Breaking Bharat: তাজমহলের গোপন রহস্য! কলঙ্ক নাকি আলোর উত্থান ? যে তাজমহল কে দেখেন আপনি সেটা আসলেই নকল, জানেন? (Secrets of the Taj Mahal in Agra)
প্রেম ছাড়া পৃথিবী অচল আর প্রেমের স্মৃতিচিহ্ন ছাড়া ভালবাসার গরিমা প্রকাশ পায় না। কিন্তু ভালোবাসার মধ্যে একটা কলঙ্ক থাকে যেটাকে অস্বীকার করার উপায় নেই। সবথেকে বড় উদাহরণ তাজমহল। তাজমহল মুঘল সম্রাট শাহজাহানের এক অমর সৃষ্টি। এটি ভারতের আগ্রায় অবস্থিত।
পৃথিবী জুড়ে তাজমহল ভালোবাসার একটি অপরূপ নিদর্শন। কিন্তু এর মধ্যেও কি আছে কোন অন্ধকার অধ্যায় যা এখনো অজানা? চলুন জেনে নেওয়া যাক এই অসাধারণ স্থাপত্য সম্পর্কে কিছু না জানা তথ্য।
সম্রাট শাহজাহানের তাজমহল (Taj Mahal Agra):
কোথায় আছে কষ্ট না করলে কেষ্ট লাভ হয় না অর্থাৎ পরিশ্রম না করলে কিছুতেই সাফল্যে মেলেনা। যেটা চান সেটা পাওয়ার জন্য এক মনে সাধনা করতে হবে, লক্ষ্য থেকে সরে গেলে চলবে না। স্থাপত্য কীর্তি পৃথিবীতে বহু আছে কিন্তু পৃথিবীর অন্য কোন স্থাপত্য তাজমহলের মত খ্যাতি লাভ করতে পারে নি।
তাইতো পৃথিবীর আটটি আশ্চর্যের মধ্যে এটি অন্যতম। এর জন্য অবশ্য সম্রাট শাহজাহানকে অনেক বিনিদ্র রজনী যাপন করতে হয়েছে। সমগ্র পৃথিবী তন্ন তন্ন করে খুঁজে ফিরেছেন সম্রাটের লোকজন সর্বোৎকৃষ্ট মহার্ঘ্য পাথরের সন্ধানে। বলা হয় শাহজাহান তার বেগম মমতাজের স্মৃতির উদ্দেশ্যে (In memory of Begum Mumtaz) এই তাজমহল গঠন করেছিলেন।
১৬৩১ সালে ৩৯ বছর বয়সে ১৪ তম সন্তান জন্মের সময় মমতাজের মৃত্যু হয়। শোনা যায় পত্নীর বিয়োগে শোকার্ত সম্রাট টানা দু’বছর রাজদরবারে শোক পালন করেছিলেন। শাহজাহান শোকে এমন মুহ্যমান হয়ে গিয়েছিলেন যে, কয়েক মাসের মধ্যে তাঁর দাড়ি ও চুল ধবধবে সাদা হয়ে যায়। মমতাজের মৃত্যুর পরপরই তাজমহলের নির্মাণ কাজ শুরু হয়নি (The construction work of Taj Mahal has not started)।
তাজমহল তৈরি করতে কত শ্রমিক লেগেছিল? (taj mahal story)
মৃত্যুর পর তাঁর দেহ আগ্রার একটা জায়গায় রাখা হয়। সেখানে সযত্নে বিজ্ঞান সম্মত উপায়ে দীর্ঘ ৯ মাস রাখবার পর এখন যেখানে তাজমহল নির্মাণ করা হয়েছে, সেখানে আনা হয়। প্রিয় পত্নীর স্মৃতিকে অম্লান করে রাখার উদ্দেশ্যে তার সমাধিকে ঘিরে সম্রাট শাহজাহান তাজমহল নির্মাণ করেন (Emperor Shah Jahan built the Taj Mahal)। তাজমহল ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট ও বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের একটি।
