Breaking Bharat: রাজ্যের হেভি ওয়েট নেতা মন্ত্রী অসুস্থ হলেই SSKM-র ‘উডবার্ন ওয়ার্ড” হয়ে যায় তাদের গন্তব্য। যেখানে ভর্তি হন নেতারা। আজ এই উডবার্ন ওয়ার্ড এর না জানা কিছু কাহিনী। কাঠ ফাটা রোদ্দুরে হাসপাতালের কাঠ পোড়া বিল্ডিং দেখেছেন? কলকাতা কে যদি চেনেন অবশ্যই এর নাম জানেন, এখনও চিনলেন না? বিতর্ক সত্ত্বেও এখানেই আছে প্রধানমন্ত্রীর স্পেশাল কেবিন?
২৫ শে জুলাই বঙ্গবিভূষণ পেয়েছে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতাল সবাই ডাকে পিজি হাসপাতাল বলে। সবাই বিশ্বাস করেন পিজি হাসপাতালে কলকাতার অন্যতম সেরা ডাক্তাররা চিকিৎসা করেন। কিন্তু এই হাসপাতালের অতীত আর বর্তমান নিয়ে রয়েছে নানা গল্প। ইদানিংকালে মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের জন্য বারবার কালিমা লিপ্ত হয়েছে পিজি হাসপাতাল। দালাল চক্র নিয়ে খবরের শিরোনামে এসেছে SSKM।
এসএসকেএম হাসপাতাল (sskm hospital):
কলকাতার অন্যতম বড় সরকারি হাসপাতাল মানেই এসএসকেএম হাসপাতাল (sskm hospital)। রাজ্যের বড় বড় নেতা-মন্ত্রীরা অসুস্থ হলে এখানেই যান চিকিৎসা করাতে। এজিসি বোস রোডের ওপর এই হাসপাতাল। রবীন্দ্র সদনের একেবারে উল্টোদিকে যে রাস্তা সোজা চলে যায় মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির পথে সেখানেই পিজি।
এই হাসপাতালের সঙ্গে যেন বর্তমান রাজ্যের শাসক দলের ওতপ্রোত সম্পর্ক। যখন রাজ্যের কোন নেতা-মন্ত্রীর ডাক পড়ে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার কাছে, তখন তারা সোজা চলে যান উডবার্ন ওয়ার্ডে।কেন? এইতো অবশ্য শাসক বিরোধী রাজনৈতিক মতামত আর মতবাদ আছে।
রাজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতাল হল এসএসকেএম:
তবে অস্বীকার করে উপায় নেই, আমাদের রাজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতাল হল এসএসকেএম বা পিজি হাসপাতাল। প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষ সমগ্র রাজ্য জুড়েই চিকিৎসার জন্য আসেন এখানে। পাশাপাশি, মাঝে মাঝেই বিরল সব অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মানুষের জীবন বাঁচিয়েও খবরের শিরোনামে উঠে আসে এই হাসপাতালের নাম।
এছাড়াও,রাজ্য সরকারের সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল হিসেবেও চিহ্নিত এসএসকেএম হাসপাতাল। আজ বলি উডবার্ন ওয়ার্ডের কথা। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল হিসেবে চিহ্নিত SSKM– sskm full form (শেঠ সুখলাল কারনানি মেমোরিয়াল হাসপাতাল) বা PG হাসপাতাল।
বিশেষ ওয়ার্ডের নাম উডবার্ন ওয়ার্ড! কে এই উডবার্ন? চেনেন?
এই হাসপাতাল ইউরোপিয়ানদের চিকিৎসার জন্য তৈরি হয় ১৭০৭ সালে। ১৭৭০ সাল পর্যন্ত এর নাম ছিল প্রেসিডেন্সি হাসপাতাল। এরপর নাম বদল করে হয় প্রেসিডেন্সি জেনারেল হাসপাতাল বা পিজি হাসপাতাল। ১৯৫৪ সালে এর নাম বদল করে হয় শেঠ সুখলাল কারনানি মেমোরিয়াল হাসপাতাল (Is PG or Sskm same)।
এখানকার একটি বিশেষ ওয়ার্ডের নাম উডবার্ন ওয়ার্ড, যেখানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চিকিৎসা মেলে বিশিষ্টজনদের। এই ওয়ার্ডের নামকরণ হয়েছে স্যার জন উডবার্নের নামে। উডবার্ন ওয়ার্ড তৈরি হয় ১৯০২ থেকে ১৯০৮ সালের মধ্যে। কে এই উডবার্ন? চেনেন?
