Breaking Bharat: ক্যান্ডি ফ্লস’ বা ‘কটন ক্যান্ডি’ কিংবা ‘স্পুন সুগার’ বা বুড়ির চুলের আসল রহস্য কি?
ছোটবেলা থেকে পছন্দের খাবার গুলোর মধ্যে একটা হচ্ছে হাওয়াই মিঠাই। মুখে দিতে না দিতেই একটা আলাদা স্বাদ দেখতে ভীষণ আকর্ষণীয়। শীতের অলস দুপুরে একবার সাদা গোলাপী বুড়ির চুল একবার দেখলেই সেই ছোটবেলায় ফিরে যাওয়া মন। হকারের হাতে একটা বড় লাঠি আর তার মাথায় গোঁজা থাকত প্যাকেট প্যাকেট সব নানা রঙের মেঘ।
হাওয়াই মিঠাই বা বুড়ির চুল:
হকারের লম্বা কাঠির মধ্যে ‘হাওয়াই মিঠাই বা বুড়ির চুল‘ নিয়ে বিক্রি করতে আসা। ছোটবেলার সেই দিনগুলো ভীষণ মনে করিয়ে দেয় ফেলে আসা নস্টালজিক মুহূর্তের কথা। ক্যান্ডি ফ্লস’ বা ‘কটন ক্যান্ডি’ কিংবা ‘স্পুন সুগার’ এইসব তো আজকাল হয়েছে। আগেকার দিনে পুরোটাই ছিল বুড়ির চুল (The History of Cotton Candy)।
চলুন এবার ইতিহাসের পাতায় চোখ দেওয়া যাক। যেটুকু জানা যায় তা হল প্রায় ১৫০০ শতকেও হাওয়াই মিঠাইয়ের চল ছিল। মনে করা হয় সেসময় একজন ইতালীয় রাঁধুনি চিনির সিরাকে কাঁটা চামচ দিয়ে টেনে সুতোর মতো তৈরি করে সেটা দিয়ে ‘হাওয়াই মিঠাই‘ তৈরি করেছিলেন বলেন জানা যায়।
অবশ্য এটার তবে তা ছিল একেবারে প্রথম ধাপ। এর প্রায় ১০০ বছর পর, ১৬০০ শতকে ফ্রান্সের সম্রাট তৃতীয় হেনরিকে ভেনিস ভ্রমণের সময় বিভিন্ন রকম মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়েছিল। এর মধ্যে আকর্ষণ ছিল স্পুন-সুগার ভোজের। মোট ১,২৮৬ টি খাবার পরিবেশন করা হয়েছিল এমনকি একটি টেবিলক্লথও তৈরি হয়েছিল ওই চিনি জ্বাল দিয়ে দিয়েই।
ভাবতে পারেন তখনকার চিন্তাভাবনা কত আধুনিক হতে পারে। তবে আধুনিক ক্যান্ডি ফ্লসের জন্ম আমেরিকাতে। উইলিয়াম মরিসন নামে এক চিকিৎসকের মস্তিষ্ক প্রসূত ছিল এই ভাবনা। বন্ধু ময়রা জন ওয়ারটনকে তিনি এই পরিকল্পনার কথা জানান। মানে মিষ্টি তৈরির এই ভাবনাকে বাস্তবায়িত করার পরিকল্পনা হয়। ১৮৯৭ সালে মরিসন ও ওয়ারটন পরীক্ষামূলকভাবে এই রকম মিষ্টি তৈরির মেশিন বানান।
কিভাবে হাওয়াই মিঠাই তৈরি করবেন?
যদিও সাফল্য এসেছিল ১৯০৪ সালে সেন্ট লুইস বিশ্বমেলায়। আসলে মনে করা হয় সাদা সাদা ফোলা ফোলা জিনিসটাকে দেখে পরীদের দেশের মেঘ বলেই মনে হত, তাই এমন নাম। ফেয়ারি ফ্লস নামে এই জিনিসের বাক্স প্রতি দাম রাখা হয়েছিল ২৫ সেন্ট। এবং এই মেলা থেকে প্রায় ১৮ হাজার ডলারের কাছাকাছি আয় করতে পেরেছিলেন মরিসন ও ওয়ারটন। এরপরই জনপ্রিয়তা পায় এই হাওয়াই মিঠাই।
আরো পড়ুন – ১৯০ বছরের জন্মদিন সেলিব্রেশন ব্যাপারটা শুনেছেন? আহা, বয়স তো সংখ্যা মাত্র !
আসলে হাওয়াই মিঠাই তৈরির কে যন্ত্র তার নিচের অংশে একটি মোটরচালিত চুলার মতো থাকে। চিনিকে তাপ দিয়ে এখানেই গলিয়ে ঘন ক্যারামেলে পরিণত করা হয়। এরপর ফুড কালার আর বিশেষ গন্ধ ও স্বাদের জন্য নানা সুগন্ধিও ব্যবহার করা হয়।
আরো পড়ুন – লোকনাথ বাবার জন্মস্থান নিয়ে দ্বিমত আছে, আপনিও কি এই বিষয়ে একমত?
এবার যন্ত্রের ওপরের অংশে মোটরের সাহায্যে একটি চাকা প্রচণ্ড বেগে ঘুরতে থাকে। একটি অতি সূক্ষ্ম ছিদ্রযুক্ত পাতলা স্টিলের পাত দিয়ে চাকাটিকে আবৃত থাকে। গরম ঘন ক্যারামেল ছিদ্রযুক্ত সেই লোহার পাত দিয়ে যখন বের হওয়ার সময় সেই গতিতে অনেক সূক্ষ্ম সুতার মতো বের হয়।
আরো পড়ুন – বিশ্বের সবথেকে শিক্ষিত ব্যক্তি কে? তিনি কুড়িবার স্নাতক হয়েছেন ভাবতে পারেন?
আর বাইরের বাতাসের স্পর্শে আসা মাত্রই ঠান্ডা হয়ে যায়। এরপর একটা সরু কাঠি দিয়ে সুন্দর করে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে পাওয়া যায় হাওয়াই মিঠাই। যারা ভাবেন প্রচুর চিনি খাওয়া হবে এটা খেলে তারা ভুল। কারণ বিজ্ঞান বলছে সাধারণত এক কাঠিতে মাত্র ৩০ গ্রামের মতো চিনি থাকে। তাই খান ভালোবেসে খান।