Breaking Bharat: তোতলামির সমস্যা? কথা বলতে গিয়ে যদি তোতলামির সমস্যা (Stuttering problem) হয় তাহলে কি করবেন? কথা বলা মানুষের অভ্যাস, কিন্তু সেই কথা বলতে গিয়ে যদি সমস্যা হয়? আপনি কি এইরকম কোনও অবস্থায় পড়েছেন?
সহানুভূতি আর সমালোচনার কম্বো প্যাক কখনও আপনার জীবন তছনছ করে দিয়েছে? এমন ঘটনা ঘটলে পৃথিবীর কাছে নিজেকে বড্ড ছোটো মনে হয় জানেন। অথচ এই ঘটনার সাক্ষী হাজার হাজার মানুষ। প্রতিদিন তারা এভাবেই বাঁচার ইচ্ছে থেকে একটু একটু করে দূরে সরে যাচ্ছে।
আজ তাদেরই এক সমস্যার কথা বলব আমরা কারণ তারা সঠিক ভাবে সবাইকে তা বলে বোঝাতে পারে না। এটাই হল সমস্যা, ঠিক ভাবে বলতে না পারা। এতক্ষণে হয়তো একটা আইডিয়া করতে পারছেন আজ কাদের কথা বা কোন সমস্যার কথা বলছি। ঠিক ধরেছেন সাদা বাংলা ভাষায় যাদেরকে সবাই তোতলা বলে। আজ সেই তোতলামির সমস্যা নিয়ে কথা।
মানব সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার কিছু বছর পর থেকে কথা বলতে শুরু করে। যত বয়স বাড়ে কথা পরিস্কার হয় এবং স্বাভাবিক মানুষের মত বাক-আচরণ দেখা যায়। কিন্তু অনেকেই একটা বাক্য সঠিকভাবে একটানা বলতে পারেন না মাঝেমধ্যেই আটকে যেতে হয়।
এটা তারা ইচ্ছাকৃত করেন এমনটা নয় এটা একটি রোগের বহিঃপ্রকাশ। তোতলামির কারণে এমনটা হয়।যাদের এই সমস্যা রয়েছে তাদের মুখ থেকে শব্দ বের হতে সময় নেয়৷ যার জেরে তারা ফোনে বা জনসমাগমে নিজেদেরকে গুটিয়ে রাখেন ,তারা ভাবেন তারা অবাঞ্ছিত।
কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করতে চান না৷ তারা একলা পথ চলতে পছন্দ করেন। আবার এই সমস্যার ভূক্তভোগী কিছু কিছু শব্দ বা পরিস্থিতিও এড়িয়ে চলেন৷ কেউ ইচ্ছে করে তো এমনটা করেনা নিশ্চয়ই এর পেছনে কোনও কারণ আছে। আজ বিজ্ঞানসম্মত কারণ এবং এই সমস্যা সমাধানের উপায় জানার চেষ্টা থাকবে আমাদের।
এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় নিওরোলজিস্টরা বলেন, কথা বলতে গেলে যেসব অঙ্গ প্রত্যঙ্গ প্রয়োজন যেমন জিভ, তালু, গলার পেশি ইত্যাদি ঠিকমতো বশে থাকে না বলে তোতলাতে হয়। আবার মস্তিষ্কের বেশ কয়েকটি অংশ থেকে মানুষের কথা বলা নিয়ন্ত্রিত হয়। আর এসব অংশে সমস্যা থাকলেও কথা বলা সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের রোগ হতে পারে।
কোন কোন কারণের জন্য তোতলামির সমস্যা হয়?