ভাবনা মাথায় আসে রাজার বা সম্রাটের আর তাকে বাস্তবায়িত করেন কর্মীরা বা প্রজারা। এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তাজমহলের নক্শা প্রথমে কাঠের ছাঁচে তৈরি করা হয়েছিল। ভারতবর্ষের বাইরে থেকেও ভাষ্কর্য্য শিল্পে দক্ষ একাধিক গুণি ব্যক্তিদের তাজমহলের নির্মাণ (Construction of Taj Mahal) কাজে নিযুক্ত করা হয়।
ইতিহাস থেকে জানা যায় সর্বমোট ১৫ জন নির্মাণবিদ তাজমহল তৈরিতে সক্রিয়ভাবে বলিষ্ঠ ভূমিকা নেন। কিন্তু জনশ্রুতি তাজমহল তৈরি করেছিলেন যে শিল্পীরা, সম্রাট সৌধ নির্মাণের পর তাঁদের হাতের আঙ্গুল নাকি কেটে দেন। যাতে আর দ্বিতীয় তাজমহল তারা না তৈরি করতে পারেন। এখান থেকেই ইতিহাস প্রশ্ন তোলে একি ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ না নিজের আধিপত্যকে চিরস্থায়ী করার অহংকার?
তাজমহলের প্রধান নকশাকার কে ছিলেন ? (taj mahal):
ভোরের আলোয় এক হালকা গোলাপীর মূর্ছনায় মাতোয়ারা হয়ে ওঠে তাজমহল। সন্ধ্যার আকাশে এটি দুধভরা সাদা সৌধ। চাঁদনি রাতে একটি হালকা নীল রঙের আভায় এক মনোমুগ্ধকর রূপ । এই পরিবর্তন তাজমহলকে দিয়েছে অনন্য এক বৈচিত্র্যময় পরিচয়। তাজমহলের প্রধান নকশাকার ছিলেন ওস্তাদ আহমেদ লাহুরি, আবদুল করিম মামুর খান এবং মাকরামাত খান যারা সে সময়ের সবচেয়ে নিখুঁত, পারদর্শী, উচ্চ পর্যায়ের প্রকৌশলী ও নকশাকার ছিলেন।
এছাড়া তাজমহলের বিখ্যাত ক্যালিওগ্রাফিগুলো করেছিলেন তৎকালের ক্যালিওগ্রাফার আবদুল হক, যার প্রশংসনীয় ক্যলিওগ্রাফি দেখে মুগ্ধ হয়ে সম্রাট নিজেই তাকে ‘আমানত খান’ উপাধিতে ভূষিত করেন। আপনি যদি এর গঠনগত দিক জানতে চান তাহলে বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হল।
পুরো তাজমহল ১৮০ ফুট উঁচু যার প্রধান গম্বুজটি ২১৩ ফুট উঁচু এবং ৬০ ফুট চওড়া এবং এর চারপাশে চারটি মিনার আছে যার প্রতিটির উচ্চতা ১৬২.৫ ফুট। পুরো কমপ্লেক্সটির আকার ১৯০২ বাই ১০০২ ফুট। শুধু তাজমহলটি ১৮৬ বাই ১৮৬ ফুট মার্বেল পাথরের ওপর নির্মিত। এর প্রধান প্রবেশদ্বার ১৫১ বাই ১১৭ ফুট চওড়া এবং ১০০ ফুট উঁচু।
