Breaking Bharat: শিশুরা বলে চলেছে তন্ত্র মন্ত্র! গ্রাম জুড়ে শুধুই কালা জাদু (Black Magic), কোথায় এমন হয় বলুন তো? বিজ্ঞান এগিয়ে চলে তার যুক্তি দিয়ে। চিরকাল কুসংস্কৃতি আর কুসংস্কার, এইসবের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে বিজ্ঞানমনস্ক মানুষেরা। অথচ ফল কি দাঁড়িয়েছে?
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যুক্তিবাদী মন যা যা বোঝাতে চেয়েছে সেই সবকিছুর জন্য তাকে বারবার অপদস্ত হতে হয়েছে। একটা কথা আছে, বিশ্বাসের মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর। ঠিক সেভাবেই কুসংস্কারে আচ্ছন্ন মানসিকতায় মানুষ পিছিয়ে পড়েছে অনেকটা।
একটা গোটা গ্রাম কালা জাদুর উপর বেঁচে আছে:
২০২২ সালে দাঁড়িয়েও একটা গোটা গ্রাম কালা জাদুর উপর বেঁচে আছে (The entire village survives on black magic)। প্রগতিশীল বিজ্ঞানমনস্ক মানুষের এটা ভাবতে কষ্ট হলেও এটাই সত্যি। এমনকি আগামী প্রজন্মের মধ্যেও নেই বিজ্ঞানের প্রচার। তাইতো এই গ্রামের শিশুরাও গড়গড় করে বলে কালা জাদুর মন্ত্র।
প্রায় ১৪০ কোটি মানুষকে নিয়ে ভারতবর্ষের নিত্যদিনের জীবনযাপন। কত বিচিত্র সব মানুষ রয়েছে এই দেশে তার হিসেব বোধহয় গুনেও করেও শেষ করতে পারবেন না আপনি। এত মানুষ মানে অনেকগুলো সংস্কৃতি যার মধ্যে কিছুটা ঠিক আবার কিছুটা ভুল।
জাদু তন্ত্র মন্ত্রের উপর বিশ্বাস করে বেঁচে থাকে মানুষ?
এই দেশের যেমন সংস্কৃতিক বৈচিত্র্য আছে তেমনি রয়েছে রহস্যে ঘেরা আবহ। আপনি হয়তো জানলে অবাক হবেন কিন্তু এই দেশের রহস্য জানতে প্রতিবছর কয়েক হাজার পর্যটক আসেন বাইরে থেকে। তাদের জন্য আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু আজকের আলোচ্য গ্রাম।
আরো পড়ুন – airplane : আপনি কি বিমান চড়তে ভালবাসেন? যদি মাঝপথে চালক ঘুমিয়ে পড়ে?
অলৌকিকতার বিশ্বাসকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছে অসমের মায়ং গ্রাম (Mayong Village in Assam)। যুগের পর যুগ অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ার পরেও একটা পুরো গ্রাম ডুবে আছে কুসংস্কারের বেড়াজালে। সভ্যতার আলো এখানে প্রবেশ করেনি বললেই চলে। তা না হলে এখনো জাদু তন্ত্র মন্ত্রের উপর বিশ্বাস করে বেঁচে থাকে এখানকার মানুষ?
আরো পড়ুন – airplane : আপনি কি বিমান চড়তে ভালবাসেন? যদি মাঝপথে চালক ঘুমিয়ে পড়ে?
