশ্য শেষ হওয়ামাত্র অসুস্থ হয়ে পড়লেন। বুকে ব্যথা শুরু হয়েছিল আগেই। শট দিতে দিতে একহাতে বুক চেপে ধরেছিলেন তিনি। কিন্তু একবারের জন্যও সংলাপ থামাননি।
আরো পড়ুন- Game addiction : সর্বনাশা গেমের নেশা আপনাকে সন্তানের থেকে দূরে সরাচ্ছে না তো? সতর্ক হোন!
এবার সিনেমার ওই দৃশ্য দেখার সময় লক্ষ্য করবেন উত্তমবাবুর বুক চেপে ধরার কথা। বাড়ি ফিরে শান্তি নেই , বন্ধুর বাড়িতে নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে যেতে হয়েছিল। বন্ধুর বাড়ি থেকে ফেরার পর রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গর্তে থাকে অসুস্থতা। বাড়ির লোকেরা সঙ্গে সঙ্গেই দক্ষিণ কলকাতার ‘বেলভিউ’ নার্সিংহোমে তাঁকে ভর্তি করালেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। চব্বিশ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই চলে গেলেন মহানায়ক (Uttam Kumar)।
আরো পড়ুন- People : আজকের দিনে ভাল মানুষের বড় অভাব, সৎপথে চলতে বড়ই কষ্ট হয়! কি করবেন ?
দুনিয়াকে বিদায় জানাতে গিয়ে তিনি বলতে পারেন নি ‘পথে হল দেরি’ , ‘একটি রাত’ বদলে দিল বাংলা সিনেমাকে। ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ টা স্মৃতি ‘দেয়া নেয়া’ র হিসেব- সবশেষ। স্বর্ণযুগের এক মহাকাব্যিক অধ্যায়ের অবসান ঘটিয়ে সেদিন চলে গিয়েছিলেন উত্তম কুমার।
ক্লোজ শট’-এ ধরা আছে তাঁর মুখ। চোখে হালফ্যাশনের সানগ্লাস। ঠোঁটে জ্বলন্ত ফাইভ ফিফটি ফাইভ সিগারেট। না ফেরার দেশে চলে যাওয়ার রাস্তা ফুরোলো না। হয়তো যেতে যেতেই বললেন ,”এই পথ যদি না শেষ হয়, তবে কেমন হতো তুমি বলতো”