solutions to food waste : কারো ঠিকমত খাবার জুটছে না, আবার কেউ দিনের পর দিন ‘খাবার অপচয়’ করছে! মানে কেউ খেলো প্রচুর আর কেউ পেল না মোটে, কেমন হবে যদি এই ছবিটাই প্রতিদিন সমাজের ভাগ্যে জোটে?
কথাতেই আছে বাঁচতে গেলে খাওয়াটা সবার আগে দরকার। অস্বীকার করে উপায় নেই যে খাদ্য,বস্ত্র, বাসস্থান এই তিনের হিসেবে সবার আগেই কিন্তু খাবারের নামটাই আসে। অথচ প্রত্যেকদিন কত মানুষ না খেতে পেয়ে মারা যাচ্ছেন। হিসেব করে আর পরিসংখ্যান দেখলে চোখের জলও বাঁধ মানবে না। কিন্তু তাই বলে কি অপচয় হচ্ছে না?
খাবার অপচয় করা উচিত নয় কেন?
প্রতিদিন যে হারে অনলাইনে বা অফলাইনে খাবার অর্ডার হয়, বা ধরুন অনুষ্ঠান বাড়িতে বা রেস্টুরেন্টে খাবারের নষ্ট হয় সেগুলোর যদি হিসেব করেন তাহলে কত অভুক্ত মানুষ খেতে পারবেন, সেই হিসেবটা আর খাতায় ধরাতে পারবেন না। তাহলে চলুন না একটু চেষ্টা করে খাবারের অপচয় বন্ধ করি একটা ভালো ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য (solutions to food waste)।
আমরা সবাই কমবেশি হাংগার ইনডেক্স এর কথা জানি। কিন্তু আপনি কি জানেন তথ্য অনুযায়ী প্রতি বছর প্রায় ১৩০ কোটি টন ‘খাদ্যসামগ্রী নষ্ট’ হয়? স্বাভাবিক ভাবেই এই ভাবেই যদি ‘খাদ্য অপচয়ের এই পরিসংখ্যান‘ আসতে থাকে তাহলে তা নিঃসন্দেহে অত্যন্ত চিন্তার বিষয়।
আমরা কিন্তু শুধুমাত্র এই দেশের কথা বলছি না। মার্কিন মুলুকের মতো উন্নত দেশেও প্রতিমুহূর্তে খাদ্য অপচয়ের তালিকা টা দীর্ঘ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশান এজেন্সি (EPA)-র তরফে ২০১০ সালের একটি তালিকা বা পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়েছিল যেখানে দেখা যায় গড় মার্কিনিরা প্রায় ৯৯ কেজি খাদ্য অপচয় করেছিলেন।
এখন আপনি ভাবতেই পারেন যে খাবার অপচয় করলে হয়তো কিছু মানুষ খেতে পারছেন না সেইটাই সামনে আসবে। কিন্তু শুধুই কি তাই এরই নেপথ্যে কত বড় বিপদ লুকিয়ে আছে তার বিন্দুমাত্র আন্দাজ আছে কি? তাহলে এই প্রতিবেদনে আপনাকে সবটা বুঝিয়ে বলব আমরা।
‘খাদ্য অপচয়ের’ মাধ্যমেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে:
খাবার কেনা হয় টাকা বা অর্থের বিনিময়ে। তার একটা আলাদা গুরুত্ব নিশ্চয়ই আছে আর কোনভাবেই টাকা বা অর্থের অপচয় বরদাস্ত করা ঠিক নয়। কিন্তু যারা মনে করেন ‘খাবার অপচয়ের ফলে‘ শুধু টাকাই নষ্ট হচ্ছে, এটা তাদের ভ্রান্ত ধারণা কারণ এই সব কিছুর প্রভাব পড়ছে পরিবেশের ওপরও।
একটু ভেবে দেখুন আপনি যে খাবার ফেলে দিচ্ছেন সেটি নষ্ট হয়ে গিয়ে জমিতে মিথেন গ্যাস উৎপন্ন করছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন। এটি হল দ্বিতীয় সবচেয়ে সাধারণ গ্রীন হাউস গ্যাস। আর এই গ্রীন হাউস এফেক্ট এর কথা আপনাকে নতুন করে বোধহয় আর বলতে হবে না।
আরো পড়ুন – Passport: কেন পাসপোর্টের রঙের পরিবর্তন হয় জানেন কি? বিশেষ কোনও ইঙ্গিত দেয় কি এই রঙ?