তাহলে ইতিহাসের পাতা উল্টে অতীতে ফিরতে হবে আপনাকে। জন উডবার্ন আসলে একজন ব্রিটিশ , কিন্তু তার জন্ম ব্যারাকপুরে। স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো ইউনিভার্সিটি এবং এডিনবরা ইউনিভার্সিটি থেকে শিক্ষালাভের পর ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসে যোগদান করেন ১৮৬৩ সালে।
১৮৯৮ সালে অবিভক্ত বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নর পদে আসীন হন তিনি, আমৃত্যু সেই পদেই ছিলেন। প্লেগ মহামারি যখন কলকাতায় ভয়ংকর আকার ধারণ করেছিল, তখন তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন। শুধু তাই নয়, নিজের শাসনকালে বঙ্গের স্বাস্থ্যবিভাগের সংস্কার সাধন করেন তিনি।
সেই সময়কার প্রেসিডেন্সি জেনারেল হাসপাতাল, যা বর্তমানে পিজি হাসপাতাল নামে পরিচিত, তার অনেক উন্নতি হয় তাঁর আমলেই। তাই এই মহান মানুষের স্মৃতিকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বিশেষ ওয়ার্ডের নামকরণ হয়েছে উডবার্ন ওয়ার্ড।
এটি বিশেষ ওয়ার্ড শুধুমাত্র বিশেষ বিশেষ মানুষদের জন্য। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর জন্যও একটি বিশেষ কেবিন রাখা আছে এখানে।২০১১ সাল থেকে এই উডবার্ন ওয়ার্ডের কেবিন নাম্বার ১২.৫ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা ছাড়া আবার সব সময় তালা চাবি দেওয়া থাকে।
আরো পড়ুন- Surgery : আপনি কি অপারেশনে ভয় পান? ডাক্তার কি অপারেশনের কথা বলেছেন?
যখন প্রধানমন্ত্রী কলকাতায় আসেন, তখন কোনও আপতকালীন প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে প্রস্তুত রাখা হয় এই কেবিন। এই কেবিনে রেয়েছে চারটি ঘর, একটি বিশ্রাম-কক্ষ, রোগী পরীক্ষা করার ঘর, যেখানে সব ধরনের অত্যাধুনিক গ্যাজেট থাকে, একটি ডাইনিং রুম এবং একটি অ্যান্টি চেম্বার।
আরো পড়ুন- CMC Vellore : অনেকেই চিকিৎসা করাতে ভেলোরে যান! চিকিৎসার ক্ষেত্রে ভেলোর যেতে হয় কেন?
তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই বোর্ডের প্রভূত উন্নতি সাধন করে। রাজ্যের একাধিক মন্ত্রী তথা প্রথমসারির নেতৃত্বদেরও প্রথম পছন্দ এই ওয়ার্ড। ২০১৮ সালে পুরনো কেবিনগুলোর জায়গায় ১৬টি অত্যাধুনিক কেবিন বানানো হয়। এখানে রোগীর পরিবারের জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত একটি সোফা কাম বেড, এলইডি টিভি, ফ্রিজ, আলমারি রাখা হয়েছে।
আরো পড়ুন- Sleep : এই দেশের বিবাহিত দম্পতিরা আলাদা ঘরে, আলাদা বিছানায় ঘুমায়! কেন জানেন?
বারবার সমালোচনার শিরোনামে পৌঁছেও এই ওয়ার্ড এবং হাসপাতালের পরিষেবা নিয়ে কিন্তু প্রশ্ন করা যায় না। কিছু মানুষের স্বার্থের ব্যবহারের জন্য একটা গোটা হাসপাতালকে কোনভাবেই দায়ী করা উচিত নয়। কারণ এই হাসপাতালে যে সমস্ত চিকিৎসকেরা পরিষেবা প্রদান করে থাকেন তারা অত্যন্ত দামী এবং গুণী চিকিৎসক।
এখনো পর্যন্ত মফস্বলের কোথাও রোগীর অবস্থা গুরুতর হলে তাকে এই হাসপাতালেই রেফার করা হয়। তর্ক বিতর্ক ভালো মন্দ সব নিয়ে বঙ্গবিভূষণ পিজি হাসপাতাল আজও আলোচনার শিরোনামে।