Breaking Bharat: কবিগুরুর রবি ঠাকুরের ‘সাধের শান্তিনিকেতন’ (Santiniketan) কে কতটা চেনেন আপনি? ঐতিহ্য থেকে সাহিত্য সবকিছুর মেলবন্ধন এই শান্তিনিকেতন! শান্তিনিকেতনের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে বিশ্বভারতী। উত্তরায়ণ চত্বরে রয়েছে রবীন্দ্রনাথ ব্যবহৃত হাম্বের গাড়ি! এছাড়াও শান্তিনিকেতনে এই পৌষ মেলা সত্যি সত্যি মিলনস্থল।
বাঙালির পরম আরাধ্য রবি ঠাকুরের শান্তিনিকেতন কে নিয়ে এমন কিছু অজানা কথা আজ আপনাদেরকে জানাতে চলেছি আমরা যার পর ইচ্ছে করতেই পারে দু-একদিনের ছুটি নিয়ে এই পবিত্র ক্ষেত্র থেকে ঘুরে আসার (santiniketan rabindranath tagore)।
রবীন্দ্রনাথ শুধু একটা নাম নয় বাঙালির আবেগ। বিশ্বকবি শুধু একটা উপাধি নয় বাঙালির অহংকার। ঠাকুর পরিবারের ছেলেটা গোটা বিশ্বের কাছে নিজেকে তুলে ধরতে পেরেছিলেন শুধুমাত্র তার প্রতিভার গুনে। জীবনের ঘাত প্রতিঘাত সামলে সৃষ্টির নেশায় মত্ত হয়েছিলেন আজীবন।
যখনই দু’দন্ড শান্তি খুজতে চেয়েছেন ছুটে গেছেন বোলপুরে কারণ সেখানেই তার শান্তির আশ্রয়স্থল। শান্তিনিকেতন বাঙালির কাছে ভ্রমণ ক্ষেত্র নয় ঠাকুরের কারণে তা তীর্থক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।
ঐতিহ্য থেকে সাহিত্য সবকিছুর মেলবন্ধন এই শান্তিনিকেতন:
হাওড়া বা শিয়ালদা স্টেশন থেকে বোলপুর যাওয়া মাত্র কয়েক ঘন্টার ব্যাপার (santiniketan bolpur)। অনেকে আবার কলকাতার শহর থেকে বা বিভিন্ন শহরতলী থেকে গাড়ি নিয়েও বোলপুর যেতে পারেন। বসন্ত উৎসবের সময় পরিবেশটা একেবারে পাল্টে গেলেও বছরের বাকি সময় শান্তিনিকেতন নিঃসন্দেহে আপনার মনে এক আলাদা প্রশান্তি জাগিয়ে তোলার রসদ জোগাবে।
শিল্পকলা থেকে সংস্কৃতি, ঐতিহ্য থেকে সাহিত্য সবকিছুর মেলবন্ধন যেন এই শান্তিনিকেতনে। পরশ মেলা আর বসন্ত উৎসব শুধুমাত্র এই দুটো কারণেই শান্তিনিকেতনে মানুষের ভিড় হয় এ তথ্য ভুল। বাউল গানের পিঠস্থান, কোপাই নদীর ধার, আদিবাসী শিল্পকলা, সোনাঝুরির জঙ্গল- শান্তিনিকেতন পর্যটকদের প্রিয় জায়গা (Santiniketan is a favorite place for tourists)।
শান্তিনিকেতনের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে বিশ্বভারতী:
এই শান্তিনিকেতনের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে বিশ্বভারতী, যা ছিল কবি গুরুর প্রাণ। রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি বিজড়িত এই স্থানে তাঁর সংস্পর্শ ছাড়াও রয়েছে আরও অনেক আকর্ষণ। কিন্তু যারাই শান্তিনিকেতনে বেড়াতে যান তারা বিশ্বভারতীর আকর্ষণ এড়িয়ে যেতে পারেন না (Visva-Bharati University)।
শান্তিনিকেতন ও শ্রীনিকেতন নামে দুটি আলাদা প্রাঙ্গন রয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। সাম্প্রতিক কালে বারবার বিশ্বভারতী নানা চর্চায় উঠে এসেছে। রাজনৈতিক কারণে বিশ্বভারতীর গৌরব অনেক সময় কালিমা লিপ্ত হয়েছে। বিশ্বভারতীর পাঠ্যভবন, শিক্ষা ভবন, বিদ্যাভবন, রবীন্দ্রভবন, চিনা ভবন, কলা ভবন, সংগীত ভবন এগুলো র সব কিছুরই আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
বিশ্বভারতীর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর:
তাই হেঁটে ঘুরে দেখতে গেলে বিশেষ অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন আছে। ১৯১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর বিশ্বভারতীর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (rabindranath tagore)। ছাতিমতলা, আম্রকুঞ্জ, শিল্প ভবন, শিক্ষাসত্র, দর্শন সদন, আনন্দ পাঠশালা, রতন কুঠি, নাট্য ঘর থেকে শুরু করে প্রশাসনিক ভবন এমনকি বাংলাদেশ ভবনও ঘুরে দেখার মতো।
আরো পড়ুন – বিয়ে মানে সাত জন্মের বন্ধন কিন্তু বিয়ের অনুষ্ঠানে একাধিক নিয়ম পালন আজও কতটা প্রাসঙ্গিক?
