Breaking Bharat: রেলগাড়িতে চলাফেরা করেন? দেশে কোন মহিলার নামে প্রথম রেলস্টেশন! রেলস্টেশনের অদ্ভুত নামের মাঝেও কোন এক স্টেশনে এক মহীয়সী নারীর নামাঙ্কিত স্টেশন চোখে পড়েছে কি?
“কু ঝিক ঝিক শব্দ শুনে লম্বা সফর শুরু,
কাছে হোক বা দূরে গন্তব্যে পাড়ি দিতে মনটা উরু উরু।” রেলগাড়িতে চড়তে গেলে প্রথমেই যেন এই কথাগুলোই চোখের সামনে ভেসে ওঠে। যদি এমনটা নয় যে বেড়াতে যাওয়ার অবসর মিললেই ট্রেনে করে যাওয়া যায়। কারণ ট্রেন মানেই এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ট্রাফিক জ্যাম এড়িয়ে দ্রুত পৌঁছে যাওয়া।
তবে ট্রেনে সফরকালে নানা ধরনের ঘটনা আমাদের চোখের সামনে ঘটতে থাকে যার কিছুটা প্রয়োজনে লাগে, তবে বেশিরভাগটাই অপ্রয়োজনীয় বলে আমাদের মনে হয়। কিন্তু সেখানেই লুকিয়ে আছে জ্ঞান অর্জনের সুযোগ। আজকের প্রতিবেদনের শিরোনামে এক রেলস্টেশনের উল্লেখ করা হয়েছে। যেই রেল স্টেশনের নাম এক মহীয়সী নারীর নামে হয়েছে।
প্রথম রেলস্টেশন দেশে কোন মহিলার নামে:
ভারতীয় রেল ভারতবর্ষের গর্ব। ভারতবাসী অহংকার করেন এই রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ে। দেশের আক্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত, উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম – অনায়াসে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থাকে মাধ্যম করে পৌঁছে যেতে পারেন দেশবাসী। রেল সফরে একখান থেকে অন্য স্থানে যাওয়ার অর্থ এক স্টেশন থেকে অন্য স্টেশনে যাওয়া। সেই রেলস্টেশনের নামগুলো ভারী অদ্ভুত।
কিছু নামের অর্থ খুঁজে পাওয়া যায় না। কিছু নাম অনেক কিছুকে মনে করিয়ে দেয়। তবে আজকে আমরা বলছি যে রেল স্টেশনের কথা তার সঙ্গে জড়িয়ে আছে রাজ্য অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গের নামও। ভাবতে পারেন দেশে কোন মহিলার নামে প্রথম রেলস্টেশন আর সেটা বাংলাতে!
যতদিন যাচ্ছে তত পুরনোকে জড়িয়ে নতুনকে শিক্ষা দেওয়ার ভাবনায় সরকারি এবং বেসরকারি বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক পদক্ষেপ করা হচ্ছে। পুরনো স্মৃতিস্তম্ভ থেকে শুরু করে রাস্তাঘাট, বিমানবন্দর, স্টেডিয়াম সবকিছুই মনীষীদের, বিপ্লবীদের নামে নামাঙ্কিত করছে সরকার।
আরো পড়ুন – হাত কেটে পা কেটে রক্ত দিয়ে নাম লিখে ভালবাসার কথা বোঝানোর চেষ্টা মূর্খামি ছাড়া কিছুই নয়
তবে এই প্রতিবেদনের জন্য আপনাকে গোটা দেশ ঘুরতে হবে না আমাদের এই বাংলার একটা স্টেশনে নিয়ে যেতে পারি আমরা যা পরে হাওড়া বর্ধমান কর্ড লাইনে। এই লাইনেরই গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন হচ্ছে ‘বেলানগর‘। যাতায়াতের পথে অনেকেরই হতো চোখ পড়েছে (the history of Belanagar railway station)।
‘বেলানগর‘ স্টেশনের আসল ইতিহাস অজানা:
কিন্তু আসল ইতিহাস অজানা। আপনি কি জানেন এই স্টেশনের নাম হয়েছিল সুভাষচন্দ্র বসুর ভাইজি এবং বর্তমানে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের মা বেলা মিত্রের নামে। দেশের স্বাধীনতার সংগ্রামের সেই লড়াকু কন্যা আজ স্মৃতির অকালে প্রায় হারিয়ে গেছেন। ভাগলপুরে ১৯২০ সালে জন্মগ্রহণ বেলার।
আরো পড়ুন – ভারত নেপাল সীমান্তে থাকা মেয়েদের ঋতুমতী হলে তাদের সঙ্গে কী করা হয় জানেন?
১৯৪০ সালে কংগ্রেসের রামগড় অধিবেশন থেকে বেরিয়ে এসে সুভাষচন্দ্র বসু যখন আপস-বিরোধী সম্মেলনের ডাক দিয়েছিলেন, বেলার বয়স তখন মাত্র ১৯ বছর। তবে নেতাজির আজাদ হিন্দ ফৌজের গঠনে তার ভূমিকা অনস্বীকার্য। নিজের গয়না বিক্রি করে অস্ত্র কেনার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন তিনি।
ছোট থেকেই সুভাষচন্দ্র বসুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন তাই বিয়ের পরও চিন্তা ভাবনা এতটুকু বদলাইনি। ১৯৪৭-এর ফেব্রুয়ারিতে বেলা মিত্র নেতাজির ঝাঁসি রেজিমেন্টের আদর্শে ঝাঁসি রানি বাহিনী গঠন করেছিলেন। এই বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি নিজেই।
আরো পড়ুন – Train horns: ট্রেনের হর্ন মানেই বিরক্তি? অথচ এই হর্ন বলে দেয় রেলের আসল তথ্য জানেন?
বেশ স্বাধীন হবার পর শরণার্থীদের ত্রাণ শিবিরের কাজে নিজেকে সমর্পণ করেছিলেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে মাত্র ৩২ বছর বয়সে তার জীবনাবসান হয়। তিনি পর্দার আড়ালে থেকে কাজ করে গেলেও তার প্রয়াণের পর ভারতীয় রেল তাকে মনে রেখেছে।
তাই প্রয়াত বেলা মিত্রকে সম্মান জানাতে হাওড়া বর্ধমান কর্ড লাইনে তাঁর স্থাপিত অভয়নগর উদ্বাস্তু কলোনির কাছেই একটি রেল স্টেশন তৈরি করে তার নাম রাখা হয় ‘বেলানগর’।