এটি নির্মাণ করতে সুদক্ষ ২০ হাজার শ্রমিকের ২২ বছর সময় লেগেছিল। তাজমহল নির্মাণের জন্য তিনি ২২ হাজার মানুষ নিযুক্ত করেন, যারা ছিলেন শ্রমিক, স্টোনকাটার, চিত্রশিল্পী, সূচিকর্মশিল্পী ও ক্যালিগ্রাফার। নির্মাণ সামগ্রী বহনের জন্য ১০০০ হাতি ব্যবহার করা হয়েছিলো। তাজমহলের ভেতর ও বাহিরের ক্যালিগ্রাফির চমৎকার কাজ আছে। মমতাজ মহলের সমাধি ক্ষেত্রেও তাঁর পরিচিতি ও প্রশংসার শিলালিপি দেখা যায়।
সৌন্দর্য সৃষ্টির জন্যই কি আগ্রার তাজমহল? (Taj Mahal Agra):
যারা আগ্রা বেড়াতে যান তারা তাজমহল না দেখে বা সেখানে নাচ ছবি তুলে ফেরেন না। বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন সময়ে তাজমহলের মতো নানা ধরনের শৌধের প্রতিকৃতি তৈরি হয়েছিল পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য। আজ থেকে সাড়ে ৩শত বছর আগে সম্রাট শাহজাহান মন মন স্বর্ণ, হীরা, চূনি, পান্না, মণি-মানিক্য সংগ্রহ করে সৌন্দর্য সৃষ্টির জন্য তাজমহলে লাগিয়ে ছিলেন।
আগ্রার তাজমহল ভ্রমণের সকল তথ্য:
তাজমহলে একটি সুড়ঙ্গ রয়েছে যা যমুনা নদীর ধার থেকে শুরু হয়ে তাজমহল গিয়ে শেষ হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এই সুড়ঙ্গটি সম্রাট শাহজাহান (Emperor Shah Jahan) যমুনা নদীর ধার থেকে তাজমহলে আসার জন্যে ব্যবহার করতেন। তাজমহল আসলে সমাধি ক্ষেত্র যার দিকে তাকিয়ে নিজের ভালোবাসাকে স্মরণ করতেন সম্রাট। কিন্তু শেষ জীবনে তার পুত্র তাকে বন্দী করে রাখেন।
আরো পড়ুন- Snake Dream : সাপের স্বপ্ন দেখলে বংশ বৃদ্ধি এমনকি কোটিপতিও হতে পারেন আপনি, জানেন?
আরো পড়ুন- Dakshineswar : সতীপীঠ নয়, তবুও দক্ষিণেশ্বরের কালী মন্দির কেন এত আকর্ষণ?
তার মৃত্যুর পর তাজমহল যেন গরিমা হারায়। ১৯৮৪ সালের পর থেকে মূল সমাধিতে আর কাউকেই ঢুকতে দেওয়া হয়না। এই সমাধির ওপর তলায় বানানো হয়েছে ঠিক একই রকমের আরেকটি নকল সমাধি। পর্যটকরা এই নকল সমাধি দেখার সুযোগ পান। জয়পুরের সাদা মার্বেল দিয়ে তৈরি তাজমহল সম্রাট কালো মার্বেল দিয়ে আরেকটি সৌধ করতে চাইলেও সেটা আর সম্ভব হয়নি।
আরো পড়ুন- Wedding day dress: বিয়ের দিনে সাজগোজ! এই বিয়ের মরশুমে কীভাবে সাজবেন?
তাজমহলের নির্মাণ শৈলীতে একটি রহস্যময় দিক লক্ষ্য করা যায়। যখন আপনি এই সৌধের দিকে এগোতে থাকবেন, মনে হবে সেটি আকারে ছোট হচ্ছে। আর যখন দূরে সরে আসবেন, মনে হবে বড় হচ্ছে। তাই গাইডরা বলেন, এতে তাজমহলকে নিজের মনে করার অনুভূতি জাগে। এভাবেই ভালোবাসা, রহস্য, কলঙ্ক সবের সাক্ষী হয়ে পৃথিবীর অন্যতম আশ্চর্য নির্মাণ তাজমহল আজও ঠিক আগের মতই দাঁড়িয়ে আছে।