Breaking Bharat: ছোটবেলা থেকে মেয়ে হলে হাতের পুতুল তুলে দেবার ইতিহাস সবার জানা। পুতুলের আদল পাওয়া, পুতুলকে নিয়ে সংসার করার একটা ইঙ্গিত যেন তখন থেকেই করা হয়। অনেকেই বলেন, আমরা সবাই পুতুল ।ঈশ্বর দড়ি দিয়ে আমাদের নাচ করতে বলেছেন।
সময় হলে ঠিক দড়িতে টান দেবেন, আর আমাদের জীবন শেষ। একথার যুক্তিতে মানুন বা না মানুন, তবে হ্যাঁ পুতুল নাচ বললে নস্টালজিয়া কিন্তু মন জুড়ে সেই কোন অতীতে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। আপনি কি জানেন, ঋক বেদ থেকে শুরু করে কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে পর্যন্ত এই পুতুল নাচের উল্লেখ আছে।
কম্পিউটার আর মোবাইলের রাজত্বে মনে পড়ে পুতুলনাচের সাতকাহন?
আজকে এই পুতুল নাচ (Puppet dance) নিয়ে কিছু কথা বলব আপনাকে। আমাদের দেশের প্রাচীন ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িয়ে আছে পুতুল নাচ। আগে মাথায় ঝুড়ি করে পুতুল বিক্রি হত।রাজা রানী বাদশা – কত রকমের পুতুল থাকতো সাজানো। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন রূপে ধরা দিয়েছে পুতুল।পুতুল নাচ ভারতের এক অত্যন্ত জনপ্রিয় ও প্রাচীন ফোক পারফর্মেন্স। পুতুল তো আর নিজে নিজে নাচতে পারে না।
তাকে নাচাতে হয়, হাতে দস্তানা পড়ে সেই দায়িত্বে থাকেন আরেক শিল্পীরা। তাদের হাতের কলকাঠির উপর নির্ভর করছে পুতুলনাচের পারফরম্যান্স (Puppet dance performance)। এই ধরনের পুতুল তৈরি হয় বাঁশ এবং কাঠ দিয়ে। সাধারণ পুতুলের থেকে দেখতে বেশ অন্যরকম। তালিকাটি সাথে মাটি মিশিয়ে পুতুলের মুখ তৈরি হয়। পুতুলের মাথা এবং হাত একটা বাঁশের লাঠির মাথার উপরে থাকে।
লাঠিতে ছিদ্র থাকে, সেই ছিদ্রের মধ্য দিয়ে সুতো নিয়ে গিয়ে পুতুল নাচ সম্ভব হয়। আঙ্গুলের ব্যবহার ভীষণ রকমের দরকারি পুতুল নাচের ক্ষেত্রে। এই দুই আঙ্গুলের কারসাজিতেই ঘটে সবটা। আর পুতুলকে সাজানো হয় গল্প অনুযায়ী তার চরিত্র বুঝে। যেন মনে হবে একেবারে বাস্তব চরিত্র সঙ্গে থাকে সংলাপ।
পুতুলনাচের শিল্পীরা আজ অনেকেই রয়েছে অভাবের তাড়নায়:
সাধারণত পুতুলনাচের শিল্পীরা আজ অনেকেই অভাবের তাড়নায় পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছেন। লোকশিল্পীরা চান পুতুলনাচ কে আরো বেশি করে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিতে কিন্তু সাধ থাকলেও সাধ্য নেই। একটা পুতুল নাচ মঞ্চস্থ করার জন্য যে পরিমাণ পরিশ্রম, সময়, দক্ষতা, পারিপাট্য প্রয়োজন সেই সব কিছুরই অভাব আজকাল দেখা যায়। তাই শিল্প আর শিল্পী দুজনেই আজ একে অন্যের থেকে অনেক দূরে।
আরো পড়ুন- বেকারত্বের জ্বালা বড়োই জ্বালা! কতটা কষ্ট থাকে একজন বেকারের মনে?
আরো পড়ুন- বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় সেরার সেরা? Prosenji King of Bengali film industry
আপনার নিশ্চয়ই মনে আছে যে কোন জায়গায় খোলা আকাশের নিচে কিংবা ধরুন অডিটোরিয়ামে, পাপেট শো সকলেই দেখতে পছন্দ করেন। কিন্তু এটাও সত্যি কথা পুতুলনাচের স্মৃতি আজকের প্রজন্মের কাছে নেই। শিশুরা যে সময় এই সুন্দর শিল্পকলাকে কাছে টেনে নেবে, সেই সময়ে তারা অন্য কাজে ব্যস্ত।
আরো পড়ুন- Teaching Tuition : টিউশনি পড়াতে গিয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কি কি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়?
তাই পুতুল নাচ তাদের কাছে অজানা ,অচেনা, বোরিং বটে। সেই যে রাজা-রানী, রাজপুত্র, রাজকন্যা, মন্ত্রী, সেপাই এর কান্ড বা ধরুন ঠিক আর ভুলের নীতি কাহিনী পুতুল নাচের মধ্যে দিয়ে ফুটে উঠত। হাসি-তামাশা রঙ্গ সবটাই হত কি সুন্দর ভাবে, সময় কেটে যেত অবলীলায়। চোখ বুজলে আজ সেটা স্বপ্নেও দেখতে পান না আপনি। আজ প্রায় লুপ্ত প্রায় এই পুতুল নাচ। তবু গুটিকয়েক মানুষ এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার অদম্য লড়াই আর চেষ্টা করে যাচ্ছেন আজও।