Breaking Bharat: এই প্রকৃতির সর্বত্র কতরকমের প্রাণী আছে তা নিয়ে আপনি আমি কেউই হয়তো খুব একটা অবগত নই। কিন্তু দুনিয়ার কত কিছুই যে আছে দেখার তা বোধহয় চাক্ষুষ না করলে বিশ্বাস করা যায় না। তবে অনেক ভয়ঙ্কর প্রাণী থাকলেও কমবেশি সকলেই সরীসৃপে একটু ভয় পান। কি, ঠিক বললাম তো? চতুষ্পদ যেভাবে পোষ মানে সরীসৃপ সেই ভাবেই কথা শোনে কি? অবশ্য সাপ কে অনেকেই নিজেদের বাড়িতে রাখেন বা সখের জন্য সঙ্গে রাখেন অনেকে। তবে সেটা বোধহয় বিদেশেই বেশি। কিন্তু এমন কোনও দেশ আছে যেখানে সাপ নেই? আছে আছে, বলব সেই কথাই।
সাপমুক্ত আয়ারল্যান্ড! কী করে সম্ভব?
দ্বীপ রাষ্ট্র আয়ারল্যান্ড (Ireland), আয়তনে খুব প্রায় ৮৪ হাজার বর্গ কিলোমিটার। রাস্তা ঘাট বন জঙ্গল সবই আছে কিন্তু নেই কোনও সাপ! কি বিস্ময় জাগছে? দেখুন একেবারে নেই বলছি না, শৌখিন ব্যক্তির সংগ্রহে বা চিড়িয়াখানায় অবশ্যই অল্প কিছু সাপ আছে বটে কিন্তু সাধারণ ভাবে একটা দেশে যেভাবে পশু পাখি থাকে সেইভাবে কিন্তু সাপ হীন আয়ারল্যান্ড। কিন্তু এটা কী করে সম্ভব? ন্যাশনাল মিউজিয়াম অফ আয়ারল্যান্ডের প্রাকৃতিক ইতিহাস বিষয়ক গবেষকরা বলছেন আয়ারল্যান্ডে কখনোই কোনো সাপের ফসিল নাকি খুঁজেই পাওয়া যায়নি (No snakes)।
আয়ারল্যান্ডে কোনদিন কোনও সাপ ছিলই না?
মানে ইতিহাস ঘেঁটে দেখলে বলা যাবে যে হয়তো আয়ারল্যান্ডে কোনদিন কোনও সাপ ছিলই না (Snakes have not been seen in this country)। অবশ্য এটা নিয়ে একটা প্রচলিত রূপকথা জানা আছে আয়ারল্যান্ডবাসীর। এখানকার মানুষ বিশ্বাস করেন সেইন্ট প্যাট্রিক নামে এক ধর্মপ্রচারক মন্ত্রের জোরে দেশ থেকে সাপ তাড়িয়ে ছিলেন। মানে, দেশের সব সাপ তিনি সমুদ্রে ডুবিয়ে দিয়েছিলেন এবং সাপের হাত থেকে চিরকালের জন্য আয়ারল্যান্ডকে মুক্ত করেছিলেন।
কিন্তু রূপকথা না আসল কথা বলি আপনাদের। আসলে আয়ারল্যান্ড একটি দ্বীপ (Ireland is an island)।সমুদ্র পথে নিকটবর্তী স্থলভূমির সাথে এই দ্বীপের দূরত্ব প্রায় ৭০ কিমি। কোনও সাপের ক্ষেত্রেই এতটা সাঁতার কাটা কার্যত অসম্ভব। এবার আপনি বলতে পারেন সাধারনত সামুদ্রিক সাপের কথা। তাহলে জানিয়ে রাখি এদের বসবাস উষ্ণ জলবায়ুর অঞ্চলগুলোতে। আয়ারল্যান্ডের ঠাণ্ডা আটলান্টিক মহাসাগর তাদের বসবাসের জন্য উপযোগী নয়।
আরো পড়ুন- সিঙ্গাপুর হয়ে উঠেছে বিত্তশালী! কিন্তু কীভাবে এই দেশটি এত উন্নত ও ধনী হলো?
কিন্তু ইংল্যান্ডে প্রচুর সাপ আছে (There are lots of snakes in England)। এবার প্রশ্ন, পাশাপাশি দুটো দ্বীপের মধ্যে একটিতে সাপ আছে, অন্যটিতে নেই কেন? এর উত্তরে জানাই, ইতিহাস ঘাঁটলে নাকি দেখা যায়, একটা সময় ছিল যখন আয়ারল্যান্ড বা ইংল্যান্ড কোনো দেশেই কোনো সাপ ছিল না। শীতল যুগে এই দ্বীপগুলো সরীসৃপ জাতীয় প্রাণীর বসবাসের জন্য কোনভাবেই উপযুক্ত ছিল না। কারণ শীতল রক্ত বিশিষ্ট সরীসৃপ শ্রেণীর প্রাণীদের বেঁচে থাকার জন্য তাপ শোষণ করতে হয়।আর সেটা পার্শ্ববর্তী পরিবেশ থেকেই তারা সংগ্রহ করে।
আরো পড়ুন- Surrogacy: সারোগেসি কী? এই পদ্ধতিতে কীভাবে সন্তান ধারণ সম্ভব?
কথিত আছে আজ থেকে প্রায় দশ হাজার বছর আগে যখন সর্বশেষ বরফ যুগের অবসান হতে থাকে, তখন প্রথম দিকে আয়ারল্যান্ডের সাথে ইংল্যান্ডের এবং ইংল্যান্ডের সাথে ইউরোপের যাতায়াতের জন্য ছিল স্থলপথ অর্থাৎ রাস্তা দিয়ে যাতায়াতের ব্যবস্থা কিন্তু পৃথিবী যত উষ্ণ হতে থাকে, এসব বরফের সংযোগপথ ততোই গলতে থাকে এবং একসময় প্রায় সমুদ্রে বিলীন হয়ে যায় সাথে সাথে আয়ারল্যান্ড এবং ইংল্যান্ডকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপে পরিণত হয়। এই ঘটনা আজ থেকে প্রায় ৮,৫০০ বছর আগের।
আরো পড়ুন- বাসে বা ট্রেনে ভ্রমণ করেও ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন তাড়াতাড়ি? অবহেলা করবেন না!
ততদিনে বাদামী ভালুক, বন্য শূকর, এবং বন বিড়াল সহ বেশ কিছু প্রাণী আয়ারল্যান্ডে স্থান করে নিলেও সরীসৃপরা তখনও সেখানে পৌঁছাতে পারেনি। আয়ারল্যান্ড বিচ্ছিন্ন দ্বীপে পরিণত হওয়ার আরও ২,০০০ বছর পরে, অর্থাৎ আজ থেকে প্রায় ৬,০০০ বছর আগে ইংল্যান্ডের সাথে ইউরোপের সংযোগ পথ সমুদ্রে ডুবে গিয়ে ইংল্যান্ডকে দ্বীপে পরিণত হয়। কিন্তু সাপ সেখানে পৌঁছতে পারে নি, আবহাওয়াও অনুকূল ছিল না। পরে অনেক ব্যবসায়ী সাপ চাষ শুরু করলেও টাকা পয়সার অভাবে বন জঙ্গলে সাপ ছেড়ে দেন। এখন তারা যদি বংশবিস্তার করে বংশ শুরু করে তাহলে সাপ আসবে আয়ারল্যান্ডে ।