Breaking Bharat: ভোলে বাবা পার করেগা! তারকেশ্বরে বাবা তারকনাথের ইতিহাস জানেন (Tarkeshwar Mahadev)? এত ভক্তের তারকেশ্বরে যাওয়ার কারণ কি? শিব ঠাকুরের কোনও ঝক্কি নেই একটি বেলপাতাতেই তিনি তুষ্ট। আর দিকে দিকে তার মহিমা। দল বেঁধে শিবের মাথায় জল ঢালা। এই রীতি প্রাচীন কাল থেকেই চলে আসছে। যত দিন যাচ্ছে তত ভিড় যেন বাড়ছে। পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার তারকেশ্বরে বাবা তারকনাথের মন্দির।
তারকেশ্বর মন্দিরের ইতিহাস (tarkeshwar mahadev history):
পায়ে হেঁটে কাঁধে বাক নিয়ে শয়ে শয়ে তীর্থযাত্রীরা বৈশাখ আর শ্রাবণে যাত্রা করেন বাবা ধামের উদ্দেশ্যে। ১৭২৯ সালে নির্মিত এই মন্দির হিন্দুদের কাছে অন্যতম পবিত্র তীর্থস্থান বলে পরিগণিত হয়।
ত্রিশূলধারী বাবা মহাদেব সবসময় তার ভক্তদের তথা এই ব্রহ্মাণ্ডকে রক্ষা করে আসছেন। বাবা কৈলাসবাসী, তার খুব একটা বেশি চাহিদা নেই। একটা বাতাসা বা বেলপাতা খুব বেশি হলে আকন্দ ফুলের মালা এতেই তিনি সন্তুষ্ট। হিন্দু দেবতা শিবের অন্যতম বিখ্যাত মন্দির তারকেশ্বর মন্দিরে (Tarkeshwar Mahadev Temple) দেবাদীদের মহাদেবের যে শিবলিঙ্গটি রয়েছে সেটিকে পবিত্র এবং জাগ্রত বলে মনে করেন ভক্তরা।
তারকেশ্বরের দুধপুকুরে স্নান করলে মনস্কামনা পূর্ণ হয় ?
কথিত আছে, সমুদ্রমন্থনে যে বিষ উঠেছিল, সেই বিষ কণ্ঠে ধারণ করে নীলকন্ঠ শিব সারা পৃথিবীকে রক্ষা করেছিলেন। ভগবতীর স্বামী ভোলা মহেশ্বরকে এই তারকেশ্বরে অত্যন্ত জাগ্রত দেবতা রূপে আরাধনা করা হয়। ভক্তজন শিবের অনুগ্রহ লাভ করতে বাঁকে করে পবিত্র জল নিয়ে দূর-দূরান্ত থেকে পদব্রজে তারকেশ্বরে এসে মহাদেবের লিঙ্গে জল ঢেলে মঙ্গল প্রার্থনা করে শিবরাত্রির দিনে, গাজনের উৎসবে।
এখানে তারকনাথ নামে পূজিত শিব। আপনি জানেন, কিংবদন্তী অনুসারে বহু মানুষের দুরারোগ্য ব্যধির নিরাময় ঘটান? তাইতো যুগ যুগ ধরে তারকেশ্বরের প্রতি ভক্তদের বিশ্বাস এতোটুকু টলে না। তারকেশ্বরের দুধপুকুরে স্নান করলে নাকি সকল মনস্কামনা পূর্ণ হয় বলে মানুষের বিশ্বাস (tarkeshwar mahadev history)।
এমনকি শোনা যায় যে নিকটস্থ কালী মন্দিরেও নাকি প্রয়োজনে তারকনাথ আরোগ্যের জন্য ভক্তদের যেতে বলতেন। আজ প্রতিবেদনের মাধ্যমে তারকেশ্বরে ভ্রমণ করতে গেলে সবার আগে দূরত্বটা জেনে নেওয়া দরকার তারপর ইতিহাসের পাতায় চোখ রাখা যাবে।
