Breaking Bharat: শাসকের দম্ভ আর ঔদ্ধত্য! প্রাচীন ভাষার রীতিতেও শাসকের দম্ভ কেন দেখা যায়? বাংলা ভাষা বড় সুমধুর। এই ভাষায় নানা জনজাতির বাস। যারা সুখে দুঃখে এই ভাষাকেই আশ্রয় করে। ভালোবাসা হোক বা হুকুম যেন সব কিছুর সঙ্গী এই বাংলা ভাষা।
তবে এর নানা প্রকারভেদ চোখে পড়ে। অর্থাৎ জায়গা আর জনজাতি নির্বিশেষে একেক রকম। কিন্তু সব কথার ধরণেই সেই শাসন শোষণ আর অপমানের দলিল যেন অক্ষত। আপনি হয়তো ভাবছেন এটা কেমন কথা আর এই প্রসঙ্গই বা আসছে কেন? তাহলে এই প্রতিবেদনের শেষ পর্যন্ত খুব মন দিয়ে পড়তে হবে আপনাকে ।
আজকের শিরোনামের সঙ্গে প্রসঙ্গের সামঞ্জস্য ঘটাতে , একটি প্রবচন আপনাদের জানিয়ে রাখি।
“বাবু বলে কাম কাম, সাহেব বলে ধরি আন, সর্দার বলে লিবো পিঠের চাম” – কি বুঝতে পারলেন ? যদি বলি, এই কথাটা স্পষ্ট শাসকের দম্ভ আর ঔদ্ধত্য। তাহলে এর বিশ্লেষণ দরকার, তাই না?
কাম শব্দটার মানে উত্তেজনা অনুভব, এটাই সবার আগে মনে আসে। কিন্তু এখানে ইংরেজি ভাষার উচ্চারণ এটি। এখানে কাম কাম বলতে Come বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ কিনা সাহেব ধরে আনতে বলেছেন। এরপর সর্দার পিঠের চামড়া তুলে নেবার হুমকি দিয়েছেন। আসলে পুরোটাই ব্রিটিশ পিরিয়ডের ভারতের ছবি।
যখন ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি (East India Company) ভারত শাসন করছে, সেই আমলে আসামে চা উৎপাদনের জন্য ভারতের অন্যান্য অঞ্চল থেকে বিশেষত বাংলা ও বিহার, এই সব জায়গা থেকে শ্রমিক নিয়ে যাওয়া হত। জনশ্রুতি আছে তাদের উপর অত্যাচারের কথাও।
আরো পড়ুন- Eiffel Tower : আইফেল টাওয়ার বিবাহিত জানেন? আইফেল টাওয়ারের ইতিহাস জানেন ?
স্বভাবতই বশ্যতা স্বীকার না করে কিছু শ্রমিক পালিয়ে নিয়ে যাওয়াকেই শ্রেষ্ঠ উপায় বলে মনে করতেন। মাঝে মধ্যে কেউ কেউ পালাতে সক্ষম হতেন বটে। তখনই সাহেবরা “come, come” বলে তাদের ফিরে আসতে বলতেন। ফলে বুঝতেই পারছেন যে এই দুটো আসলে ইংরেজি শব্দ, বাংলা ভাষা নয়।
আরো পড়ুন- Sridhar Acharya: শ্রেষ্ঠ গণিতজ্ঞ শ্রীধর আচার্যকে চেনেন ? বিদ্বান মানুষটি কেন পেলেন না সঠিক কদর?
আসলে শ্রমিকদের সঙ্গে সাহেবদের সেভাবে কথোপকথন হত না। বাবুরা রাগ ঝাড়তেন সাহেবদের উপর (জমিদার/ভূস্বামী)। ওনারা সর্দারদের আদেশ দিতেন ধরে পালিয়ে যাওয়া শ্রমিকদের ধরে আনার জন্য। তাহলে ভেবে দেখুন বাংলার বুকে ইংরেজি ভাষা যখন বাংলায় মিশেছে তখনও সেই দুর্বলের উপর সবলের সোচ্চার হয়ে আধিপত্য দেখানোর চিত্রই ফুটে উঠেছে।
আরো পড়ুন- Child trauma : শিশু মন বড় আদরের, শিশুমনে মানসিক আঘাত পেলে সে ট্রমা কাটাবেন কিভাবে?
আসলে দাসত্ব বিহীন ভারতবর্ষের ভাবনাকেও দেশবাসীর মনে জায়গা করে দিতে চায়নি ব্রিটিশ। আর তৎকালীন কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষের কারণে ফল ভোগ করলেন এত জন, এত জাতি, একটা গোটা দেশ – প্রায় ২০০ বছর, ভাবা যায়!