Breaking Bharat: পুরুষতান্ত্রিক সমাজে সিঙ্গেল মাদার (single mother) হওয়া কতটা চ্যালেঞ্জিং? পুরুষ এবং নারী উভয়ের মিলনে সন্তান পৃথিবীর আলো দেখতে পায়। তাই সন্তানের ওপর বাবার যতটা অধিকার মায়ের ততটাই অধিকার। কিন্তু এ সমাজে আজও সন্তানের পরিচয় মানে পিতৃপরিচয়।
সমাজ যতই প্রগতিশীল হয়েছে বা নারী পুরুষ ভেদাভেদ মুছে গেছে যাই বলা হোক না কেন , এই একটা ব্যাপারে এখনো সব কিছু আগের মতই আছে। তাই সিঙ্গেল মাদার হওয়াটা এই সময় দাঁড়িয়েও যথেষ্ট কঠিন।
সিঙ্গল মাদার সম্পর্কে সমাজ কি ভাবে ? (single mother):
বিষয় নারীবাদ না পুরুষতান্ত্রিক সেটা নয়, আসল কথা হল ভাবনা আর মানসিকতা। সন্তান পৃথিবীতে জন্ম নেবার পর বাবা এবং মা দুজনেরই সমান দায়িত্ব থাকে। কিন্তু কখনো কখনো এমন কিছু ঘটনা ঘটে যার জেরে সন্তানকে একজনের হাতে বড় হতে হয়।
এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে পুরুষের কাছে নারী আজও দেহ সর্বস্ব প্রাণ। সবার কথা এখানে বলা হচ্ছে না তাই কোন ঘটনার সঙ্গে যদি প্রতিবেদনের অনিচ্ছাকৃত মিল পাওয়া যায় তাহলে সেটা নিতান্তই কাকতালীয়। আসলে নারী এবং পুরুষের যৌন জীবনের মূল ভিত্তি হল শারীরিক চাহিদা পূরণ।
এর ফলে অনেক সময় অজান্তে বা সম্মতি অসম্মতির মাঝের পর্দাটুকুর খেয়াল না রাখায় সন্তান চলে আসে পৃথিবীতে। তখন শুরু হয় টানা পোড়েন। অনেকটা passing the Ball এর মতো খেলা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পুরুষ সরে দাঁড়ায়। কখনো মেয়েরাও দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করে। কিন্তু যাই হয়ে যাক না কেন এ কথা বললে চলবে না নারী নিজের গর্ভ থেকে সন্তানের জন্ম দেয়।
তাই সন্তানের সঙ্গে তার মায়ের নাড়ির টান থাকবেই। কিন্তু যদি পুরুষ পিতৃত্ব অস্বীকার করে বা দায় না নিতে চায় তখন সিঙ্গেল মাদার হয়েই সন্তান প্রতিপালন করতে হয় নারীকে (Raising children as a single mother)। তবে নিঃসন্দেহে এটা একটা কঠিন চ্যালেঞ্জ।
এই প্রসঙ্গে একজন সেলিব্রিটি তথা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। অভিনেত্রী সাংসদ নুসরাত জাহানকে সবাই চেনেন। তিনি একটি সম্পর্কের মধ্যে ছিলেন বেশ কিছু বছর তারপর সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে চেয়েছেন। এটা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ব্যাপার কিন্তু যেহেতু তিনি পাবলিক ফিগার তাই আলোচনা সমালোচনা হয়েছে একটু বেশি করেই।
এরপর যখন তার সন্তানসম্ভবা হবার খবর প্রকাশ্যে আসে প্রত্যেকেই হবু সন্তানের পিতৃপরিচয় জানতে আগ্রহী হয়ে পড়ে। এমনকি সন্তান জন্মবার পর তার পরিচিতি পত্রে সিংগেল মাদার হিসেবে নিজের নাম টুকুই রাখতে চেয়েছিলেন নুসরাত। কিন্তু সামাজিক নিয়মের জেরে সেটা সম্ভব হয়নি।
কলকাতা কর্পোরেশনে যখন তিনি যান তখন তাকে বলা হয় পরবর্তীতে সমস্যা হতে পারে তাই বাবার নাম দিতে হবে। সেলিব্রেটি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব তবুও সমাজের নিয়ম থেকে বেরোতে পারলেন না তিনিও। অতএব ২০২২ সালে দাঁড়িয়েও একা নারী সন্তানকে মানুষ করবে এটা সমাজ সংস্কৃতি সভ্যতা মেনে নিতে পারেনা। জন্মের পরিচয় পত্র থেকে স্কুলের এডমিশন বা পরবর্তীকালে অফিসিয়াল ফর্মালিটি সবেতেই বাবার নামের প্রয়োজন হয়।
আরো পড়ুন- WWE এর উত্থান কোথা থেকে হলো? মল্লযুদ্ধ কী বাস্তবে হয়? না কি সবটাই কল্পকথা?
শুধুমাত্রই একটা দিক দেখলে চলবে না এর উল্টো পিঠও আছে। অনেক সময় একজন পুরুষের মধ্যেই সব ধরনের সুখ পাওয়ার সুযোগ পায় না নারী। সেক্ষেত্রে পুরুষ পরিবর্তনে বা অনেক সময় সমকামীতায় জড়িয়ে পড়ে নতুন সম্পর্ক। সন্তান যদি জন্ম নিয়ে থাকে আগেই, তাহলে সেই সন্তানকে একা মায়ের বড় করে তোলার ক্ষেত্রে তার ব্যক্তিগত জীবনেও সমস্যা হয় (Raising the child by a single mother)।
আরো পড়ুন- child’s : সন্তানের জীবনের মূল উদ্দেশ্য কী ? ‘বাবা মা’ কে ভালো রাখার দায়িত্ব কি সন্তানের নয়?
অনেকে নারীবাদী, তারা মনে করেন এ সমাজ নারী একাই চালাতে পারে ।তারাও সন্তানকে মানুষ করা দায়িত্ব নিজেরাই নিয়ে নেন, স্ব-ইচ্ছায়। পিতৃ পরিচয় না থাকলে নারীর দিকে আঙ্গুল তোলে সভ্যসমাজ। তার চরিত্র নিয়েও প্রশ্ন ওঠা শুরু হয়। এত কিছু সহ্য করে সিঙ্গেল মাদার হয়ে ওঠার চ্যালেঞ্জ (Challenges of being a single mother) সত্যিই কি কেউ নিতে চাইবে? বর্তমানে আইনে অনেক রদবদল এসেছে ।
আরো পড়ুন- Breast cancer : মহিলাদের বয়স ৩০ পেরোলেই সব থেকে বেশি চিন্তার কারণ কি ব্রেস্ট ক্যান্সার?
কিন্তু কুসংস্কার আর মানুষের মনের মধ্যে যুগ যুগ ধরে চলতে থাকা বদ্ধমূল অন্ধধারণার পরিবর্তন কি আইন করে করা সম্ভব? ইচ্ছে থাকলে হয়তো উপায় হয় কিন্তু সেই ইচ্ছেটা তৈরি হওয়ার আর স্বাভাবিকভাবে বিকশিত হওয়ার পরিবেশটাও থাকা দরকার ।এবার সময় এসেছে, শিক্ষিত সমাজ একটু ভাবুন। আত্মজকে নিজে একাই মানুষ করতে চায় তার মা ,এইটুকু সুযোগ কি তার গর্ভধারিনীর প্রাপ্য নয়?