Breaking Bharat: গরম সিঙ্গারা খেতে দারুণ মজা! কিন্তু ‘সিঙ্গারার আকৃতি ত্রিভুজের’ মত কেন? সিঙ্গারার ইতিহাস জানেন?
কথায় বলে প্রথমে দর্শনধারী পরে গুণবিচারী। খাবার জিনিসের মধ্যে যদি সিঙ্গারার (Samosa) নাম আসে, তাহলে রূপে-গুণে বাজিমাত। এই খাবারের আউট লুকের মধ্যে একটা ইউনিক স্টাইল আছে। ত্রিভুজের মত আকৃতি ‘সিঙ্গারা’ পেল কী করে? (Singara is shaped like a triangle) সিঙ্গারার ইতিহাস জানতে আপনাকে পিছিয়ে যেতে হবে সপ্তদশ শতকে, রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের আমলে।
জনশ্রুতি আছে, আনুমানিক ১৭৬৬ সাল নাগাদ কৃষ্ণনগরের রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের রাজসভার রাজ-হালুইকর, কলিঙ্গ তথা বর্তমান ওড়িষ্যা থেকে আগত গুণীনাথ হালুইকরের ষষ্ঠপুত্র গিরীধারী হালুইকরের স্ত্রী ধরিত্রী দেবী সিঙ্গাড়া আবিষ্কার করেছিলেন।
এই সিঙ্গারার খ্যাতি নাকি রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের আমলে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।পরবর্তিকালে মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সভাকবি সাধক রামপ্রসাদ, স্বয়ং নাকি সান্ধ্যাহ্নিক সেরে প্রতিসন্ধ্যায় একথালা সিঙ্গাড়া নিয়ে বসতেন।
শুধু তাই নয় ভারতীয় খাদ্য হিসেবে সিঙ্গাড়ার সাথে রবার্ট ক্লাইভের প্রথম সাক্ষাৎ হয় মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রেরই সৌজন্যে। অতীতের ঘটনাবলী সম্পর্কিত পুঁথি ঘাঁটলেই জানা যায় যে এই সিঙ্গাড়ার জন্যই মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে ইতিহাস।
মনে করা হয় ধরিত্রীদেবী তাঁর নিজের বুদ্ধি খাটিয়ে যে অসাধারণ খাদ্যদ্রব্যটি আবিষ্কার করেছিলেন, ১৭৬৬ সাল থেকেই তা ছড়িয়ে পড়েছে বাংলা তথা সারা ভারতে।
অনেক ঐতিহাসিকদের অভিমত, সিঙ্গারার জন্ম হয়েছিল অনেক আগে। তারা বলছেন, নবম শতাব্দীতে পারস্যের অধিবাসীরা যব এবং ময়দার তালের সঙ্গে গাজর কড়াইশুঁটি রসুন ও মাংস মেখে সেঁকে খেতো, যাকে বর্তমান সিঙ্গাড়ার জনক হিসাবে ধরা হয়।
সুদূর পারস্য থেকে ভারতবর্ষে এসেও তাঁরা ময়দার তালে মাংসের কুঁচি ঢুকিয়ে সেঁকেই খেতেন। এরও বহুপরে তাঁরা ভারতবর্ষের উত্তরপূর্ব উপকূলে বিভিন্ন মশলা সহযোগে তৈরি আলুর তরকারি, ময়দার ভেতর ঢুকিয়ে ঘিয়ে ভাজার পদ্ধতি অবলম্বন করেন।
রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের আমলে যে ঘটনাটি সিঙ্গারা আবিষ্কার করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল, তা হল ঠান্ডা লুচি খাওয়াতে মহারাজের বিমুখতা। ঠান্ডা লুচি খেতে খেতে বীতশ্রদ্ধ মহারাজ হালুইকরকে ছাড়া আদেশ দিয়েছিলেন।
কিন্তু বুদ্ধির জোর সর্বোচ্চ। কালিকট মহারাজকে জানিয়েছিলেন তিনি নাকি এমনভাবে লুচি তরকারি করতে পারেনা, যা রাজা আধঘন্টা বাদে খেলেও গরম পাবেন। সবটা শোনার পর রাজা কিঞ্চিৎ কৌতূহলী হয়ে পড়েন।
আরো পড়ুন- Loves to crack fingers: আঙুল ফাটাতে ভালবাসেন? আঙ্গুল ফোটালে হাড়ে শব্দ হয় কেন ?
হালুইকরের স্ত্রীকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় পাকশালে। হালুইকরের স্ত্রী ময়দার তাল নিয়ে, তার থেকে লেচি কেটে লুচি বেলে, কাঁচা ময়দার ভেতর লুচির জন্য তৈরি সাধারণ তরকারি ভরে দিয়ে, সমভুজাকৃতি ত্রিভুজের গড়ন বানিয়ে কাজ এগিয়ে রাখেন। কিছুক্ষণ পর আদেশ আসে রাজার খাবার পরিবেশনের।
আরো পড়ুন- Ants never sleep: আপনার ঘুম পেয়েছে ?কিন্তু জানেন কি পিঁপড়ের চোখে ঘুম নেই?
ব্যস তরকারির পুর ভর্তি দশটি ত্রিভুজাকৃতির লুচির ময়দা ফুটন্ত ঘি ভর্তি কড়ায় ফেলে দিয়ে, নিমেষের মধ্যে সোনালী রঙের ত্রিভুজ তুলে নিয়ে সোনার থালায় সাজিয়ে হালুইকরের স্ত্রী পৌছে যান রাজসভায়। তারপর মহারাজ যে কতটা খুশি হয়েছিলেন তার পরবর্তী কালের ইতিহাস দেখলেই আন্দাজ করা যায়।
আরো পড়ুন- ‘লাগে টাকা দেবে গৌরী সেন’! কেন টাকা দেবেন তিনি ? কে তিনি? কত টাকা আছে তার কাছে?
এই ছিল সিঙ্গারার রুপের এবং গুনের নেপথ্য কাহিনী। তা দু এক পিস গরম গরম হবে নাকি এখন?