Breaking Bharat :- দীর্ঘ কবিতা :~ কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক (Poet Bidyut Bhowmick)
ক ) ~বিলাসখানি টোড়ি এবং কবিতার দীর্ঘ পথ :
ভিতরে অজস্র শিকড় ; বর্ণহীন এক কেশরপুঞ্জের নীরব নৈঃশব্দ্যে বোবা সর্তগুলো প্রত্যন্তে ছায়াসঙ্গী,সেই স্বপ্ন ছেড়া বাতাসের গাঢ় দুনিয়াটা স্লেট পেন্সিলে আঁকা, সেই স্থির চৌকাঠে কখনো-সখনো দাঁত মেজেও আলস্যে উঠে এসেছিল,ওদিককার ভোর ! কি যেন কী নাম ছিল তার ? অথচ মৃদু মৃদু আলো জ্বলে ঐ গহ্বরে স্বপ্ন টপ্ন এসব রহস্যের গভীরে ঢাকা |
বিলাসখানি টোড়ি আমার মত অভাগার চাল-ডাল-তেল-নুনে বাষ্পচালিত অথবা অস্ফুট গোঙানিতে অস্বাস্থ্যময় ! তবু প্রাণ আছে স্বাধক প্রমও ওই চোখে ,এখন রোজই কবিতার চড়ম পাগলামি মাথায় যন্ত্রণা দেয় ! দিক পাগল আমি ;চেনা রাস্তায় অচেনা মানুষ আসে ,প্রণাম করে,দশবছর আগের চেনা কবিতার পঙক্তি বলে ! আমি শুধুই হাসি ,আর ভেতরে গভীরে বৃষ্টিতে ভাসি ! এ যেন শিকারীর তীর প্রত্যন্তে রক্তাক্ত করে সুতরাং আমার আত্মঘাতী স্মৃতিগুলো নিভৃতচারণায় সর্ম্পকহীন ৷
আগের রাস্তাটা কোনো ভ্রান্ত .সমীকরণে অপরিহার্য আনন্দে উন্মাদ,তাই বলে পাথরের ঢাকনা খুলে এক থালা আগুন আলো দেখে অনিলসখ্য হবার ইচ্ছা হয়না মোটেই !বিপরীতে আমার চলে যাবার রাস্তা ; ওখানে কিয়দাংশ আচ্ছন্ন হয়ে আছে ইচ্ছা-অনিচ্ছার প্রতিটা স্বপ্ন ,সবকটা বৃষ্টির দুপুর আমার অন্তঃস্থল খুলে যতটা দেখা যায় ; সবটাই ঔদার্য
লিখতে লিখতে দ্রুতগামী ওই ট্রেনটাকে ছুঁই ! ভাবি-মৃত্যুর ডাক এলো বলে ,রক্তের ভেতর থেকে নড়ে ওঠে তেইশ বছরের সেই মেয়েটা ; নবনীতা ! এসব ভেবে ভেবে আদ্যোপান্ত মরি ! শ্রীরামপুর স্টেশনে এসে পকেট হাতড়ে ছবি খুঁজি ,বৃষ্টি পড়ে ….আজ আপাদমস্তক ভিজব অভিভাবকহীন সূর্যহীন ! সেই ট্রাংকে তুলে রাখা কবিতার নীল ডায়েরিটা অস্তিত্বের সীমাবদ্ধতা একটুও মানে না,সে জন্য প্রতি মুহুর্তে দ্রারিদ্য সরলবক্র নির্বিশেষে মন মাতাল !
আরো পড়ুন- Rachna Banerjee : রচনা ব্যানার্জি কেমন ছিলেন ছোটবেলায়? জনপ্রিয় দিদির জীবনের নানা কথা!