আপনি যদি প্রথমবার শান্তিনিকেতন যান তাহলে অবশ্যই উত্তরায়ণ কমপ্লেক্স ঘুরে দেখতে হবে আপনাকে। উদয়ন, কোণার্ক, শ্যামলী, পুনশ্চ এবং উদিচি এই পাঁচটি ভবন রয়েছে এই কমপ্লেক্স জুড়ে। যার মধ্যে রবি ঠাকুর প্রতিটি ভবনে কখনো না কখনো থেকেছেন আবার কখনো শান্তিনিকেতনে (Santiniketan) আশা দেশের এবং বিদেশীর অতিথিরাও এই ভবনে কাটিয়ে গেছেন বেশ কিছুটা সময়।
উত্তরায়ণ চত্বরে রয়েছে রবীন্দ্রনাথ ব্যবহৃত হাম্বের গাড়ি:
এখানে যেতে গেলে হাতে কিছুটা সময় রাখা দরকার। উত্তরায়ণ চত্বরে রয়েছে রবীন্দ্রনাথ ব্যবহৃত হাম্বের গাড়ি। রয়েছে একটি সংগ্রহশালা। সেখানে রবীন্দ্রনাথ তো আছেনই পাশাপাশি ঠাকুর পরিবারের সদস্যদের ব্যবহার করা নানা জিনিস রাখা আছে। টিকিট কেটে এখানে প্রবেশ করতে পারেন।
এখানকার পরিবেশটাই যেন সংস্কৃতি চর্চার জন্য আদর্শ। এখানে গেলে রাস্তা ঘাটে, কোপাই নদীর ধারে বাউল শিল্পীদের গান শুনতে পাবেন। কোথাও কোথাও অনুরোধের আসর কোথাও বা বাউল আখড়া । তবে শনিবার সোনাঝুরির হাটে যাওয়াটা কিন্তু দরকার। এই অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে না পারলে জীবনটাই বৃথা।
শান্তিনিকেতনে এই পৌষ মেলা সত্যি সত্যি মিলনস্থল:
শান্তিনিকেতনে গেলে পৌষ মেলা দেখা দরকার। এই পৌষ মেলা সত্যি সত্যি মিলনস্থল যেখানে আদিবাসী নাচের তালে পর্যটক এবং আগত অতিথিরাও পা মেলান সহজ ছন্দে। এখানেই শেষ নয়, সেলিব্রেটিদের দেখা তো পাবেনই। মেলায় হাজির থাকেন সংগীত শিল্পী, চিত্রশিল্পী, কবি, আরো কত গুনি মানুষ।
আরো পড়ুন – আপনি ‘চটি বই’ কিনছেন বা পড়ছেন! যৌনতার গল্প পড়ার আগ্রহ কেন এত বেশি?
সিনেমায় যেমনটা দেখেছেন বাস্তবে সেভাবেই দেখতে পাবেন পৌষ মেলার আনন্দকে। মাদলের তাল, একতারার সুর, বাঁশীর মেঠো আওয়াজ নিয়ে যাবে স্বর্গীয় জগতে। বাংলার সাবেকি মাটির বাড়ি খড়ের চাল দেখতে সৃজনী শিল্প গ্রামে অবশ্যই যাবেন। গ্রামের সহজ সরল মানুষ আপনাকে সাহায্য করবেন আলাদা করে গাইডের দরকার পড়ে না। দেওয়ালে নানা শিল্পকলা পোড়া মাটির কাজ আপনার মন ভরিয়ে তুলবে।
আরো পড়ুন – কলেজের প্রোফেসর বা সুন্দরী ম্যাডামের প্রেমে পড়েছেন? এখানে কি প্রেমে পড়া বারণ?
এটা আমাদের অনুরোধ যদি একটু সময় পান কখনো না গিয়ে থাকেন, তাহলে পরিবার বা প্রিয়জনকে নিয়ে এবার চলে যান শান্তিনিকেতনে। জীবনের এক অন্য ধরনের ভালোলাগা অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করবেন আপনি।