কলকাতা থেকে ৫৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত তারকেশ্বর শহরের মাঝে তারকনাথের মন্দির হিন্দুদের এক প্রসিদ্ধ এবং পবিত্র তীর্থক্ষেত্র। তারকেশ্বর মন্দিরের ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায়, ১৭২৯ সালে রাজা বিষ্ণুদাসের ভাই ভারমল্লা এই মন্দির স্থাপন করেছিলেন।
অযোধ্যা প্রদেশের অন্তর্গত জেলা জৌনপুরের ডোভী পরগণার হরিহরপুর গ্রামের ক্ষত্রিয় ভূস্বামী ছিলেন রাজা বিষ্ণুদাস। তারকেশ্বরের কাছে রামনগর গ্রামে তিনি কয়েকজন ব্রাহ্মণের সঙ্গে এসে বসবাস করছিলেন। ইতিহাস অনুসারে বাংলার নবাব মূর্শিদকুলি খান তাঁকে রামনগরে প্রায় দেড় হাজার বিঘা জমি দান করেছিলেন থাকার জন্য।
তারকেশ্বর মন্দিরের রহস্য (Tarkeshwar Mahadev Temple):
কথিত আছে, অষ্টাদশ শতকে শিব স্বয়ং ভক্ত বিষ্ণুদাসের স্বপ্নে দেখা দিয়েছিলেন এবং নির্দেশ দিয়েছিলেন যে তারকেশ্বরের কাছে জঙ্গলের গভীরে যে শিবলিঙ্গ রক্ষিত আছে, তাকে নিয়ে এসে মন্দির নির্মাণ করে তবে দেবতাকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। রাজার গো-রক্ষক মুকুন্দরাম ঘোষ একদিন লক্ষ্য করেন কয়েকটি গাভী ঘন জঙ্গলের মধ্য দিয়ে গিয়ে একটা শিলার উপর বাঁট থেকে দুধ নিঃসৃত করে ফিরে আসছে।
বিষ্ণুদাসের ভাই ভারমল্লাকে এই খবরটা জানালে তিনিও দেখেন যে জঙ্গলের মধ্যে এক নির্দিষ্ট জায়গায় তাঁদের গাভীগুলি প্রত্যেকদিন শিলাখণ্ডে দুধ দিয়ে আসছে। নল-খাগড়ায় পরিপূর্ণ সেই শিলাখণ্ডের মাথায় একসময় স্থানীয় মহিলারা ধান ঝাড়তো বলে শিলাখণ্ডের মাথায় গর্ত হয়েছিল যা আজও লক্ষ করা যায়।
তারকেশ্বর মন্দিরের উল্লেখ পাওয়া যায় (tarkeshwar mandir):
একথাও কথিত আছে যে ভারমল্লদেব সেই শিলাখণ্ড তুলে অন্যত্র স্থাপন করতে চাইলে ভগবান শিব স্বয়ং ভারমল্লকে স্বপ্নাদেশ দেন যে শিলাখণ্ড তোলা যাবে না কারণ তা গয়া-কাশী পর্যন্ত বিস্তৃত আছে। এর পরিবর্তে তিনি যেন সেখানেই একটি মন্দির নির্মাণ করেন। ফলে ভারমল্ল এবং বিষ্ণুদাস গড়ে তোলেন এই তারকেশ্বর মন্দির যা পরে বর্ধমানের মহারাজা সংস্কার করেছিলেন।
বাবা তারকনাথের মাহাত্ম্য খুব কম সময়ের মধ্যেই দিকে দিকে প্রচারিত হয়। এর কিছু পরে নীলকমল মিত্রের দাক্ষিণ্যে ১৮৮৫ সালে শেওড়াফুলি থেকে তারকেশ্বর পর্যন্ত রেলপথ স্থাপিত হয়। একসময়ে দশনামী শৈব সম্প্রদায়ের মঠ হিসেবেই এই তারকেশ্বর মন্দিরকে ধরা হত। সহোদর গোস্বামীর ‘ধর্মমঙ্গল’ কাব্যে, কবিচন্দ্র রামকৃষ্ণ দাসের ‘শিবায়ণ’ কাব্যে এই তারকেশ্বর মন্দিরের উল্লেখ পাওয়া যায়।
