Breaking Bharat: মুর্শিদাবাদের হাজার দুয়ারীর নাম শুনেছেন? তবে হাজার দুয়ারীর ইতিহাস জানেন? ঘুরতে বেরোতে ভালোবাসেন? কাছেপিঠের মধ্যে একবার হাজার দুয়ারীতে যাবেন নাকি? জেনে নিন ইতিহাস (Hazarduari Palace, Murshidabad)!
ঘুরতে বেড়াতে ভালোবাসেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া বিরল। একঘেয়ে জীবন থেকে সামান্য ছুটি পেতে ভ্রমণ পিপাসু মন মাঝে মাঝেই এদিক ওদিক যেতে চায়। কম সময় কম খরচে ভালো জায়গা ঘুরতে যেতে পারবে আর কী চাই? সেইরকম এক জায়গার কথা বলব আমরা।
মুর্শিদাবাদের হাজার দুয়ারীর নাম শুনেছেন?
ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত এই স্থান। অনেকের মনেই এই অদ্ভুত নাম নিয়ে প্রশ্ন জাগে। তবে হাজার দুয়ারীর একটা দারুণ ইতিহাস আছে। মুর্শিদাবাদের হাজার দুয়ারী বাংলার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। করোনাকালে পর্যটকদের যাতায়াত একেবারে বন্ধ হয়ে গেছিল। তবে এখন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে সব কিছু। পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে আবার আগের মত পর্যটকদের আনাগোনা।
আজ যে সৌধের কথা বলব সেখানে এক হাজারটা দরজা আছে। এখানে যেতে গেলে আপনাকে গাইডের উপর ভরসা করতে হবে। না হলে কোন রাস্তা দিয়ে ঢুকবেন আর কোন দিকে বেরোবেন তালগোল পাকিয়ে যেতে পারে। আসলে হাজারদুয়ার কথাটির অর্থ ১,০০০টি দরজা।
সুতরাং, হাজারদুয়ারিতে ১,০০০টি দরজাই আছে (Hazarduari have 1000 doors)। তবে এদের মধ্যে ১০০টি দরজা কিন্তু কৃত্রিম, দেয়ালের গায়ে দরজার অনুকরণে ছবি আঁকা। তাই সত্যিকারের দরজা আছে ৯০০টি। সুতরাং, আক্ষরিক অর্থে এখানে ১,০০০টি দরজা থাকলেও সবগুলি আসল দরজা নয়।
মুর্শিদাবাদ তথা বাংলার গর্ব এই সৌধ। ভাগীরথী নদীর তীরে ১২ বিঘা জমিতে হাজারদুয়ারি প্রাসাদ, উচ্চতা প্রায় ৮০ ফুট । বর্তমানে এটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে আছে কেন্দ্রীয় সরকারের আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া। এর বর্তমান নাম হাজারদুয়ারী প্যালেস মিউজিয়াম।
এই প্রাসাদের নির্মাণকাজ ১৮২৯ সালে শুরু হয়ে ১৮৩৭ সালে শেষ হয়। মূল স্থপতি ছিলেন ডানকান ম্যাকলয়েড। ইতিহাস বলে নবাব নাজিম হুমায়ুনজার আদেশ অনুযায়ী তাঁর তত্ত্বাবধানে প্রাসাদটি নির্মিত হয়। এখানেও এক বাঙ্গালীর অবদানের কথা উল্লেখ করতে হয়।
বাঙালি সগুর মিস্ত্রী ছিলেন এই প্রাসাদ নির্মাণের প্রধান সহকারী। এখানে একটি কথা জানিয়ে রাখি, সিরাজউদ্দৌলার মৃত্যুর ৮০ বছর পরে এই প্রাসাদ তৈরি হয়। সুতরাং, সিরাজউদ্দৌলার সঙ্গে হাজারদুয়ারির সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই।