তোতলামির একাধিক কারণ রয়েছে (several causes of stuttering)। জেনেটিক কারণে তোতলামি সমস্যা দেখা দিতে পারে। বাবা-মায়ের যদি তোতলামি সমস্যা থেকে থাকে সে ক্ষেত্রে সন্তানেরও হতে পারে। তোতলামি নিউরোজেনিক কারণেও হতে পারে।
যেমন ধরুন ছোটবেলায় যদি কেউ মাথায় গুরুতর আঘাত পায়, তা থেকেও কথা বলার সমস্যা দেখা দিতে পারে। শিশুকে ছোটবেলায় যদি কথা বলার জন্য বেশি চাপ সৃষ্টি করা হয়, সেক্ষেত্রে শিশুটির মধ্যে তোতলামো ভাব আসতে পারে। আবার বেশি বয়সেও তোতলামি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
তবে সমস্যা হলো মানেই আজীবন তা আপনার সঙ্গে থাকবে এমনটা নয়। চিকিৎসকরা বলেন, সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি মেনে চললে তোতলামি সম্পূর্ণ ভালো হয় (Stuttering is completely fine)। এবার তাহলে দেখে নেওয়া যাক যে কী কী উপায়ে সমস্যার সমাধান করা যায় । তোতলামির একমাত্র চিকিৎসা হলো থেরাপী (Treatment of stuttering)। থেরাপির তিনটি ভাগ ইন্ডিভিজুয়াল থেরাপি, গ্রুপ থেরাপি এবং কাউন্সেলিং থেরাপি। বিস্তারিত জানাই এই বিষয়ে।
প্রথম দুটি অর্থাৎ ইন্ডিভিজুয়াল থেরাপি, গ্রুপ থেরাপি আসলে স্পিচ থেরাপির অংশ।স্পিচ থেরাপি এমন একটা সিস্টেম যার দ্বারা রেট অব স্পিচ কমানো হয়। এর দ্বারা ব্রিদিং প্যাটার্ন ঠিক করা হয়, মাসল টেনশন কমানো হয় এবং মনোবল বাড়ানো হয়।
পুরো বিষয়টাই মিডভ্যাস পদ্ধতিতে কাজ করে। তবে নিজে থেকে কিছু উপায় অবলম্বন করলে কিন্তু এই সমস্যা অনেকটা এড়ানোর সম্ভব। এই যেমন ধরুন,দৈনন্দিন কাজকর্মে অসুবিধাগুলো কীভাবে কাটানো যায়, সেদিকে দৃষ্টি দেওয়া হয়৷
আরো পড়ুন- Computer : কম্পিউটারের এই কোর্স গুলো ভালো করে শিখে রাখুন ভবিষ্যতে কাজে লাগবে
যেসব শব্দ বলতে গেলে আটকে যায়, সেগুলোকে পাশ কাটিয়ে অন্য শব্দ নেওয়া যেতে পারে৷ আবার ধরুন, কণ্ঠস্বর নরম করে কথা বলা৷ এইভাবে কথা বললে তোতলামিটা থাকে না (There is no stuttering)। নিজের সমস্যা আছে বলে কথা বলা কেড়িয়ে গেলে চলবে না বরং বেশি করে কথা বলতে হবে ।
আরো পড়ুন- Baby: সন্তান বাবা-মা দুজনেরই ,কিন্তু বাবাকে ছাড়াই সন্তান জন্ম দিতে পারবে মা? এও কি সম্ভব?
বড় বড় বাক্য নিজের মতো করে ছোট ছোট করে ভেঙে নিয়ে তা সম্পূর্ণ করতে হবে। তোতলানোর সময় মস্তিষ্কের এক অংশ অন্য অংশের সমস্যা কাটাতে চেষ্টা করে৷ আর তাই গানের মাধ্যমেও তোতলামিকে আয়ত্তে আনা যায় (Stuttering can be controlled)৷
আরো পড়ুন- Film industry : সিনেমায় অভিনয় করার স্বপ্ন দেখেন? ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে নেপোটিজম বলতে কি বোঝায়?
কেননা সংগীত ও গানের জগৎ থাকে মস্তিষ্কের ডান দিকে৷ আর বাঁ দিকে থাকে কথার এলাকা৷ তাই গান গাইতে কোনো অসুবিধা হয় না৷ এভাবে নিয়মিত গানের চর্চা করলেও এক সময় তোতলামো সমস্যা কাটিয়ে ওঠা যায়।
এ বিষয়ে বলে রাখা দরকার মা বাবা ছোট থেকে সন্তানকে ভালো করে লক্ষ্য করুন। তার মধ্যে কথা বলার ক্ষেত্রে কোন অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে এড়িয়ে যাবেন না, তখনই ডাক্তারি পরামর্শ নিন । তাতে বড় হওয়ার পর বিপদ বা সমস্যা বাড়বে না।