Breaking Bharat: হিস্টেরেক্টোমি বাড়ছে কেন? কর্পোরেট অফিসের চাপেই কি জরায়ু (Uterus) বাদ দিচ্ছেন মহিলারা? ঘরে বাইরে প্রতি মুহূর্তে চাপ বাড়ছে মহিলাদের। সংসারের দায়িত্ব পালনে একজন পুরুষের উপর আর নারী নির্ভর করছে না। তাকে আজ আকাশ ছুঁতে হবে। আজ সব কিছুর দায়িত্ব তার উপর।
সে যে পুরুষের অস্তিত্বকেই অস্বীকার করতে সক্ষম তাই আজ প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু সব কিছুর একটা উল্টো দিক থাকে। এই যেমন ধূপ চিরদিন সুগন্ধ দেয় সবাইকে। কিন্তু বিনিময়ে তাকে নিঃশেষ হয়ে যেতে হয়। এভাবেই শেষ হচ্ছে নারী তার ভেতর থেকে। টের পাচ্ছে না সমাজ।
মহিলাদের মধ্যে জরায়ু বাদ দেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে?
শুধু মাঝে মাঝে ব্রেকিং নিউজ আর চিকিৎসার পরিসংখ্যান সত্যিটা দেখিয়ে দেয়। আর সেখানেই উঠে এলো ভয়ংকর তথ্য। মেডিকেল রিপোর্ট বলছে যখন দিন যাচ্ছে তখন মহিলাদের মধ্যে জরায়ু বাদ দেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে (Tendency to drop the uterus in women)। চিকিৎসার পরিভাষায় একেই বলে হিস্টেরেক্টোমি।
নারী দেহ এবং পুরুষ দেহ মানব শরীরের এই দুই লিঙ্গের বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ গঠন কিছুটা আলাদা। মহিলাদের কিছু গুরুত্বপূর্ন অঙ্গ আছে যা প্রজননের এবং জীবন ধারণের অন্যতম। নারী দেহেই তো জন্ম নেয় নতুন প্রাণ। অথচ সেই নারী আজ বাধ্য হচ্ছেন জরায়ু বাদ দিতে।
স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে কেন? উত্তর যদি গভীর ভাবে অনুধাবন করেন তাহলে বুঝবেন, স্বেচ্ছায় নয় এমন সিদ্ধান্তের পিছনে আছে অনেক যন্ত্রনা। নারী দেহে ঋতুস্রাব হওয়া একটা স্বাভাবিক ঘটনা। প্রতি মাসে পাঁচটা করে দিন এত রক্তক্ষরণ সহ্য করেও লড়াই করে চলেছে মেয়েরা।
এর পাশাপাশি বাড়িতে নানা কাজ, অফিসের প্রেশার, টেনশন – এই সব তো লেগেই আছে। ফলত এইসবের সঙ্গে আর অত্যাধিক যন্ত্রণার দিনগুলো কোন মেয়ে ই মনে করতে চায়না। তাই জরায়ুকে বিদায় দিয়ে পাকাপাকিভাবে ঋতুস্রাবের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা (Trying to get rid of menstrual problems)। সমাজ যতই বলুক না কেন এগুলো এখন কিছু নয় কিন্তু আজও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি বদলায়নি।
নারী মানেই কম্প্রোমাইজ করে জীবন কাটানোর অভ্যাস?
মাসের চার পাঁচটা দিন অস্বাভাবিক যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে মেয়েটাকে অফিস থেকে বাড়ির কাজ – সবটাই করতে হয়। ওইসময় অফিস পৌঁছতে দেরি হলে কোনও রেহাই নেই। ছুটি নিলে টাকা কাটা যায়। বিজ্ঞান বলে পিরিয়ড চলা কালীন মুড সুইং হওয়া স্বাভাবিক (Mood swings are normal during periods)। কিন্তু সেটাই বা বোঝে কজন? বইয়ের পাতায় পড়ে বা বড় বড় লেকচারে দু চার লাইন অনেকেই বলতে পারেন।
কিন্তু বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করেন কে? ভাবতে অবাক লাগে ভারতবর্ষের বুকে আজও এমন রাজ্য আছে যেখানে মহিলাদের চাকরিতে নেওয়ার আগে জেনে নেওয়া হয় তার জরায়ু বাদ গেছে কিনা! যাতে সমস্যা না হয়, খাটুনির কাজে কোনও। দয়ার জায়গা নেই। যদিও দয়া বা করুণা কোনো কিছুর সঙ্গেই তুলনা করা যায় না। তবুও নারী মানেই কম্প্রোমাইজ করে জীবন কাটানোর অভ্যাস, তাই না?
