Breaking Bharat: নিরুদ্দেশে যেতে চান? ত্রিস্তান ডি কুনহা (Tristan da Cunha) হতে পারে আপনার ডেস্টিনেশন, গেলে আর ফিরবেন না! জীবনের পথে চলতে চলতে কখনও থমকে যেতে ইচ্ছে হয়। তখন মনে হয় হারিয়ে যাই, সব ছেড়ে চলে যাই অনেক দূরে। তাহলে আপনাকে বলতে হয় ত্রিস্তান ডি কুনহার নাম।
এটা এমন এক জায়গা যেখান থেকে আপনি আর কিছুতেই ফিরতে পারবেন না। শুনে একটু অবাক হচ্ছেন? ভাবছেন ২০২২ সালে দাঁড়িয়ে এমন রহস্য পৃথিবীতে আছে বুঝি? আসলে ঠিক রহস্য নয় এমন এক বাস্তব যা চিরাচরিত লোক চক্ষুর একটু অন্তরালে।
প্রথমেই জায়গার ভৌগোলিক পরিচয় একটু দিয়ে দেওয়া যাক। বিক্ষুব্ধ অতলান্তিক মহাসাগরের একটি দ্বীপ, যা ব্রিটিশ শাসিত একটি অঞ্চল, সেটিই হলো এই ত্রিস্তান ডি কুনহা। এখানে যাওয়া খুবই সময়সাপক্ষ এবং কষ্টকর। এই দ্বীপটি পৃথিবীর প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত।
প্রতিবেদনের শুরুতেই বলে দিই যাওয়ার আগে ভেবে নিন এখানে গেলে আর ফেরার কোন উপায় নেই। তাই অনেক ভাবনা-চিন্তা করে তারপর কোনও সিদ্ধান্তে উপনীত হবেন। চেনা জীবনের এক ঘেয়েমি মাঝেমধ্যেই অনেক দূরে নিয়ে যাবার ভাবনাকে প্রশ্রয় দেয়।
আজ যে জায়গার কথা বলা হচ্ছে, সেই স্থানে যেতে গেলে প্রথমে প্লেনে করে যেতে হবে দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে। সেখান থেকে যেতে হবে নৌকাতে। সময় লাগবে কমপক্ষে ১৮ দিন। তাও যদি সমুদ্র ততটা উত্তাল না থাকে। এখানেই শেষ নয়, দ্বীপ টি দেখতে পাবার ক্ষেত্রে একটা বড় প্রশ্ন চিহ্ন আছে।
এই অঞ্চলের ভৌগোলিক গঠন এমনই যে প্রায় সারাক্ষণই কুয়াশা দ্বারা আবৃত থাকে। তাই কতক্ষণে কুয়াশা কাটবে তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আপনাকে। কুয়াশা কেটে গেলে দ্বীপটি দৃশ্যমান হবার সম্ভাবনা থাকে। সমুদ্রে পাড়ি দিতে দু জন্য অপেক্ষা করতে হবে। এখানে আরও একটা বিষয় বলার মত।
আপনি নৌকো নিয়ে যেতে পারবেন তখনই যখন হাওয়ার গতিবেগ কম থাকবে। হাওয়ার গতিবেগ বেশি হলে উত্তাল সমুদ্রে আপনার দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা প্রায় ৯৯%। তারপর সমুদ্রের তীরে পৌঁছে নৌকাটিকে তীরে এনে ভালভাবে বাঁধতে হবে,অন্যথায় ঢেউয়ের দাপুটে সেটি ভেঙে যেতে পারে।
আরো পড়ুন- Skin Problems : ত্বকের সমস্যা? দেখতে খারাপ লাগছে? ক্রিম মেখে মুখের দাগ দূর করবেন?
দ্রুতগামী নৌকা পেতে পারেন কিন্তু সেখানে আসনসংখ্যা সীমিত। বছরে মাত্র একবারই মাত্র নৌকাটি যাতায়াত করে। সমুদ্রপথে কেপ টাউন থেকে দূরত্ব ২৮১০ কিলোমিটার। তাতে যেতে সময় লাগবে 6 ঘন্টারও বেশি ।
এত কাণ্ড করে অজানা অচেনা একটা দ্বীপে পৌঁছে আপনি কী দেখবেন, জনসমুদ্র না জনশূন্যতা কী মনে হয়? প্রথমে বললে হয়তো একটু অবাক হতে পারেন, কিন্তু বিশ্বাস করুন একটুও বাড়িয়ে বলছি না। দ্বীপটি ছোট হলেও এখানে আছে একটি কফি শপ ও একটি বড় হলঘর আছে।
আরো পড়ুন- Red Indian : রেড ইন্ডিয়ান কারা ? আমরা এ সমস্ত খাদ্যের জন্যই কিন্তু রেড ইন্ডিয়ানদের কাছে ঋণী।
এই হলঘরটি বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান এবং বিয়ের অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত হয়।এখানে বসতি আছে। এছাড়া, মাছ ধরার জাহাজ লিফ্ট দিলে সেখানে যাওয়া যায়। ভিতরে প্রবেশ করলে দেখা যাবে সেখানকার অধিবাসী। জনসংখ্যা মাত্র ২৫০ জন। তার মধ্যে পুরুষের সংখ্যা বেশি এবং নারীর সংখ্যা তুলনামূলক কম।
আরো পড়ুন- Flower : প্রায় ১৮৮ বছর আগে চিরকালের মতো শেষ হয়ে গেছিল, সে আবার ফিরে এলো পুনর্জন্ম নিয়ে।
পাকা রাস্তা, আধুনিক হাসপাতাল, স্কুল, পোস্ট অফিস সবই আছে এখানে। মানে জীবনধারণের জন্য যা যা দরকার কোন কিছুর সেভাবেই অভাব নেই। এখন প্রশ্ন এখানে কেউ গেলেই কেন ফিরে আসে না? এখানেই রয়েছে আশ্চর্যজনক রহস্য।
এখানকার অধিবাসীরা একটি নিয়ম মেনে চলেন তা হল, এই দ্বীপে যারা থাকবেন তাদেরকে চিরকাল এখানেই থাকতে হবে, এখানেই বিয়ে করতে হবে এবং জীবনের শেষ নিঃশ্বাস এখানেই ত্যাগ করতে হবে। ফিরে যাওয়ার কোন অবকাশ কিন্তু আপনি পাবেন না।
আরো পড়ুন- Nurse : হাসপাতালের নার্স বা সেবিকাদের কী চোখে দেখি আমরা? নার্সদের কখনো নিচু চোখে দেখবেন না!
জানেন, সারা বিশ্ব যখন করোনা নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে ,তখন এখানে করোনা কোনোভাবেই প্রবেশ করতে পারিনি । বছর দুই আগেও না,এখনো না। এখানকার অধিবাসীদের গণমাধ্যম হিসাবে ওয়েবসাইট আছে, যেখানে জন্ম, মৃত্যু ইত্যাদি খবরের আপডেট করা হয়।
অর্থাৎ চেনা জগতে ফিরে আসার রাস্তা পুরো বন্ধ। ওখানেই নিজের চেনা জগত বানাতে হবে আপনাকে। রাজি থাকলে বিমানের টিকিট কেটে ফেলুন আর চলে যান, পৃথিবীর কেউ আপনাকে আর খুঁজে পাবে না।