Breaking Bharat: সংসারে থেকে বিবেক বৈরাগ্য সম্পর্কে কোন ধারণা পোষণ করেন কি?
সংসার এক মায়াময় জগত যেখানে কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মায়া – সব ধরনের ছলনা ছড়িয়ে আছে আপনাকে বিপথে চালিত করার জন্য। এর মাঝখান থেকে আপনি যদি আসল রত্ন টিকে জীবনের সঙ্গে সংযুক্ত করতে পারেন তবেই সার্থক হবে জীবন যাপন।
মানুষের জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্যই হলো ‘ঈশ্বর লাভ‘। আর সেটা মোহ মায়া লোভের বশবর্তী হয়ে পাওয়া যায় না। সব সময় পাওয়ার আনন্দে মশগুল থাকলে, ত্যাগ স্বীকারের সুখ সম্পর্কে পরিচিত হবেন কী করে? বৈরাগ্য না এলে ঈশ্বরের চরণে ঠাঁই মেলে না।
হয়তো ভাবছেন এটা আবার কেমন ধরনের প্রতিবেদন? আসলে প্রত্যেকটা মুহূর্তে জাগতিক বাস্তবের নানা প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলতে বলতে জীবনের আসল বোধকেই প্রাধান্য দেয়া হয় না। অথচ ভাবুন জন্মের সময়ও কিছু নিয়ে আসিনি আমরা আর মৃত্যুর সময়ও কিছু নিয়ে যাওয়ার মত ক্ষমতা নেই আমাদের।
কিন্তু মাঝখানের এই বাকি সময়টা শুধুই চাওয়া পাওয়ার হিসেব করে কাটিয়ে দিই আপনি আমি। অথচ ভক্তিরসে ডুব দিলে যে প্রকৃত সুখের পরশপাথরকে ছোঁয়া যায় সে কথাটা ভেবেও দেখিনা। বিবেক আর বৈরাগ্যের কথা যখন হচ্ছে তখন শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের কথা বলতেই হয়। তাঁর মুখনিঃসৃত বাণী অমৃতসম, তাইতো তা কথামৃত।
শ্রীরামকৃষ্ণ বলতেন দুধ এবং জলকে যদি মিশিয়ে দেয়া হয় তাহলে ‘রাজহাঁস‘ দুধটুকু শুষে নেয় জল পড়ে থাকে। তাই ভালো খারাপের মধ্যে বসবাস করতে হলেও ঈশ্বরের আশীর্বাদে ভালো টুকু বেছে নেওয়ার ক্ষমতা রাখতে হবে। তিনি বলতেন বৈরাগ্য না এলে ভগবানকে পাওয়া যায় না,আসক্তি থেকে মনকে মুক্তি দিতে হয়। যুগাবতার শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ খুব সহজভাবে তাঁর প্রতিটি কথার ব্যাখ্যা দিয়ে গেছেন।
তিনি তার শিষ্যদের বলতেন বড় বাড়ির কাজের লোক সারাদিন সেই বাড়ির বাচ্চার দেখাশোনা করে, কিন্তু মন পড়ে থাকে তার নিজের ঘরের সন্তানের দিকে। জীবনধারণ ঠিক সেভাবেই করতে হয়। সংসারের প্রতিটি কাজ করবেন কিন্তু মন রাখবেন শুধুই ঈশ্বরে। লোভ করে কখনো ভালো থাকা যায় না ত্যাগেই বেঁচে থাকার আসল মর্মার্থ।
এই প্রসঙ্গে আপনাদের জানাই ঠাকুর রামকৃষ্ণ বলতেন, ‘কামিনী-কাঞ্চন অনিত্য, একমাত্র ঈশ্বরই নিত্য।’ তাঁর কাছে আসা ভক্ত এবং শিষ্যদের বিচার করে দেখতে বলতেন, ‘সুন্দরীর দেহেতেও কেবল হাড়, মাংস, চর্বি, মল, মূত্র এই সব আছে। এই সব বস্তুতে মানুষ ঈশ্বরকে ছেড়ে কেন মন দেয়? কেন ঈশ্বরকে ভুলে যায়?’
আরো পড়ুন – কোথায় কখন কেমন পোশাক পরবেন এই নিয়ে কনফিউজ থাকেন? ঘাবড়াবেন না চোখ রাখুন এই প্রতিবেদনে
সহজ সরল ভাষায় জীবনের আসল উদ্দেশ্যকে সবার সামনে তুলে ধরেছিলেন শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস। আসনি অন্তরের চেতনাই তো আপনার বিবেক যে আপনাকে ভালো আর খারাপের মধ্যে তফাৎ করাতে শেখাবে। আর ঈশ্বরের মন দিলে সংসারের সমুদ্র থেকে আপনা আপনি বৈরাগ্য তৈরি হবে আপনার। এ এমন পরিস্থিতি যখন আর হিসেব নিকেশ, টাকা-পয়সা, পোশাক ,বস্তু , এই সবে মন লাগবে না । মন চাইবে শুধুই ঈশ্বরের কাছে নিজেকে নিবেদন করতে।ঠিক তখনই বুঝবেন আপনার বৈরাগ্য এসেছে।
আরো পড়ুন – বাবা মায়ের দ্বিতীয় বিয়ে কেন মেনে নিতে পারেন না বেশিরভাগ সন্তান?
এই প্রসঙ্গে আপনাকে শ্রীরামকৃষ্ণের কথামৃতের অংশ বিশেষ জানাব আমরা। যুগাবতার ঠাকুর বলছেন “ঈশ্বরে ভক্তিলাভ না করে যদি সংসার করতে যাও তাহলে আরও জড়িয়ে পড়বে। বিপদ, শোক, তাপ— এসবে অধৈর্য হয়ে যাবে। আর যত বিষয়-চিন্তা করবে ততই আসক্তি বাড়বে।” জীবনকে বাঁচতে হয় ঠিক এই উপায় ধরে কারণ সাধারণ মানুষের এত বোঝার ক্ষমতা নেই।
আরো পড়ুন – একা একা পড়াশোনা করতে সমস্যা হচ্ছে? আগে মনকে এক জায়গায় একত্রিত করুন, তারপর কেল্লাফতে!
আচ্ছা সেই কারণেই শ্রীরামকৃষ্ণ বলছেন, “জীব চার প্রকার। বদ্ধজীব। মুমুক্ষজীব, মুক্তজীব ও নিত্যজীব। নিত্যজীব— যেমন নারদাদি। অর্থাৎ এরা সংসারে থাকে জীবের মঙ্গলের জন্য, শিক্ষা দেওয়ার জন্য। বদ্ধজীব—এরা বিষয়ে আসক্ত হয়ে থাকে, আর ভগবানকে ভুলে থাকে— ভুলেও ভগবানের চিন্তা করে না। মুমুক্ষজীব— যারা মুক্ত হবার ইচ্ছা করে।
কিন্তু তাদের মধ্যে কেউ মুক্ত হতে পারে, কেউ বা পারে না। মুক্তজীব— যারা সংসারে কামিনী কাঞ্চনে আবদ্ধ নয়— যেমন সাধু-মহাত্মারা; যাদের মনে বিষয়বুদ্ধি নাই, আর যারা সর্বদা হরিপাদপদ্ম চিন্তা করে।’ তাহলে এবার নিশ্চয়ই বেঁচে থাকার আসল উপায় আপনার কাছে একেবারে পরিষ্কার!