Breaking Bharat: কাতার বিশ্বকাপের (Qatar World Cup) পিছনে অতীতের জঘন্য স্মৃতি ! এর নেপথ্যে কোন রহস্য লুকিয়ে আছে?সব খেলার সেরা ফুটবল । তাই তাই বলনি, গোলপোস্টের দিকে এগিয়ে যাওয়া, লক্ষ্য পূরণ করা। যে শ্রেষ্ঠ তার মাথায় সেরার সেরা শিরোপা। প্রতিযোগিতা আছে, আছে জয়ী আর পরাজিত দলের পরিসংখ্যান।
বিশ্বকাপ মানে কোটি কোটি মানুষের আবেগ উন্মাদনা আর খেলার প্রতি প্রেমের প্রকাশ। কিন্তু কাতার বিশ্বকাপ অতীতের জঘন্য স্মৃতি কে মনে করাচ্ছে বিশ্ববাসীকে। এর নেপথ্যে কোন রহস্য লুকিয়ে আছে? সত্যিটাই বা কী? জানবো এই প্রতিবেদনে।
আপনি কি কাফালা সিস্টেম সম্পর্কে জানেন?
যুগে যুগে সমাজ চলেছে শাসক এবং শোষিত ব্যক্তিদের ইকুয়েশনে। অর্থাৎ একদল চিরকাল শোষণ করে গেছে গরিবের উপর। সবল বা আর্থিকভাবে কিংবা রাজনৈতিক বা সামাজিকভাবে ক্ষমতার সম্পন্ন এক শ্রেণী অন্য শ্রেণীকে পায়ের তলায় রাখতে চেয়েছে।
ইতিহাসের পাতায় পড়া শ্রমিক প্রথা বা দাস প্রথার ঘটনার কথা উল্লেখ করতে হচ্ছে এখানে। কাতারের একটি বিশেষ নিয়ম রয়েছে। আপনি কি কাফালা সিস্টেম সম্পর্কে জানেন? এটা এক ধরনের লেবার পলিসি যা বারবার সমালোচনার মুখে পড়েছে। এখানে প্রত্যেক শ্রমিকের একজন করে মনিব থাকেন।যাকে বলা হয় স্পনসর।
শ্রমিকদের যথেষ্ট প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করা:
মূলত শ্রমিকের সব ধরনের আইনি অধিকারের এবং ভিসা সংক্রান্ত দায়িত্বের মাথায় বসে থাকেন এই স্পনসর। ফলে বুঝতেই পারছেন তাদের ক্ষমতা অনেকটাই বেড়ে যায়। কার্যত তারাই শ্রমিকদের ভাগ্যবিধাতা হয়ে দাঁড়ান। ফলে তাদের উপর অত্যাচার করা এই মালিকদের পক্ষে অনেক সহজ হয়ে যায়।
নানা রকমের আইনের নিয়ম দেখিয়ে শ্রমিকদের যথেষ্ট প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করা (Depriving workers of adequate dues) নিত্যদিনের ঘটনা। আরো একটা বিষয় হল একজিট ভিসা। এমনিতেই কাতারে এই ধরনের বিশেষ ভিসার ব্যবস্থা রয়েছে। ফলে ভিসা কেড়ে নিলে, কেউই নিজের দেশে ফিরতে পারবে না। এখানে কিন্তু শ্রমিকরা যখন তখন মালিক পাল্টাতে পারেন না , দেশে এরকম নিয়মই নেই।
মালিকের অকথ্য অত্যাচার :
তাই এক্রতি চিলেকোঠার ঘরের মতো জায়গায় শ্রমিকদের থাকতে হয় এবং মালিকের অকথ্য অত্যাচার সহ্য করতে বাধ্য হন তারা। আবার থাকার জন্য যে ঘর বা খুপড়ি বরাদ্দ শ্রমিকদের জন্য সেটার ভাড়া হিসেবে মাইনে থেকে বেশ কিছুটা টাকা কেটে নেওয়া হয়। শ্রমিকদের মৃত্যু হলে ডেথ সার্টিফিকেটের ওপর ও কার্যত নিজেদের নিয়ম ফলন এই শ্রমিকদের স্পনসররা।
