Breaking Bharat: মহিলাদের স্বাবলম্বী হওয়ার প্রবণতা কি কমছে? পরবর্তী সময় কি আমাদের আরও পিছিয়ে দিল?
প্রতিবেদনের শুরুতে কয়েকটা পরিসংখ্যান যদি আপনার সামনে তুলে ধরি তাহলে হয়তো আজকের এই লেখার মর্মার্থ আপনার কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে। কথায় কথায় যতই নারীকে স্বাবলম্বী করার কথা আমরা বলি না কেন, ডিজিটাল ইন্ডিয়া-র যুগেও মান্ধাতার আমলের সেইসব ধারণার কোনও পরিবর্তন হয়নি।
আপনি কি জানেন সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, ভারতে প্রায় ৭৯ শতাংশ মহিলার নিজস্ব কোনও রোজগার নেই? ২০২০ সালে করোনা পরিস্থিতির উদ্রেক হওয়ার পর এই হার আরও বেড়েছে। গোটা পৃথিবীতে যখন কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের যোগদানের হার প্রায় ৪৭ শতাংশ, সেখানে ভারতে এই পরিসংখ্যানটা অর্ধেকের কম। প্রায় ২১ শতাংশ মাত্র।
কিন্তু কেন সে কথা কখনো ভেবে দেখেছেন?
প্রাচীনকাল থেকেই আমাদের মধ্যে একটা বদ্ধমূল ধারণা পুরুষশাসিত সমাজে নারীদের প্রাধান্য নিয়ে। মেয়েরা যেন এই নিয়মকে মেনে নিয়ে বড় হয়েছে যে বাড়িতে রোজগার করার মানুষটি সব সময় পুরুষই হবেন। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ভাবনা-চিন্তার পরিবর্তন হয়েছে এবং তার ছবিও দেখা গেছে।
কিন্তু ভারত যে এই ব্যাপারে অনেকটা পিছিয়ে সেটা নতুন করে বলার নেই। ছোট থেকে বড় হতে হতে ভারতীয় নারীদের সবথেকে বেশি করে শেখানো হয় সংসার করার কথা। তাই পুরুষের আশ্রয় থেকে বাঁচার এবং জীবন কাটানোর অভ্যাস করে ফেলেছে নারী। নারী এবং পুরুষের সম্পর্ক ভালোবাসা আর বোঝাপড়ার মধ্যে দিয়ে গড়ে ওঠে।
কিন্তু সেখানে রক্ষণশীল চিন্তাভাবনা আর প্রাচীন যুক্তি মাথাচাড়া দিলে সেক্ষেত্রে সম্পর্ক বাঁচাতে গিয়ে বারবার নারীকেই তার স্বপ্নের বলিদান দিতে হয়। অর্থ উপার্জন করার অধিকার, নিজের পায়ে দাঁড়ানোর ইচ্ছে কি নারীর জন্য নয়, তাতে কেবল পুরুষের অধিকার?
এরকম প্রশ্ন চিহ্ন বারবার উঠেছে কিন্তু সমাধান সূত্র মেলেনি বরং পিছিয়ে গেছি আমরা আরো অনেক বেশি করে করোনা পরবর্তী সময়ে। অবাক করা তথ্য হলো ভারতে নারীসমাজ শুধু কর্ম জগৎ থেকেই বঞ্চিত এমনটা নয়, এর পাশাপাশি চূড়ান্ত যৌন নির্যাতনের শিকার। আর এটাই দক্ষিণ এশিয়ার নারী জীবনের বাস্তব ছবি। যৌন হেনস্থা বাড়ছে বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম এবং কাম্বোডিয়াতেও।
আরো পড়ুন – আবর্জনা! পৃথিবী বিপন্ন জানেন কেন? এবার আপনার কাঁধেই বড় দায়িত্ব !
এমনকী ভাবতে অবাক লাগে যে আমেরিকার মতো মতো এতো উন্নত দেশেও প্রতি ১ মিনিট অন্তর কোনও না কোনও মহিলা যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন । সব থেকে বড় কথা হলো এইসব অত্যাচারের শিকার হচ্ছেন যারা তারা কর্মরত নাকি সংসার সামলাচ্ছে সেটা গুরুত্বপূর্ন নয়। কিন্তু টার্গেট হচ্ছে নারী সমাজ এটাই বড় কথা। এমনিতেই করোনা মহামারী আমাদের সবার জীবন ওলটপালট করে দিয়েছে ।
আরো পড়ুন – মনের কষ্ট ভোলাতে ‘মদ’ শরীরের শুধু নয় মনের জন্য কত ক্ষতিকারক জানেন?
অসংখ্য মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। সেই সংখ্যাটা যেমন পুরুষদের রয়েছে নারীদের ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য। কিন্তু পরিস্থিতি একটু ঠিক হতেই প্রত্যেকেই আবার স্বাভাবিক কর্মজীবনে ফিরতে চেয়েছে। কিন্তু এবার মেয়েদের ক্ষেত্রে সেটা সম্ভব হয়নি।
ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে কিন্তু আমরা বলছি সাধারন ঘটনার কথা। সেই বোধহয় “চাকরি যখন গেছে এবার ঘরের কাজে মন দাও” কনসেপ্টে বাঁচতে শুরু করেছে সমাজ। তাই আবার যেন অলিখিত ফতোয়া জারি হয়েছে মেয়েদের নামে।
আরো পড়ুন – বলিউডি গ্রেট ভিলেন গব্বর নিজের স্ত্রীয়ের জন্য কী করেছিলেন ভাবতেও পারবেন না!
সময় বদলাচ্ছে। আজকের যুগে সব ক্ষেত্রেই নারী পুরুষ সমান। তাহলে আর্থিক ভাবে মেয়েরা স্বাবলম্বী হলে সমাজ থেকে পুরুষের নিয়ন্ত্রণ হারাবার ভয় তৈরি হচ্ছে কেন? এখানে সবাই ভালোবেসে থাকবে কেউ কাউকে প্রভু বা ভৃত্য মানবে এমন চুক্তি তো হয় নি। তাই নয় কি? বিষয়টি ভেবে একটু জানাবেন এবার আপনাদের উত্তরের আশায় রইলাম।