তবে আপনি বিশ্বাস করুন বা না করুন প্রচুর মানুষ এই টানেই এখানে আসেন। রহস্যভেদের চেষ্টা হোক কিংবা ফোটোগ্রাফি, কিংবা নিছকই কালো জাদু, তন্ত্র, পূজার্চনার সাক্ষী হতে– কারন যাই হোক না কেন, এই গ্রামের যে একটা আলাদা আকর্ষণ আছে সেটা বলাই বাহুল্য।
তন্ত্র-মন্ত্র, কালা জাদু, ঝাড়ফুঁক নিয়েই বেঁচে আছেন:
ভাবতে অবাক লাগে এখানকার বাসিন্দারা যুগের পর যুগ ধরে তন্ত্র-মন্ত্র (Tantra-mantra), কালা জাদু (black magic), ঝাড়ফুঁক নিয়েই বেঁচে আছেন। তাহলে চলুন এর অবস্থান সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাক। এক কথায় একে বলতে পারেন কালা জাদুর ভূমি।
গ্রামটি গুয়াহাটি থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত, জেলার নাম মরিগাঁও। পাস দিয়েই বয়ে গেছে ব্রহ্মপুত্র নদ।
আরো পড়ুন – Pitbull : পিটবুল মারাত্মক হিংস্র প্রজাতির কুকুর! তাকে দত্তক নিচ্ছে কেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন?
গ্রামের নাম টির আবির্ভাবের পেছনেও অনেকগুলো মতামত রয়েছে। কেউ বলেন মায়ং’ শব্দটি এসেছে সংস্কৃত শব্দ ‘মায়া’ থেকে আবার কারোর মতে ঘটোৎকচের মায়া বিদ্যা চর্চার কারণেই গ্রামের নাম নাকি হয়েছিল মায়ং।
বশীকরণ থেকে শুরু করে কালোজাদুর মন্ত্র :
শুধু তাই নয় এই মায়াবিদ্যা নাকি মহাভারতে ব্যবহার করা হয়েছিল বলে, এখানকার মানুষের বহু যুগের বিশ্বাস। মাইবং গোষ্ঠীর লোকেদের প্রিয় হাতির থেকে এখানে নাম হয়েছে বলে মনে করা হয়।
এ প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি আমরা কোন ধরনের কুসংস্কারকে বা অন্ধবিশ্বাসকে প্রশ্রয় বা আস্কারা দিই না। এই গ্রামে গেলে রাস্তাঘাটে যে কেউ আপনার হাত কপাল মুখ দেখে ভবিষ্যৎ বলে দেওয়ার দাবি করে। প্রাচীনকালে এখানে নরবলি হত বলে জানা যায় যদিও এই সব কিছু সত্যতা আমরা যাচাই করিনি।
আরো পড়ুন – কামাক্ষ্যা মন্দিরে পুরুষ প্রবেশ নিষিদ্ধ! জানেন এই নিয়ম আছে ভারতের একাধিক মন্দিরে
জানা যায় গ্রামের নিজের মাটি খুঁড়ে অনেক নর কঙ্কাল পাওয়া যেত একসময়। আধি ভৌতিক কিছু বিশ্বাসকে আঁকড়ে ধরে এখানকার অন্ধবিশ্বাস যুগের পর যুগ ধরে এগিয়ে চলেছে। ইতিহাস প্রেমীদের জন্য এই জায়গাটা বেশ আকর্ষণীয় হতে পারে।
আরো পড়ুন – Mahadev Temple : এই দেশেই আছে অদৃশ্য শিব মন্দির? কেন দর্শন দিয়েই ডুবে যান দেবাদিদেব?
২০০২ সালে মায়ং কেন্দ্রীয় জাদুঘর দর্শকদের জন্য খুলে দেওয়া হয় এবং এখানকার মিউজিয়ামে কালো জাদু এবং আয়ুর্বেদ সংক্রান্ত প্রচুর বই দেখতে পাওয়া যায়। সব থেকে আশ্চর্যের হলেও গ্রামের বাচ্চারা পর্যন্ত মুখস্ত করে বশীকরণ থেকে শুরু করে কালোজাদুর মন্ত্র বলতে পারে এখানে।
ওঝা এবং হাতুড়ে ডাক্তারদের বাড় বাড়ন্ত এখানে লক্ষ্য করা যায়। তুকতাক, জাদু মন্ত্র ইত্যাদির সাহায্যে তাঁরা রোগ সারিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় এবং অনেকে বিশ্বাস করেন এতে নাকি কাজ হয়। দূর থেকে দেখতে মন্দ লাগবে না।