Breaking Bharat: বড়দিনে ‘কেক’ খেতে ভালোবাসেন? কেক ছাড়া কেন ২৫ ডিসেম্বর উদযাপন করা যায় না বলুন তো?
প্রত্যেক বছর বড়দিন আসা মানে সকাল থেকে চার্চে মানুষের ভিড় আর ব্রেকফাস্ট মানে এক টুকরো কেক। কিন্তু ওই কেকের সঙ্গে বড়দিনের সম্পর্কটা ঠিক কী ভাবে জুড়ে গেল সেটা সম্পর্কে খুব কম মানুষই জানেন। এমনিতেই আমরা বারোমাসই কোনো না কোনো অনুষ্ঠানে কেক কেটে থাকি সেটা জন্মদিন হোক কিংবা বিবাহ বার্ষিকী।
সে ক্ষেত্রে নানা রকমের কাস্টমাইজ কেক পাওয়া যায় অথবা ক্রিম কেকের দিকে আমাদের নজর যায়। কিন্তু অন্যান্য কাজে বা সেলিব্রেশন উপলক্ষ্যে যতই আপনি কেক খান না কেন বড়দিনের কেক মানেই সেখানে একটা আলাদা বিশেষত্ব থাকবে। এই দিনটাতে বিশেষ করে ফ্রুট কেকের প্রতি মানুষের আগ্রহ বেশি দেখা যায়। ঠিক কোন পথ ধরে এই ‘কেক আর যীশু খ্রীষ্টের সম্পর্ক স্থাপন‘ হয়ে গেল সেটাই এবার একটু জানার চেষ্টা করব।
ক্যালেন্ডার এর হিসেবে ২৫ ডিসেম্বর তারিখের সঙ্গে কেকের একটা সম্পর্ক থাকলেও সেখানে ভারতীয় কোন কানেকশন কিন্তু প্রাথমিকভাবে পাওয়া যায় না। মূলত এই কেকের সঙ্গে ইংরেজদের সম্পর্কটা বড্ড বেশি জোরালো। ইতিহাসের পাতা উল্টাতে পারলে এই সম্পর্কিত ধারণা একটু স্পষ্ট হবে।
বড়দিনে আমরা কেক খাই কেন?
ইতিহাস বলছে ৩৩৬ সালে রোমান সম্রাট কনস্টানটাইনের আমলে প্রথম ক্রিসমাস বড়দিন পালন করা হয়। তখন অবশ্য ক্রিসমাসে কেক খাওয়া হত না। এই রীতি অনেক পরে শুরু হয়। আসলে ‘ক্রিসমাস‘ পালন যখন শুরু হয় তখন তখন কেক ছিল না, ছিল ‘প্লাম পরিজ‘।
একটা সময় ছিল যখন ক্রিসমাসের আগের দিন উপোস করা হতো, একদিন উপবাসের পরে বড়দিনের ঠিক আগে ইংরেজরা পরিজ খেয়ে উপবাস ভাঙতেন । সেই রীতি বেশ কিছু সময় চলার পর আসে পরিবর্তন। ক্রিয়েটিভিটির ছোঁয়া লেগে পরিজের মিশ্রণে শুকনো ফল, মশলা ও মধু মিশিয়ে সেটি ক্রিসমাস পুডিংয়ের আকার নেয়।
কেক কালক্রমে ‘ক্রিসমাস কেক’ নামে পরিচিতি:
এবার চলে আসা যাক১৬ শতকে। সেই সময় ক্রিসমাসের কেক বা পুডিঙের রেসিপি থেকে ওটমিল বাদ যায়, তার পরিবর্তে যোগ হয় ৩ উপাদান- মাখন, ময়দা ও ডিম। ব্যাস এই উপকরণগুলি যোগ হওয়াতে পরবর্তীতে প্লাম কেক তৈরি করা সহজ হয়ে যায়।
আরো পড়ুন – সমাজের খারাপ দিকগুলো কতটা প্রভাবিত করে আপনার জীবনকে?
এবার যে সব পরিবারে ওভেন ছিল, তাঁরা ইস্টারের জন্য মারজিপ্যান বা অ্যালমন্ড সুগার পেস্ট ব্যবহার করে নতুন কিছু তৈরির আশায় ফ্রুট কেক তৈরি করতে শুরু করে। এই ধরনেরই কেক কালক্রমে ‘ক্রিসমাস কেক’ (the traditional Christmas cake) নামে পরিচিতি পায়। এবার কলকাতার সংস্কৃতিতে যোগ হয় কেক মিক্সিং পর্ব।
ব্যাস ঠিক পুজোর আগে যেমন প্রতিমার কাঠামো তৈরি হয় এটাও যেন ঠিক সেরকমই একটা ব্যাপার। কেক তৈরি করার পর নানা ধরনের উপাদান তার মধ্যে যোগ করে সেটা কতটা সুন্দর আর টেস্টি করে তোলা যায় সেই নিয়ে নানা ধরনের এক্সপেরিমেন্ট চলতে থাকে।
আরো পড়ুন – ক্যান্ডি ফ্লস’ বা ‘কটন ক্যান্ডি’ কিংবা ‘স্পুন সুগার’ বা বুড়ির চুলের আসল রহস্য কি?
মানে বড় একটা ক্রিসমাস কেক এবং পুডিংয়ের নানা রকমের ফল, বাদাম, মোরব্বা ডাঁই করার প্রস্তুতিকে কেন্দ্র করে শুরু হয় খ্রিস্ট বরণের উৎসব। বিভিন্ন ধরনের অ্যালকোহল যেমন রাম, ব্র্যান্ডি, নানা রকমের ওয়াইন, সিরাপে মাস দু’য়েক ধরে মজানো হয় ক্রিসমাস কেক বা পুডিংয়ের এ সব উপকরণ।
আরো পড়ুন – ১৯০ বছরের জন্মদিন সেলিব্রেশন ব্যাপারটা শুনেছেন? আহা, বয়স তো সংখ্যা মাত্র !
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম ভাবে এই কেক তৈরি করা হয়।ইতালিতে বড়দিনে প্যানেটোন নামে এক বিশেষ ধরনের কেক বানানো হয়। মিষ্টি নয় বরং এর স্বাদ একটু টক। সাইপ্রাসে আবার বড়দিনে স্থানীয় মানুষ অতিথিদের সাইপ্রিয়ট কেক খাওয়ানোর রীতি আছে। জাপানের ক্রিসমাস কেক ফ্রস্টেড স্পঞ্জি। এতে থাকে স্ট্রবেরি, চকোলেট আর ফল। আমেরিকাতে অবশ্য ফ্রুট কেক খাওয়ানো হয়। তাহলে এই বড়দিনে আপনার পছন্দ কোন কেক?