জরায়ু তো বাদ দেওয়া হল কিন্তু এর পরিণাম কি? (Uterus):
জরায়ু তো বাদ দেওয়া হল কিন্তু এর পরিণাম কি? প্রাথমিকভাবে জরায়ু বাদ দিলে ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু যে ঘটনা খুব স্বাভাবিক সেটা যদি কৃত্রিম উপায়ে বন্ধ করা হয় তার প্রভাব শরীরে পড়বেই। প্রথমেই হরমোনের পরিবর্তন দেখা যায়, যার ফলে বার্ধক্য অনেক তাড়াতাড়ি শুরু হয়।
অনেকেই বলেন যে চুল পাকতে শুরু করে সময়ের আগে। পাশাপাশি অস্টিওপোরোসিস, অস্টিওআর্থ্রাইটিস, হৃদরোগের মতো একাধিক সমস্যার সূচনা হয়ে যায় খুব কম সময়ের মধ্যে। এছাড়াও মানসিক অবসাদের আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। সম্প্রতি একটি সুবিধা বলছে আমাদের দেশে প্রায় ৭২ শতাংশ মহিলারাই ভিটামিন ডি অর্থাৎ ক্যালসিয়ামের অভাবে ভোগেন।
আরো পড়ুন- Bapuji Cake : মধ্যবিত্ত পরিবারের প্রিয় বাপুজী কেক, এই বাপুজী কেক আজও বাঙালির নস্টালজিয়া!
আর ক্যালসিয়ামের অভাব মানেই হাড়ের সমস্যা। প্রাথমিকভাবে হাড় ক্ষয়ে যেতে থাকে। হাড়ের মধ্যে গর্তের সৃষ্টি হয় যাতে প্রবল যন্ত্রণায় কাবু হয়ে পড়েন মহিলারা। মেনোপজের পরে এই সমস্যা এমনিতেই দেখা যায়। কিন্তু এই কাজ যদি আপনি আগেই করেন তাহলে স্বাভাবিকভাবে বড্ড তাড়াতাড়ি এই যন্ত্রণা ব্যথা কে আমন্ত্রণ জানাবেন আপনি। রোগের সম্ভাব্য তালিকা টা এখানেও শেষ নয়।
আরো পড়ুন- Home : ঝড় ঝাপটার মুখে আপনার বাড়ি? প্রকৃতির রোষানল থেকে কী করে বাঁচাবেন নিজের বাড়ি?
যদি ঋতুস্রাবকে জোর করে বন্ধ করে দেয়া হয় বা সময়ের আগেই তাকে আটকে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয় সেক্ষেত্রে নিউরোনে হরমোন চলাচলে তা প্রভাব ফেলে। আর যেচে একজন মেয়েকে এত কিছু সহ্য করতে হয়, কারণ এই সমাজ আর পরিস্থিতি তাকে এগুলোর জন্য বাধ্য করে। বাড়িতে পিরিয়ড চলাকালীন মহিলারা কি সত্যি কাজ থেকে একটু নিষ্কৃতি পান?
আরো পড়ুন- বাড়িতে কি প্যারালাইজ়ড রোগী আছেন? এবার স্বস্তি পাবেন আপনি, কারণ তিনিও হাঁটাচলা করবেন সহজেই!
বাবার বাড়িতে যদিও বা হয় স্বামীর বাড়িতে? যখন বাড়িতে নিজের লোকেরাই বোঝেন না তখন অফিসের কাছে কী করে আশা করবেন? নারী কিন্তু জীবনের ভিত্তি, সমাজেরও। চিন্তা না বদলালে সমাজ বদলাবে না । আর দিনের পর দিন , বছরের পর বছর এভাবে নিজের জীবন দিয়ে মহিলারা খেসারত দিয়ে যাবেন এটা চলতে পারে না। হিস্টেরেক্টোমি অর্থাৎ অপারেশন করে জরায়ু বাদ দেওয়ার পদ্ধতি যত বেশি হবে বোঝা যাবে সমাজ কত পিছিয়ে আছে। এটা লজ্জার!