Breaking Bharat: সিঁদুর বিবাহিত মহিলার প্রতীক! সিঁথির এই সিঁদুরে, সবকিছু যেন বদলে গেল”! দুই আঙ্গুলের মাঝে এক চিমটে (Sinthir Sindur) ! হিন্দু ধর্মে লাল রঙের ওই জিনিসটির মূল্য অমূল্য, কেন? কেনই বা মাথার সিঁথিকে বেশি নেওয়া হয় বিবাহিত মহিলার চিহ্ন বয়ে নিয়ে যাবার জন্য?
আপনি কি বাংলা ছবি দেখেন? পারিবারিক গল্পের সিনেমা দেখতে পছন্দ করেন? তাহলে তো আপনি নিশ্চয়ই মুনমুন সেন অভিনীত ব্যবধান ছবিটি দেখে থাকবেন? আরে না না মশাই চিন্তা করবেন না । সিনেমার গল্প শোনাতে বা বিজ্ঞাপন দিতে আমরা বসিনি।
আসলে ওই ছবিতে মহান সংগীতশিল্পী আশা ভোঁসলের একটা গান ছিল। বিয়ে বাড়ির ভিডিওতে এই গানটা থাকবেই থাকবে। আর ঠিক যখন বর কনেকে সিঁদুর পরাবে ভিডিও এডিটাররা এই গানটাকে বেছে নেবেন বাঙালি বিয়ের প্রধান মুহুর্তের বৈশিষ্ট্যকে ফুটিয়ে তোলার জন্য। গানের চারটি লাইন এই রকম,
“কত না ভাগ্যে আমার, এ জীবন ধন্য হলো
সিঁথির এই একটু সিঁদুরে, সবকিছু বদলে গেল”!
হিন্দু মহিলারা কেন সিঁথিতে সিঁদুর পরেন? (Sinthir Sindur):
চিরাচরিত প্রথা আর নিয়ম মেনে যুগের পর যুগ বছরের পর বছর এভাবেই বিয়ে হয়ে আসছে। একবারও ভেবে দেখতে ইচ্ছে করে কেন সিঁদুর? আর কেনই বা মাথার বিশেষ স্থানে অন্য কোথাও নয় ? সিঁদুর বিবাহিত মহিলার প্রতীক (Vermilion symbolizes a married woman) যা তাঁরা স্বামীর মঙ্গলকামনা করে সিঁদুর পরে থাকেন।
হিন্দু ধর্মে মনে করা হয়, স্ত্রী তাঁর সিঁদুরের শক্তিতে স্বামীকে যে কোনও বিপদ থেকে বাঁচাতে পারেন। তাই ধর্মে বিবাহিত মহিলাদের বিয়ের পর সিঁদুর পরা রীতি। হিন্দু ধর্মে বলা হয়, সিঁদুরের লাল রং স্বামীর দীর্ঘ জীবনের কামনা করে মহিলারা পরেন। লাল রং শক্তি ও ভালবাসাকে বহন করে বলে মনে করা হয়।
কিন্তু শুধুই কি ধর্ম? বিজ্ঞান কোনও ব্যাখ্যায় কি দেয় না?
