Breaking Bharat: অত্যাচারী জমিদার-মহাজনদের ত্রাস – চিনুন গরিবের রবিনহুড রঘু ডাকাতকে! বীরপুরুষের ডাকাত (Raghu Dakat) কি মনে আছে? পিলে চমকানো অট্টহাসি আর কানে রক্ত জবা!
যম মানেই বিভীষিকা, সাক্ষাৎ মৃত্যু। এই যম সশরীরে হাজির ছিল বাংলার বুকে। ভাবলেও শিউরে উঠবেন তার দুর্দণ্ড প্রতাপ ছিল এমনই। রবি ঠাকুরের লেখা বীরপুরুষ কবিতার ডাকাতের ছবিটা মনে পড়ে বাঙালির। ছোট্ট খোকা, যেভাবে লড়াই করেছিল ডাকাতের বিরুদ্ধে তা মনে রাখেন প্রত্যেকেই (Full Story of Raghu Dakat)।
রঘু ডাকাতের ঐতিহাসিক গল্প (Raghu Dakat):
কিন্তু সত্যি সত্যি আজ থেকে প্রায় একশ দেড়শ বছর আগে বাংলার বুকে ডাকাতদের রমরমা। সাধারণ মানুষ তিষ্ঠতে পারতেন না। বন্য পশুর ভয় যেমন ছিল, তেমনই ছিল ডাকাতের ভয়। দস্তুরমতো নামকরা, দাপুটে ডাকাতরা ছিল সেই আমলে। তাদের ভয়ে যে সাধারণ মানুষ ভীত হয়ে থাকতেন তা নয়, ব্রিটিশ সরকার রীতিমতো অস্থির হয়ে থাকতেন ডাকাতির উপদ্রবে।
বাড়ির গৃহকর্তাকে আগাম চিঠি পাঠিয়ে, নরবলি দিয়ে, কালীপুজো করে, মাথায় লাল ফেট্টি বেঁধে, কপালে রক্তবর্ণের তিলক এঁকে, রণ পা চড়ে, সদলবলে ডাকাতি করতে আসত তারা। নানা জায়গায় নানা কাহিনী কথিত বা বর্ণিত হয়েছে ডাকাতদের নিয়ে।
আর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ভাবে উঠে এসেছে রঘু ডাকাতের নাম। তাঁকে নিয়ে বাংলার জনমানসে অসংখ্য মিথ। কিন্তু কোথায় তার বাসস্থান কেউ সঠিকভাবে বলতে পারেনা। শোনা যায় ব্রিটিশদের অফিসাররা ভয়ে থরথর করে কাঁপতো, যদি তারা জানতে পারতো রঘু ডাকাত আসছে। এই বিষয়ে একটা গল্পের কথা উল্লেখ করা যাক।
শোনা যায়, সাধক কবি রামপ্রসাদ কোনও এক সময়ে এই রাস্তা ধরে ত্রিবেণী ফেরিঘাটে ফিরছিলেন। ওই সময়ে রঘু ডাকাতের দলবল তাঁকে নরবলি দেওয়ার জন্য ধরে নিয়ে এসে বেঁধে রাখে। রাতে রামপ্রসাদকে বলি দেওয়ার জন্য সমস্ত প্রস্তুতি সেরে ফেলার পর ঘটে অদ্ভুত ঘটনা। বলি দেওয়ার আগের মুহূর্তে রামপ্রসাদ মাকে একটি গান শোনানোর আর্জি করেন।
ডাকাতদের সঙ্গে কালীপুজো?
সেই আর্জি মেনে রঘু ডাকাত গান শোনানোর অনুমতি দিলে রামপ্রসাদ ‘তিলেক দাঁড়া ওরে শমন বদন ভরে মাকে ডাকি’ বলে একটি গান ধরেন। তারপরেই রঘু ডাকাত বলির হাঁড়িকাঠে রামপ্রসাদের পরিবর্তে মাকে দেখতে পান। এরপর থেকে রঘু ডাকাত বলি বন্ধ করে রামপ্রসাদের সেবার ব্যবস্থা করে। শুধু তাই নয়, পরের দিন সকালে নৌকোয় করে রামপ্রসাদকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসে।
ডাকাতদের সঙ্গে কালীপুজো যেন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বাংলার বিভিন্ন জায়গায় আজও ডাকাতে কালীপুজোর রীতি দেখা যায়। কিংবদন্তি আছে, কারও বাড়িতে ডাকাতি করার আগে রঘু ডাকাত চিঠি দিয়ে বাড়ির গৃহকর্তাকে জানিয়ে দিত (Raghu Dakat Kali Bari temple)।
সন্ধের পর পুরোহিতকে ডেকে এনে ঢাকঢোল বাজিয়ে নরবলি ও ল্যাটা মাছের পুজো দিত। তারপর মহাপ্রসাদ খেয়ে ডাকাতি করতে বের হত। রঘু ডাকাত অত্যাচারীদের যম, গরিবের ভগবান। ইনি প্রকৃত অর্থে ছিলেন নীলকর সাহেবদের ত্রাস।শোনা যায়, রঘু ডাকাতের বাবাও ছিলেন একজন সাধারণ চাষি।
আরো পড়ুন- Kadaknath chicken : কড়কনাথ মুরগি চাষ করেই লাখোপতি? এই মুরগি চাষে রয়েছে মোটা লাভ!
নীল চাষে রাজি না হওয়ায় নীলকরের পেয়াদা এক রাতে তাঁকে তুলে নিয়ে যায়। সাহেবকুঠিতে ভয়ংকর অত্যাচারে অসহায়ভাবে মারা যান রঘুর বাবা। বাবার এই নির্যাতন আর অন্যায় মৃত্যু মেনে নিতে পারেননি তরুণ রঘু। এই হত্যার বদলা নিতে মরিয়া হয়ে ওঠেন তিনি। ছেলেবেলা থেকেই লাঠিখেলায় বেশ পোক্ত ছিলেন রঘু। নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের সামনে সেই লাঠিকেই অস্ত্র হিসেবে তুলে নিলেন তিনি।
আরো পড়ুন- Tension : মোবাইল হারিয়ে গেছে, তাই নিয়ে আপনার টেনশন? মনোবিজ্ঞান একে কি বলে জানেন?
তাঁর পাশে এসে দাঁড়াল একরোখা আরও একদল মানুষ। গড়ে উঠল লাঠিয়াল-বাহিনী। যাদের প্রথম কাজই ছিল, নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। শুধু নীলকরদের অত্যাচারের প্রতিশোধ নেওয়াই নয়, ছোটবড় যে-কোনও শোষণযন্ত্রের কাছেই রঘু ডাকাত ছিল মূর্তিমান যম। তাই আজও রঘু ডাকাত মানেই সেই আমলের বাংলার শাসকের যম। তার টার্গেট থেকে বাদ পরে নি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মালিকরাও।
আরো পড়ুন- Ayurveda : হজমের গন্ডগোল? পেটের সমস্যা ? অ্যাসিডিটি? আয়ুর্বেদে পেয়ে যান সমাধান!
এহেন বর্ণময় চরিত্র কিছুতেই গল্পে বা সাহিত্যে শুধু আটকে থাকবে তা কি হয়? তাই সিনে দুনিয়ায় এবার আসছে রঘু ডাকাত! নাম ভূমিকায় দেব। তাহলে আর কিছুদিনের অপেক্ষা!