Breaking Bharat : ভূমিকাপট : (Poet Bidyut Bhowmick) ঘটনাচক্রে আমার জীবনবোধ কিম্বা আত্মদর্শন অনেক অল্প বয়সের সন্দিক্ষণেই রঙ পেতে ছিল এই অন্তরে ! সে-ই ছোট বেলাতে কিছু কিছু ঘটনা আমার এই মধ্য বয়সে পৌঁছেও এই আমিটার কাছ ছাড়া হয়নি,এখনো স্মৃতি গুলো মনের বাগানে আগের মতোই সজীব !
সবে মাত্র স্কুলে ভর্তি হয়ে ছিলাম,সেই পূর্ণচন্দ্র বিদ্যালয়ে আমার প্রথম দিন একটি ছেলের সাথে আমার আলাপ হয়েছিল ওর নাম কৃষ্ণেন্দু বসাক ৷ প্রথম দিন থেকেই ওর সাথে আমার বন্ধুত্ব বেশ জমে গিয়ে ছিল ! আমার থেকে বছর খানেকের বড় ছিল কৃষ্ণেন্দু ৷ যাবতীয় মনের কথা ওর সাথে ভাগ করে নিতাম ৷
আমরা পরস্পর”-কে বুঝতাম,দু’-একবার ছেলেটা আমাদের শ্রীরামপুর হুগলীর কুসুমকুঞ্জের বাসায় ওর বাবা মার সাথে এসেছিল ! কৃষ্ণেন্দু ‘-রা ঠাকুর দাশ বাবু লেনে ভাড়া থাকতো ৷ ওর বাবা দর্জির কাজ করতো ৷ ভীষণ অভাব ও দৈনতা মাখা চেহারা ছিল কৃষ্ণেন্দুর ! বেশিরভাগ দিনই স্কুলে টিফিন পর্যন্ত আনতো না,আমি ওকে আমার ভাগের খাবার ওকে টিফিন প্রিয়ডে দিতাম ৷ হঠাৎ ক’রে ছেলেটা স্কুলে আসা বন্ধ করে দিল !
আরো পড়ুন- Poet Bidyut Bhowmick : প্রখ্যাত কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক এর একগুচ্ছ কোলাজ কবিতা
অনেক পরে আমার স্কুলের শিক্ষক কমল বাবুর কাছে জানতে পেরেছিলাম কৃষ্ণেন্দু সাত দিনের প্যারাটাইফয়েডে মারা গেছে ! এখনো ওর মুখটা আমার চোখে ভাসে ! এই ছাপান্ন বছর বয়সে সেই ছেলেবেলার পূর্ণচন্দ্ৰ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় বেঞ্চে বসা ছোট্ট কৃষ্ণেন্দুকে স্বপ্নেও দেখি ! যাই হোক , আমার যাবতীয় স্মৃতি কতবার কতভাবে আমার কলমে সাদা পৃষ্ঠায় শব্দ অক্ষরে ফুটে উঠেছে- জন্ম নিয়েছে অযস্র কবিতা | প্রিয় পাঠক বন্ধুদের কাছে সেই ছোটবেলার একটা ঘটনা মেলে ধরলাম ৷ বিদ্যুৎ ভৌমিক (Bidyut Bhowmick) ১৫/১০/২০১৭
হৃদয়তান্ত্রিক কবিতা – নির্জন পাড়ার দৃশ্যমান নিঃশব্দ : বিদ্যুৎ ভৌমিক (Bidyut Bhowmick)
একটা আঁকাবাকা পথ,এই রাস্তার দু’পাশে দুনিয়ার যত প্রাচীন বাড়িগুলো দৃশ্যমান প্রহরায় এখনো রোদ বৃষ্টি ঠায় দাঁডিয়ে !চলার ইচ্ছা গুলো অকপটে লেখা ছিল একেবারে এই খানে ; এখানে বারমাস গদ্য পদ্যের প্রশাখা মেলা ছায়া বাতাস হীন নির্জনতা দুলে উঠতো ,! অরেঞ্জ রঙের কাঠি আইক্রিম এবং গোপলদার দশ পয়শার এক শালপাতা ঘুঘনি পূর্ণচন্দ্রে এই রাস্তায় আনন্দে দুলে দুলে ওঠে !
আরো পড়ুন- Poet Bidyut Bhowmick : কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক এর একটি প্রতিবিম্ব হীন অসম্পূর্ণ কবিতা
এভাবে কোন খানে কত কালের আমার পাযের চিহ্ন লেগে আছে ! এই ছায়া ছায়া স্বপ্ন গুলো স্তব্ধ নীরবতায় অনেকটা সময় শূন্য ; অথচ এখানে সে-ই কবে থেকে আমার চলা ফেরা শেষ হয়ে গেছে ! স্বভাবতই এই পথে দৃশ্যমান স্বপ্নরা কবিতার মত নীরব চুপচাপ,তবুও অতলান্তের ব্যাথার দাগ গুলো অহর্নিশ পোশাকহীন নগ্ন ভাসমান !
ব্যক্তিগত অসুখের ভেতর আমারই মতন নির্ঘুম নির্জন সেই স্মৃতি দর্পণের আকাশ ; কোথাকার অভিমান পোড়া দুঃসময় নতুন তারাদের বিজ্ঞাপন দেখায় প্রতিরাতে ! অনেকটাই নৈঃশব্দে দিন কাটে অবুঝ অবেলায় | কিছু কিছু সময় ; ঘুমের মধ্যে নির্ঘুম ! স্মৃতিস্বপ্নের ছবি আঁকে
আরো পড়ুন- Poet Bidyut Bhowmick : কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক এর একটি অপ্রকাশিত শেষ না হওয়া কবিতা
এ’ পাড়া দিয়ে আমার সে-ই ছেলেবেলাটা সমৃতির মধ্যে প্রভুত কষ্টে দিন রাত আসে আর যায় !
প্রতিটা জন্মের যেন সেই চেনা ও অচেনা মুখ গুলো নির্নিমেশ দেখা দেয় এভাবে কতভাবে ৷ তবু এই রাস্তাতে খুন হয়ে পড়ে থাকতে দেখেছি আমার দেবতাকে !
কেউ একজন চারপাশের চিহ্ন গুলো বৃষ্টিতে ধুয়ে দিতে চেয়ে ছিল ; অথচ অতলমন্ত্রে বজ্রপাতে ওর স্বপ্ন ভঙ্গ হতেই স্মৃতি থেকে অদৃশ্য হল এভাবেই !সেই চেনা মুখগুলো অন্তর ও রক্ত প্রভাহে ফিরে ফিরে আসে ! কোথাকার অতলান্ত দিয়ে হঠাৎ ডাক আসে,বিদ্যুৎ বাড়ি আছিস আমি কৃষ্ণেন্দু ! জানলার ওধারের পথে আকাশ ভাঙা বৃষ্টি তখন ঝরছে শুধু ঝরছে !!
আরো পড়ুন- Bidyut Bhowmick : কবি বিদ্যুৎ ভৌমিক এর নষ্ট প্রেমের কবিতা
লেখনীকাল ২০১৫,স্থান :~ কবির বাসগৃহ – ছায়ানীড় , শ্রীরমেপুর,হুগলী