তাহলে পরোক্ষভাবে হলেও আবহাওয়া পরিবর্তনেও আপনার প্রত্যক্ষ একটা ভূমিকা থেকে যাচ্ছে। এখানেই শেষ নয় এই সবের ফলে ‘প্রচুর পরিমাণে জলও নষ্ট হচ্ছে‘ সেটা আপনি জানেন কি?
এক্ষেত্রে তথ্য দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছি, যেমন ধরুন ওয়ার্ল্ড রিসোর্স ইনস্টিটিউট বলছে, কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহার করা প্রায় ২৪ থেকে ২৫ শতাংশ জল প্রতিবছর শুধুমাত্র ‘খাদ্য অপচয়ের মাধ্যমেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে‘। প্রায় ১৭০ ট্রিলিয়ন লিটার জল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে জানেন?
খাবারের অপচয় বাঁচাতে আমাদের কী করা উচিত?
এবার বলি অপচয় বন্ধের কথা। একটু ভেবে চিন্তে কেনাকাটা করুন । বাজার হোক বা মুদির দোকান, কম করে জিনিস কিনুন। অকারণে খরচ বা অপচয় করবেন না। ভুল পদ্ধতিতে স্টোর করে রাখার ফলেও প্রচুর পরিমাণে খাবার নষ্ট হয়ে যায়। ফ্রিজে বেশি করে খাবার রাখবেন না। এতে নষ্ট হয় খাবার।
আরো পড়ুন – Potatoes: আলু ধোয়া জল! জামা কাপড়ের দাগ তুলতে ‘আলু ব্যবহার’ করুন।কিভাবে জানেন?
সঠিক উপায়ে সংরক্ষণ করুন। অনেকেই ফল ও সবজি স্টোর করার সঠিক পদ্ধতি সম্পর্কে বিশেষ ভাবে জানেন না। যার ফলে অনেক ফল-সবজিই সময়ের আগে পেকে যায়, পচতে শুরু করে। কফির গুঁড়ো হোক বা আনাজের খোসা সব কিছু দিয়েই নতুন করে সৃষ্টি সম্ভব।
আরো পড়ুন – কাঁচা লঙ্কা! দিন দিন লঙ্কা শুকিয়ে যাচ্ছে? তাহলে ‘কাঁচা লঙ্কা টাটকা রাখার উপায়’ জেনে নিন।
যেমন ধরুন পাকা আপেল দিয়ে অ্যাপেল সস বানিয়ে ফেলা যায় বা ধরুন গাজরকে যদি ভিনিগারে মিশিয়ে রাখেন তাহলে কিন্তু অনেক দিনের জন্য তা ব্যবহার করা যায়। আবার আপেলের খোসা, মুরগির মাংসের স্কিন— এ সবই একাধিক পুষ্টিকর উপাদানে সমৃদ্ধ। সেদ্ধ করে খেয়ে নিন।
আরো পড়ুন – ডিমের খোসা ফেলে মারাত্মক ক্ষতি করছেন না তো? জানেন ‘ডিমের খোসা’ কি কাজে লাগে?
স্টিলের কন্টেনারের পরিবর্তে গ্লাস কন্টেনারে বেঁচে যাওয়া খাবার রাখলে সেগুলি দেখতে পাবেন, শেষ করবেন তাড়াতাড়ি। দেখবেন নষ্ট কম হবে। দেখুন কফির গুঁড়োর মধ্যে চিনি ও অলিভ অয়েল মিশিয়ে এটিকে বডি স্ক্রাব হিসেবে ব্যবহার করা যায় অনায়াসে।আনারসের খোসা দিয়ে স্ক্রাব ব্যবহার করে দেখুন। এইভাবেই ভাবনা বদলান, উপকার মিলবে।