অবশ্যই আছে। বিশ্বাস এবং বিজ্ঞান এই দুটোকে নিয়েই এই প্রতিবেদন। যেহেতু বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর, তাই প্রথমে ধর্মের কথা বলা যাক। হিন্দু শাস্ত্রে বলা হয়, শরীরের বিভিন্ন স্থানে দেবতা বিরাজমান থাকেন।
স্বয়ং ব্রহ্মা কপালে অধিষ্ঠান করেন। ব্রহ্মাকে সম্মান জানাতে ও তুষ্ট রাখতে বিবাহিত মহিলাদের কপালে সিঁদুর পরা শাস্ত্র মতে প্রয়োজনীয়। সিঁদুরকে শক্তির প্রতীক হিসেবে মানা হয় (Sindur is a symbol of strength)। প্রাচীনকাল থেকে বলা হয়, লাল রং সৃষ্টির প্রতীক। লাল রংকে প্রকৃতির সৃষ্টিকর্তা মানা হয়।
তাই ভারতীয় নারীরা একান্ত প্রসাধন হিসেবে সিঁদুরকে সেই কোন প্রাচীনকাল থেকে ধারণ করে আসছেন। আচ্ছা এ বিষয়ে বলে রাখা ভালো অনেকের মতে, নারীর কপালে সিঁদুর সন্তানধারণের ক্ষমতাকে বর্ণনা করে। তবে এসব যুক্তিকে বিজ্ঞান সমর্থন করে না। তাহলে এবার বৈজ্ঞানিক দর্শন ব্যাখ্যা করা দরকার।
যেকোনো ধ্যান ধারণার দুটো দিক থাকে। এবার আপনার সামনে কোনটা কিভাবে কোন পরিস্থিতিতে আসছে তার ওপর বিশ্বাস আর যুক্তি নির্ভর করে। বিজ্ঞান মতে, মহিলারা মাথার সে স্থানে সিঁদুর পরেন সেখানের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ নার্ভ। ফলে সিঁদুর মেডিটেশনে সাহায্য করে।
সিঁদুর পরার সময় মাথায় চাপ প্রয়োগ হয়, এটা একপ্রকারের ম্যাসাজ। এর ফলে ঘুম ভালো হয়। সিঁদুরের মধ্যে যে উপাদান থাকে তা মাথা ঠান্ডা রাখতেও সাহায্য করে। অর্থাৎ সিঁদুর শরীর ও মন দুয়ের জন্যই জরুরি। তবে শুধু সিঁদুর নয় বিবাহিত নারীর আরো কিছু লক্ষণ আছে।
আরো পড়ুন- Divorce : ডিভোর্সের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে সম্পর্ক? শেষ সুযোগ সম্পর্ক বাঁচানোর? কী করবেন?
সেই নিয়েও বিশ্বাস আর বিজ্ঞানের পাশাপাশি হেঁটে চলা বহু বছর ধরে। নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন কিসের কথা বলছি। একজন হিন্দু মহিলার বৈবাহিক চিহ্নই হল এই সিঁদুর এবং শাঁখা-পলা। একজন হিন্দু বিবাহিত মহিলার অবিচ্ছেদ্য অলংকার। তবে এই রীতির সঙ্গেও কিন্তু হিন্দু শাস্ত্রের একটা যোগাযোগ আছে।
হিন্দু বিবাহিত মহিলাদের স্বামীর মঙ্গলকামনা:
শাঁখা পরার পেছনে রয়েছে অন্য এক পৌরাণিক কাহিনি। সেটাই বলব এবার। আসলে পুরাকালে শঙ্খাশূর নামে এক অত্যাচারী অসুরের তান্ডবে দেবলোক অশান্ত হয়ে উঠে। সেই সময় সকল দেবতারা মিলে ভগবান নারায়ণের দ্বারস্থ হন। দেবতাদের কষ্ট না সহ্য করতে পেরে নারায়ণ স্বয়ং যুদ্ধে অবতীর্ণ হন।
আরো পড়ুন- Dog crying : বাড়ির পাশে কুকুর কাঁদে? অচিরেই অমঙ্গল ঘটার ইঙ্গিত পেলেন?
নারায়ণ সেই সময় শঙ্খাশূর-কে বধ করে দেবতাদের রক্ষা করেন। এদিকে শঙ্খাশূর-এর ধর্মপরায়ণ স্ত্রী তুলসী স্বামীকে ফিরে পাওয়ার আশায় প্রার্থনা শুরু করেন। এরকম পতিব্রতা স্ত্রীকে দেখে, আর তুলসীর প্রার্থনায় সন্তুষ্ট হয়ে নারায়ণ শঙ্খাশূর-এর হাড় দিয়ে শাঁখা তৈরি করেন।
আরো পড়ুন- childhood : অতীতের ছোটবেলা! আমাদের গেছে যেদিন একেবারেই কি গেছে? কিছুই কি নেই বাকি তার?
সেই থেকেই হিন্দু বিবাহিত মহিলাদের স্বামীর মঙ্গলকামনায় এই শাঁখা পড়ার প্রচলন শুরু হয়েছে বলে মনে করা হয়। অর্থাৎ ব্রম্ভার জন্য সিঁদুর আর বিষ্ণুর জন্য শাঁখা। এত কিছুর পরও প্রশ্ন একটাই কেন নারীদেরই এইসব প্রমাণ দিতে হবে ? পুরুষ কোন চিহ্ন বহন করবেন নাকি এর পর থেকে? বিষয়টি যে যার ব্যক্তিগত। আমরা কারোর ভাবাবেগে আঘাত করি না।