Breaking Bharat: সাধক বামাক্ষ্যাপার (sadhak bamakshyapa) জীবন দর্শনেই যেন তার আধ্যাত্মিক প্রমাণ মেলে জানেন সেটা? অন্তর থেকে ডাকলে সাড়া দেন মা! ভক্ত আর ভগবানের সম্পর্ক অনেকটা চুম্বক আর সুঁচের মতো। ভক্তের টানে ভগবান আবার ভগবানের টানে ভক্ত। কখনো ভগবান সুচ ভক্ত চুম্বক আবার কখনো বিপরীতটা।
সাধক বামাক্ষ্যাপার অলৌকিক ঘটনা (Sadhak Bamakshyapa):
তবে ডাকার মতো ডাকলে পরে কালিমা না সারা দিয়ে কি আর থাকতে পারে? কথাগুলো বলে গেছিলেন শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব। মাকে জীবন্ত হিসেবে নিজের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে ফেলেছিলেন তিনি। প্রতিমুহুর্তে উপলব্ধি করেছিলেন বিগ্রহের মধ্যে লুকিয়ে থাকা মায়ের জাগতিক জীবনকে।
এভাবেই সাধক সিদ্ধি লাভ করে তার প্রমাণ মেলে সাধক বামাক্ষ্যাপার জীবন দর্শনেও। আজ সেই নিয়েই বলবো কিছু কথা। কালী মায়ের সন্তান হওয়া মুখের কথা নয় শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব সাধক বামাক্ষ্যাপা সেই সন্তানের সাক্ষাৎ প্রতীক (sadhak bamakhyapa jiboni)।
সাধক বামাক্ষ্যাপার জীবন কাহিনী:
তারা মা কি যেভাবে উপলব্ধি করেছিলেন অনুভব করতে পেরেছিলেন তা ধর্মের প্রতি আর আধ্যাত্মিকতার প্রতি আমাদের বিশ্বাসকে আরও দৃঢ় করে। সাধক কমলাকান্ত, সাধক রামপ্রসাদ, সাধক পুরুষ ভবাপাগলা এবং আরও অনেকে আরাধ্য মায়ের মধ্যে খুঁজে পেয়েছিলেন জীবনের আসল উদ্দেশ্যকে।
আমরা আজ বলবো মহাপীঠ তারাপীঠের তারা মায়ের সন্তান সাধক বামাক্ষ্যাপার কথা। তার জীবনের অলৌকিক কিছু কার্যাবলী আজও অনেকের অজানা। বামাক্ষ্যাপার জন্ম১৮৩৮ সালের বাংলার ১২৪৪ বঙ্গাব্দ, ২২ ফ্রেব্রুয়ারি ফাল্গুন মাসে। মহাশিবরাত্রি তিথিতে বীরভূমের তারাপুরের কাছে আটলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এই যুগপুরুষ ।
সাধক বামাক্ষ্যাপা, সনাতন ভাবনা ও সংস্কৃতি:
ছোটবেলায় বামাক্ষ্যাপার নাম ছিল রামাচরণ। তার যখন মাত্র ১৮ বছর বয়স, তখন হঠাৎ বাবা সর্বানন্দ চট্টোপাধ্যায় প্রয়াত হন। কিশোর রামা চরণের উপর সংসারের সব দায়িত্ব এসে পড়ে। রোজগারের আশায় এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ছুটোছুটি করতে থাকেন তিনি।
অনেক কষ্টে মালুটি গ্রামের জমিদারবাড়ির কালী মন্দিরের ফুল তোলার কাজ জোগাড় করলেও মনোযোগ দিয়ে সেই কাজ তিনি করতে পারেননি। এরপর ঠাকুরের ভোগ রান্নার কাজে তাকে নিযুক্ত করা হলেও তার আচার-আচরণে অস্বাভাবিকত্ব লক্ষ্য করে জমিদার বাড়ি থেকে তাকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।
সাধক বামাক্ষ্যাপার জীবনী (sadhak bamakhyapa jiboni):
বাড়ি ফিরে এসে পারিবারিক সম্পত্তিতে চাষবাসের কাজ শুরু করেন তিনি। মামার বাড়িতে তাকে এবং তার ভাইকে পাঠিয়ে দেওয়া হলেও সেখানেও ঠিকানা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। যিনি জন্মেছেন ঈশ্বর লাভের উদ্দেশ্যে তিনি কি আর সাধারণ জীবন যাপন করতে পারেন?