বর্তমানে এই প্রাসাদটিকে একটি জাদুঘরে রূপান্তরিত করা হয়েছে। পুরোপুরি হাজারদুয়ারি দেখতে কমপক্ষে ৪ ঘণ্টা সময় হাতে নিয়ে যেতে হবে আপনাকে। এবার এই স্থাপত্যের ভিতরের কারুকার্যের কথা বলা যাক।
ত্রিতল প্রাসাদটির প্রথমতলে আছে অস্ত্রাগার, অফিস-কাছারি ও রেকর্ড রুম। অস্ত্রাগারে মোট ২,৬০০টি অস্ত্র আছে। এখানে নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে হত্যা করার জন্য ব্যবহৃত মহম্মদী বেগের অস্ত্র, পলাশীর যুদ্ধে ব্যবহৃত মীরমদনের কামান , আলীবর্দী খাঁয়ের ব্যবহার করা তলোয়ার ও বহুনলা বন্দুক, মীরকাসিমের ছোরা, নাদির শাহের মাথার বর্ম, বিভিন্ন ধরন ও আকারের কামান, বিভিন্ন ধরনের ছোরা-সহ দুর্লভ সংগ্রহ রাখা আছে।
সম্রাট আকবরের সময়কার আবুল ফজলের আইন-ই-আকবরির পাণ্ডুলিপি ও বাগদাদের বিখ্যাত লেখক হারুন অর রশিদের হাতে লেখা ‘কোরান শরীফ’ আছে এখানে। এছাড়াও আছে নবাব আর ইংরেজদের ব্যবহৃত বহু অস্ত্র, বাসন, আসবাব, বহু বিখ্যাত শিল্পীদের হাতে আঁকা ছবি। ভেতরের কারুকার্য সম্পর্কে জানাই এবার।
আরো পড়ুন- Laptop charge : সারাক্ষণ ল্যাপটপ চার্জে দিয়ে কাজ করছেন? বড় বিপদ ডেকে আনছেন না তো?
একতলা প্যালেসের সামনের বিশাল সিঁড়িটি দরবার পর্যন্ত উঠে গেছে। সামনে লম্বা গোলাকার স্তম্ভে সুন্দর নকশার কাজ। সিঁড়ির দু’পাশে দুটি সিংহ মূর্তি ও দুটি ছোট সেলামি কামান। তিনতলায় বেগম ও নবাবদের থাকার ঘর, দোতলায় দরবার হল, পাঠাগার, অতিথিশালা।
আরো পড়ুন- Google Cloud : ক্লাউড নাইন শুনেছেন হয়তো,গুগল ক্লাউড সম্পর্কে কতটা জানেন সাধারণ মানুষ?
দোতলা ও তৃতীয় তলায় আর্ট গ্যালারি ও লাইব্রেরি। গ্যালারিতে বহু বিখ্যাত চিত্রশিল্পীর চিত্রকলা আছে এখানে। লাইব্রেরিতে রয়েছে বহু ধর্মপুস্তক, চুক্তিপত্র, নাটক, উপন্যাস, তাম্রলিপি, ইতিহাস, প্রয়োজনীয় দলিল-দস্তাবেজ, বিদেশি ভাষার গ্রন্থ ইত্যাদি।
আরো পড়ুন- Cancer medicine : সুখবর! মারণ রোগ ক্যানসার নিয়ে আর চিন্তা নেই, এসে গেল ক্যানসারের ওষুধ
মদিনা মসজিদের সামনে বাঁধানো বেদীর ওপর রাখা আছে ১৮ ফুট দৈর্ঘ্যের বাচ্চাওয়ালি কামান। ‘ শোনা যায়, এই কামান ১৩-১৪ শতকে গৌড়ের কোনও নবাবের আমলে বানানো হয়েছিল। কেউ বলেন এটি বাংলার সুলতান ইলিয়াস শাহের কামান।
তবে সবচেয়ে চালু মতটি হল, ১৬৪৭ সালে এটি বানিয়েছিলেন ঢাকার বিশিষ্ট লোহার মিস্ত্রি জনার্দন কামার। এই কামান দাগার জন্য ১৮ সের বারুদের প্রয়োজন হত, ভাবা যায়!