অনেকেই হয়তো তারকেশ্বরের মন্দিরে গিয়ে তারকনাথের (tarkeshwar nath) পূজো দিয়েছেন অনেকে আবার কৌতুহল বসতই মন্দির চত্বর ঘুরে এসেছেন। আপনাদের বলি, তারকনাথের মন্দিরে অর্থাৎ তারকেশ্বরের মন্দিরের গঠন শৈলীর কথা। অন্যান্য মন্দিরের মতো এই মন্দিরে প্রাচুর্য নয় আটচালার প্রভাব দেখা যায়।
মন্দিরের কাছেই রয়েছে লক্ষ্মীনারায়ণ মন্দির এবং এক অপূর্ব কালী মন্দির। মন্দিরের সম্মুখে একটি নাটমন্দির রয়েছে । শিব মন্দিরের উত্তরদিকে একটি পুকুর আছে, যাকে দুধপুকুর বলা হয়। হিন্দুদের বিশ্বাস যে ওই পুকুরে ডুব দিয়ে স্নান করলে ভক্তজনের সকল মনস্কামনা পূর্ণ হয়। অনেকেই ওই দুধ পুকুরে ডুব দিয়ে দণ্ডী কাটেন বাবা তারকনাথের মন্দিরে।
আরো পড়ুন- Broken Marriage : নীল ছবির কারণে বিয়ে ভাঙছে ? সুখী দাম্পত্যে থাবা বসাচ্ছে পর্ন! তাহলে উপায় ?
মন্দিরের পূজার সময় সাধারণত সকাল ছ’টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত এবং বিকেলে চারটে থেকে সাতটা পর্যন্ত। কিন্তু বিশেষ বিশেষ দিনগুলিতে মন্দির প্রাঙ্গণ সর্বসাধারণের জন্য ও সারা দিন রাত্রি খোলা থাকে। মন্দিরের বাইরে ফুল-মালা- প্রসাদের মিষ্টি- মোমবাতি -প্রদীপ ইত্যাদি বিক্রি হয়। এছাড়াও সর্বদাই পুজো করানোর জন্য পুরোহিতেরা উপস্থিত থাকেন (tarkeshwar mandir)।
আরো পড়ুন- Vrindavan Dham : জয় গোবিন্দ জয় রাধে! যাবেন নাকি পূণ্য তীর্থ বৃন্দাবন ধামে?
বৈশাখ, শ্রাবণ এবং চৈত্র বছরের এই তিনটি সময় তারকেশ্বরে উপচে পড়া ভিড়। এই তিনটি মাসেই তারকেশ্বর মন্দির চত্বরে মেলা দেখা যায়। তারকেশ্বর স্টেশন থেকে কয়েক মিনিটের হাঁটা পথেই ভেতর দিয়ে মন্দিরে পৌঁছানো যায় (tarkeshwar mandir location)। এই মন্দিরের শিবলিঙ্গকে স্বয়ম্ভু বলা হয়, অর্থাৎ কেউ নির্মাণ করে স্থাপন করেননি আগে থেকেই ঈশ্বর সেখানে ছিলেন বলে মনে হয়।
আরো পড়ুন- Rats : দুই নারীর মিলনেই ভূমিষ্ঠ হল সন্তান? কী ভাবছেন পুরুষ? তাহলে কি চিন্তায় পড়লেন?
মন্দিরে স্বয়ম্ভূ শিবলিঙ্গ যেমন রয়েছেন, তেমনই অধিষ্ঠান করছেন বাসুদেব। অনেকের মতে তিনি আসলে ব্রহ্মা। শিবের কিছুদূরে নন্দী-ভৃঙ্গীর অধিষ্ঠানও দেখা যায়। শিব-ভক্তদের মধ্যে তারকেশ্বরের মন্দিরের আকর্ষণ চিরন্তন, কারণ এই মন্দিরের দেবতা অত্যন্ত জাগ্রত এবং ভক্তদের মনোবাসনা অবশ্যই পূর্ণ করেন। এই তারকেশ্বরের তারকনাথকে দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম বলেও মনে করা হয়।