কিছুদিন পর তারাপীঠ মহাশ্মশানে বামাচরণের সাক্ষাৎ পান তান্ত্রিক-সাধক ব্রজবাসী কৈলাসপতি বাবা এবং বেদজ্ঞব্রাহ্মণ মোক্ষদানন্দের । কৈলাসপতি তাকে দেখি যেন সবটাই বুঝতে পারেন। সাধকের সাধনার পথ সহজ ছিল না কিন্তু কৈলাসপতি অনুভব করেন রামাচরণ প্রকৃত সাধক হয়ে ওঠার জন্যই মানব রূপে এই পৃথিবীতে এসেছেন।
তারাপীঠের তন্ত্রসাধক বামাক্ষ্যাপার অলৌকিক রহস্য:
তাই তাকে পঞ্চমুন্ডির আসনে বসিয়ে তান্ত্রিক মতে দীক্ষা দেন। কঠোর সাধনায় মগ্ন থাকার পরে অবশেষে সিদ্ধিলাভ করে তিনি হয়ে ওঠেনি ‘বামাক্ষ্যাপা’। জনশ্রুতি আছে যে স্বয়ং মা তারা সাধক বামাক্ষ্যাপার সামনে আবির্ভূত হয়ে তাকে আশীর্বাদ করেছিলেন। যুগ যুগ ধরে চলে আসা এই বিশ্বাস আজও অটুট।
আরো পড়ুন – Lord Sri Krishna : শ্রী কৃষ্ণের প্রেমলীলায় আজও মজে রাজ্য থেকে দেশ, কেন?
এই বামাক্ষ্যাপার জীবনে নানান অদ্ভুত এবং অলৌকিক কাহিনীর কথা প্রচলিত আছে। যেমন তারা মায়ের নিত্য পূজার ভোগ নিবেদনের আগেই বামাক্ষ্যাপা খেয়ে ফেলতেন। জমিদার বাড়ির লোকেরা রেগে আগুন। মন্দিরের সেবাইত, পুরোহিত সকলেই মারমুখী হয়ে ওঠেন।
সেই রাতেই রানী মা স্বপ্নাদেশ পান তারা মা বলছেন “আগে বামা খাবে তারপর মা খাবেন।”কথিত আছে বামাক্ষ্যাপা যা বলতেন তাই ফলে যেত। একবার সেখানকার এক জমিদার খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। নগেন পান্ডা বামাক্ষ্যাপাকে সেই রোগীর কাছে নিয়ে গিয়ে বলতে বলেন যে সেই রোগে সুস্থ হয়ে উঠবে অথচ বামাক্ষ্যাপা বলেন তার উল্টো।
আরো পড়ুন – Qatar World Cup : কাতার বিশ্বকাপের পিছনে অতীতের জঘন্য স্মৃতি ! লুকিয়ে কোন রহস্য?
যেমন বলা তেমনি হাতেনাতে ফল মিলল। বামাক্ষ্যাপা বলেছিলেন রোগী মারা যাবে তাই হলো। নগেন পান্ডা সাধককে ঐরকম বলার কারণ জিজ্ঞাসা করলে বামাক্ষ্যাপা জানান মা এটাই মুখ দিয়ে বলিয়ে দিয়েছে। ভরা বর্ষায় নিজের মায়ের শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে এতোটুকু বিঘ্ন ঘটতে দেননি বামাক্ষ্যাপা রীতিমতো গণ্ডি কেটে দিয়ে বলেছিলেন এর ভেতরে বৃষ্টি আসবে না ঠিক তেমনটাই হয়েছিল বাস্তবে।
তারাপীঠ সাধন পীঠ আর বামাক্ষ্যাপার প্রসিদ্ধ তারাপীঠ আজও ধর্মীয় বিশ্বাসের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র। মহাপুরুষের অবতারের কথা হয়তো এভাবে কয়েকটা শব্দের মধ্যে লিখে শেষ করা সম্ভব নয় আর সেই ধৃষ্টতাও আমাদের নেই।
যুগ যুগ ধরে এভাবেই ভক্ত আর ভগবানের সম্পর্ক মজবুত হয়েছে বিশ্বাস আর ভক্তির জোরে। যুগপুরুষ সাধকরা যেন তারই প্রমাণ দিয়ে গেছেন বারবার।