আশ্চর্যজনক ভাবে আমি কবিতার সঙ্গী ; চাল ডাল তেল নুন এবং আদর্শ , আইনস্টাইনের সময় সূত্র ধরে টানে ! আমি বৈভবহীনতায় ভেতরে অহর্নিশ সমৃতিহীন দুলি,দিনরাত সেই দলছুট সময়ে রক্ত মাংসের ভিড়ে মনকে জ্বলাই কবিতার সাতশো পৃষ্ঠা ছিঁড়ে ! সেই ফিরিঙ্গি ভাঙা লেনের রাস্তায় বন্ধ টেলিফোন বুথে এসে জোনাক সম্বল হই ,
আরো পড়ুন- পুতুল নাচ মানেই নস্টালজিয়া! মনে পড়ে গ্রামবাংলার সেই পুতুলনাচের সাতকাহন?
স্মৃতির পেছনে ছুটি ধুলো মাখা মনে , ফিরে আসি রাতের অন্ধকার মেখে নির্জন ঘরে ! সেখানে আমি এবং আমার স্ত্রীর গর্ভের চার মাসের আদেখা ভ্রুণটা দূরারোগ্য কাব্য ভাবনায় পরিযায়ী হৃদয় পর্যটক হই ৷ এরপর ঘুমে ডুবি ! স্বপ্ন এসে দিয়ে যায় নির্দিষ্ট ঠিকানা !বৃষ্টি সকালে একটা দাঁড়কাক একটানা ভিজতে ভিজতে টিনের চালেতে ঠোকে ষড়যন্ত্রী ওষ্ঠো !!
খ ) ধ্রুপদী কবিতা
জল রঙের তুলিতে দুর্ভেদ্য তিমির, প্রতিদিন জ্বলন্ত শ্মশানে দেখি ; নিষিদ্ধ শরীর !সোনামুখী রেল স্টেশনে রাতের ভাদুরে জ্যোৎস্না ; যেন শ্বেতপদ্মের বিপন্ন বিস্ময় তবু বুকের তোলপাড় ভেঙে কোথায় কামড়ায় প্রিয় প্রেম,ভা – লো- বা – সা ! এরই মধ্যে স্মৃতি ভ্রমণে দূরন্ত মনের মতান্তর ঠেলে পুনশ্চ কথোপকখন !
আরো পড়ুন- বেকারত্বের জ্বালা বড়োই জ্বালা! কতটা কষ্ট থাকে একজন বেকারের মনে?
যেখান থেকে নিরুদ্দেশ এর চিহ্ন আগুনে পড়ুক ওই বন্যা রোদের খসে পড়া প্রবীন বয়সী সেই নারীর আঁচল একদিন আমার চোখের জল মুছে দিয়ে স্নেহস্পর্শে বলেছিল- “তোর ইচ্ছাতেই প্রতিটা গ্রীষ্মের দুপুর আমি ডাক ঘরের জানলার পাশে দাঁডিয়ে থাকব,চিঠি দিস কিন্তু খোকা ,পরে আমাকে ভুলে যাবিনা তো” ৷
আরো পড়ুন- Lipstick: মেয়েরা লিপস্টিক লাগান শুধুই কি গ্ল্যামারের জন্য ? নাকি এর পিছনে আছে অন্য কারণ ?
এরপর ফিরে এলাম সেনামুখী স্টেশন মাস্টারের চাকরী নিয়ে , স্বতন্ত্র জীবনের হাজার ধ্বনির ভিতর ৷ অথচ কোথায় তুমি , জলরঙের তুলিতে দুর্ভেদ্য তিমির প্রত্যন্তে স্তব্ধ হয়ে আছে ,সেখানে জ্বলছে ব্যর্থ জিজ্ঞাসায় একটাই চিন্তা , তবে কী জন্মান্তরের প্রতিজ্ঞা তৈরি করতে মা আমার ব্যাঞ্জনাময় আগুনে পুড়ছে কি ভীষণ জ্বলায় !! লেখনীকাল : ১৯৯৪,স্থান : কবির বাসগৃহ ছায়ানীড় ৷ শ্রীরামপুর , হুগলী