যেহেতু সময় গেছে ততো বিষয়টি গোটা বিশ্বের নজরে এসেছে। এরপর এই জঘন্য প্রথা নিয়ে প্রচুর সমালোচনা হয়েছে। চাপের মুখে নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে কাতারের সরকার। আন্তর্জাতিক মিডিয়ার শিরোনামে বারবার আসতে থাকায় কাতারকে কাফালা সিস্টেম খাতায় কলমে তুলে দিতে হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সেটা ওই কথার কথা।
ক্ষমতা বা অধিকার কাতারের নারী সমাজের নেই:
আসল যন্ত্রণার ছবিটা কাতারের অন্তরে উঁকি দিলে স্পষ্ট হয়ে যায়। শুধু কি তাই কাতারের সমাজ ব্যবস্থা দেখলে কার্যত লজ্জায় মুখ ঢাকতে হয় বিশ্বকে। মহিলাদের এই দেশে কোন স্বাধীনতা নেই, পুরুষরাই তাদের কাছে বিধাতা। নিজের মতো করে কোন কিছু করার ক্ষমতা বা অধিকার কাতারের নারী সমাজের নেই।
ভালোবাসার যেমন কোন লিঙ্গ হয় না তেমন কোনো বয়স হয় না – এই কথাগুলো আজ গোটা বিশ্ব মেনে নিলেও কাতার আগের মতই কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস আর মধ্যযুগীয় মানসিকতা নিয়ে বসে আছে। তাই এই দেশে সমকামিতা শব্দ উচ্চারণ করাও পাপ। মোটামুটি ভাবে পুরুষতান্ত্রিক গাইড লাইনেই কাতারে বসবাস করতে হবে আর বিশ্বকাপের সময় আরও কড়া হচ্ছে এই নিয়ম।
কাতারে বিশ্বকাপের সময়ে অন্য কোনও শারীরিক সম্পর্ক:
বিবাহিত সম্পর্কের বাইরে, কাতারে বিশ্বকাপের সময়ে অন্য কোনও শারীরিক সম্পর্ক-স্থাপন আইন বিরোধী বলে ইতিমধ্যেই ঘোষণা করা হয়েছে। বিশ্বকাপের সময় অ্যালকোহল পান নিষিদ্ধ। এবার একটু ফুটবলের প্রসঙ্গে আসা যাক। বিশ্বকাপ ফুটবলের সেই শুরুর সময় থেকেই বছরের মাঝামাঝি অর্থাৎ জুন-জুলাইতেই বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়ে এসেছে।
সিজন ব্রেকেই হয় ইউরো, কোপা বা বিশ্বকাপের মতো টুর্নামেন্ট। কিন্তু মনে রাখতে হবে উত্তর গোলার্ধে গরমকালে কাতারের তাপমান প্রায় ৫০ ডিগ্রি ছুঁইছুঁই হয়। কিন্তু এই সময় বিশ্বকাপ বলে চারিদিক শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত করতে হবে যা কার্যত অসম্ভব।
আরো পড়ুন – lonely man : পৃথিবীর একমাত্র নিঃসঙ্গ মানুষের মৃত্যুতে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল বিরল জনজাতি!
তাহলে লীগ সিজনের ম্যাচগুলোকে আচমকাই স্থগিত করে দেওয়া হলো। অর্থাৎ বিশ্বকাপ শেষ হতে না হতেই চোট, আঘাত ,ব্যথা, যন্ত্রণা, একরাশ ক্লান্তি এইসব নিয়ে বিশ্রামের সময় পাওয়া আর যাবে না তারপরেই লীগের খেলা শুরু। এমন বর্বরোচিত ঘটনায় নিন্দায় সামিল বিশ্বের একাংশ। তাই বয়কটের ডাক কাতার বিশ্বকাপ (Qatar World Cup are the ugly memories of the past)।