Breaking Bharat: ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়? হাত ছাড়াই বিমান চালিয়ে এই প্রবাদ কে সত্যি করেছেন জেসিকা! কিন্তু কী করে?
মানুষের ইচ্ছা শক্তি জোর সব থেকে বেশি। চাইলে আকাশকেও ছোঁয়া যায়। এটাই যেন সত্যি করে দেখিয়েছেন জেসিকা। জন্ম গত ত্রুটি নিয়ে অনেক মানুষ বেড়ে ওঠেন,এতে কারোর হাত থাকে না। কিন্তু তাই বলে নিজেকে আর চার পাঁচ জনের থেকে পিছিয়ে রাখার কোন মানেই হয় না। দুটো হাত না থাকা সত্ত্বেও বিমান উড়িয়ে সে কথাই প্রমাণ করেছেন ‘জেসিকা কক্স‘ (The Success Story of Jessica Cox)।
জেসিকা কক্স, যিনি দু’পা দিয়ে চালান যুদ্ধ বিমান:
কাজটা সহজ ছিল না। আয় ইতিহাসের পাতায় নাম তুলতে গেলে, অন্যের অনুপ্রেরণা হতে গেলে দুঃসাধ্য কাজেই বাজিমাত করতে হয়। কথায় আছে sky is not the limit but mind is. তাই মনকে সেই ক্ষমতায় পৌছাতে হবে যেখানে শরীর কোন বাধা সৃষ্টি করতে পারবেনা। আর এখানেই স্পেশাল হয়ে ওঠে জেসিকার গল্পটা। বিমান আকাশে উড়ানো ছেলে খেলা নয়।
অন্যান্য যে কোন কাজকে ছোট না করেই বলা যায় যে প্লেন চালানো কঠিন একটা কাজ। কারণেই পেশার সঙ্গে দৃষ্টিশক্তি-শারীরিক সক্ষমতার মতো অনেকগুলি জরুরি বিষয় জড়িয়ে আছে। কিন্তু যেখানে অদম্য জেদ লুকিয়ে থাকে সেখানে অন্য কিছুই আর থমকে দিতে পারেনা গতিপথ।
আর তাই ‘জেসিকা কক্স‘ হয়ে উঠেছেন আমাদের কাছে উদাহরণ। এমন নয় যে তার যাত্রাপথ মসৃণ ছিল।তাঁর জন্ম ১৯৮৩ সালে আমেরিকার অ্যারিজোনায় । মায়ের কোন জটিলতা থাকার কারণে আর চার পাঁচটা স্বাভাবিক বাচ্চার মতো জন্ম হয়নি জেসিকার। জন্মের পর দেখা যায় তার দুটো হাত নেই। তবে সেই কারণে তাকে পরিবারের থেকে আলাদা করে রাখেননি কেউই।
পৃথিবীর প্রথম হাতহীন পাইলট:
সাধারণ বাচ্চাদের মতো দেখা হয়েছে তাকে। পরিবার সূত্রে জানা যায় তিন ভাইবোনের মধ্যে জেসিকা কক্স মেজোজন। হাত নেই বলে তাকে কখনও আলাদা করে দেখা হয়নি। জেসিকার যখন ১১ বছর বয়সে তখন কৃত্রিম হাত লাগিয়ে দিয়েছিল বাবা-মা। কিন্তু এই ঘটনা মেনে নিতে পারেনি জেসিকা।
তাই জেদ চেপে গেছিল,সেখানে থেকেই মাত্র ১৪ বছর বয়সে কৃত্রিম হাতদুটো খুলে প্রথম ডানা মেলে ওড়ার লড়াই শুরু করেন ‘জেসিকা কক্স‘। স্কুলে নানা ধরনের অপমান সহ্য করতে করতে জেদ চেপে গেছিল মনে। আর সেই থেকেই নাচ থেকে মার্শাল আর্ট শিখে ফেলেন নিজের চেষ্টায়। প্রতিবন্ধকতাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই গাড়ি চালানো, পিয়ানো বাজানো।
কিন্তু স্বপ্ন শুধুই আকাশ ছোঁয়ার। উচ্চতায় একটু সমস্যা আছে বুঝতে পারলেন তিনি। বোঝেন অনেকটা ভার্টিগো রোগের মত উপরে উঠলেই তার আতঙ্ক চেপে ধরে তাকে। কিন্তু ভয়কে গুরুত্ব দেন নি বরং তাকে জয় করতে উদ্যত হয়েছিলেন। আর এর পেছনে ছিলেন তার বাবা যিনি অনুপ্রেরণা হিসেবে জেসিকা কে সামনে এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ আর সমর্থন দেন।
মনোবিজ্ঞানে গ্রাজুয়েশন করার পর ‘রাইট ফ্লাইট’ নামের একটি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেন জেসিকা ও তার বাবা। প্রাক্তন যুদ্ধবিমানচালক ও সংস্থার মালিক রবিন স্টেডার্ড মেয়েটির এই অদম্য ইচ্ছা দেখে নিজেই প্রশিক্ষণের দায়িত্ব নেন। লড়াই চলে প্রশিক্ষণ চলে নানা ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে মেয়েটাকে এগিয়ে যেতে হয়।
কিন্তু যিনি সত্যি সত্যি প্রতিভার অধিকারী আর যার মধ্যে ইচ্ছে আছে ঈশ্বর তাকে বিমুখ করেন না। তাই ২০০৮ সালের ১০ অক্টোবর পাইলট হওয়ার পূর্ণ লাইসেন্স পেয়ে যান লড়াকু মেয়ে জেসিকা। ২০১১ নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিমান চালক হিসেবে সেনাবাহিনীতে নাম লেখান জেসিকা।
৩৭ বছরের এই মহিলা পাইলট এখন সেখানেই কর্মরত। জেসিকা দুই পা দিয়ে কীভাবে বিমান চালান ? উত্তরে তিনি জানান, বাম পা দিয়ে সামলান আর ডান পা ব্যবহার করে ইওক হ্যান্ডেল করতে। এভাবে দিব্যি ফ্লাইট নিরাপদে ল্যান্ড করান। তিনি করে দেখিয়েছেন যে ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়।