Breaking Bharat: ৭9 নট আউট! কেমন ব্যাটিং করছেন আপনার ভালোবাসার শালিমার? খোঁজ নিয়েছেন কি?
একটা সময় ছিল যখন বাঙালি শুধুই জানত ‘মেরা পেয়ার শালিমার‘। এখন অবশ্য পরিস্থিতি পাল্টেছে আর জুড়েছে ভালোবাসার নতুন নতুন সঙ্গী। তবু শালিমার পুরনো প্রেম বলে কথা। সহজেই কি প্রাক্তন ভোলা যায়? চলুন খোঁজ নেওয়া যাক কেমন আছে শালিমার!
টেলিভিশনের পর্দায় এখনো সকলের মুখিয়ে থাকেন সেই জনপ্রিয় জিংগেল শোনার জন্য। যুগ বদলেছে সময় পাল্টেছে, তাই পাল্টে গেছে পুরনো সবকিছু। শুরুটা হয়েছিল ১৯৫৫ সালে।নারকেল শাঁস কিনে তা মেশিনে পেষাই করে নারকেল তেল বিপণন , এটাই ছিল প্রথম ধাপ।
একটা ব্র্যান্ড যা পুরোপুরি ভাবে টিকে ছিল মানুষের বিশ্বাসের উপর। সাফল্য এসে ধরা দিয়েছিল সহজে। বঙ্গবাসীর প্রিয় শালিমার ব্র্যান্ড স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময় থেকে আধিপত্য বজায় রেখেছিল। আসলে এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এক নস্টালজিয়া। যেটা কোনদিনই ভোলার নয়।
বঙ্গবাসীর প্রিয় শালিমারের কথা বলতে গেলে বাঙালি মাত্রই ব্যবসার প্রতি অনিহা প্রকাশ করে এই ভাবনা থেকে একটু বেরিয়ে আসতে হবে আপনাকে। ননীগোপাল মিত্রর ‘সুলেখা কালি’, গৌরমোহন দত্তের ‘বোরোলিন’ কিন্তু সহজেই হয়ে উঠতে পেরেছিল বঙ্গ জীবনের অঙ্গ। সেটার জন্য অবশ্য কোন বিদেশি মার্কেটিং অবাঙালি ব্যবসাদারের প্রয়োজন হয়নি।
চারের দশকের প্রকৃতিনাথ ভট্টাচার্য নামে এক বাঙালি ব্যবসায়ী পরাধীন ভারতেও স্বাধীনভাবে ব্যবসা করার স্বপ্ন দেখেছিল এবং দেখিয়েছিল। অদম্য জেদ আর ইচ্ছা শক্তি মানুষকে কোথায় পৌঁছে দিতে পারে তিনি যেন তারই এক নিদর্শন হয়ে উঠেছিলেন। বাবা ছিলেন সংস্কৃতির অধ্যাপক।
শিবপুর দীনবন্ধু ইন্সটিটিউশন থেকে ম্যাট্রিক পাশ করে তিনি কলকাতার রিপন কলেজে বিএসসি পড়াশোনা করে সাফল্য লাভ করেন। চিরাচরিত প্রথায় গা ভাসিয়ে দেননি। ১৯৪৪-সাল নাগাদ অল্প কিছু পুঁজি সম্বল করে জ্ঞানাঞ্জন নিয়োগীর পরামর্শে ইঞ্জেকশন অ্যাম্পুল তৈরির ব্যবসা শুরু করেন প্রকৃতিনাথ। প্রথমদিকে অল্প কিছু শ্রমিক নিয়ে কাজ করে সাফল্য পেয়েছিলেন বটে।
কিন্তু প্রতিকূল পরিস্থিতি তার পিছু ছাড়েনি। তাই বছরখানেক সেই ব্যবসা চালানোর পর বন্ধু পঞ্চানন মণ্ডলের সঙ্গে মিলে নতুন কিছুর স্বপ্ন নিয়ে এবার শুরু করেন ‘শালিমার’। প্রথমের দিকে অপরিশোধিত তেল কিনে সেটা শোধন করাই ছিল মূল কাজ। ১৯৫৫ সাল থেকে ভাবনায় পরিবর্তন আসে।
নারকেল শাঁস কিনে তা মেশিনে পেষাই করে নারকেল তেল বিপণন শুরু করা হয় তখন থেকেই। দুই বন্ধুর অক্লান্ত পরিশ্রমে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে ‘শালিমা‘র এর নাম।শুধু নারকেল তেল বললে এখন নিতান্তই কম বলা হয়, শালিমার শেফ গুঁড়ো মশলা, নন স্টিকি তেল, সরষের তেল অন্যতম পণ্য। তবে মানতে হবে ‘শালিমারের নারকেল তেল‘ই সবথেকে জনপ্রিয় এবং বিক্রিত পণ্য।
আগেকার দিনে নারকেল তেল ফুরিয়ে গেলেই বাড়ির মা-কাকীমারা সেই নারকেল তেলের কৌটোটিকে পাল্টে নিয়ে তাকে ব্যবহার করতেন চাল মাপার কৌটো হিসেবে। প্রকৃতিনাথ নেই, কিন্তু পরবর্তী প্রজন্ম এগিয়ে নিয়ে চলেছে শালিমার কে।
আধুনিকতার নতুন মোড়কে এখন বদলে গেছে শালিমারের প্যাকেজিং। তবু আজও রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে একবার সবুজ কৌটোর দিকে কোন দোকানে চোখ পরলে থমকে যাই আমি আপনি। এটাই শালিমারের সব থেকে বড় সাফল্য।