Master Sujit Chatterjee: টাকার জন্য শিক্ষকতা করেন না এমন মানুষ আছেন? ২ টাকার মাস্টারমশাই তার প্রমাণ! চারিদিকে শুধু টাকার খেলা আর সেখানে দাঁড়িয়ে আজকের প্রতিবেদনের সম্পূর্ণ লাইম লাইট যাকে ঘিরে তিনি হলেন ২ টাকার মাস্টার মশাই, চেনেন তাকে?
এখনকার দিনের শিক্ষাটা একটা বিজনেস হয়ে গেছে। মানুষ তার মতো করে শিক্ষাকে নিয়ে ব্যবসা করতে শুরু করেছেন। এমনিতেই শিক্ষকতার চাকরি পেতে গেলে লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষ দিতে হয়। এটাই এখন শিক্ষার সংজ্ঞা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অথচ যারা মানুষ তৈরি করার কারিগর হিসেবে সমাজে নিজেদের আসন পাকা করেছেন সেই শিক্ষকরা একবারও এই সবকিছুর প্রতিবাদ করছেন না। আগেকার দিনের শিক্ষকরা যে সম্মান তৈরি করতে পেরেছিলেন এখন যেন সবটাই অতীত হয়ে গেছে।
শিক্ষা যখন ব্যবসা তখন ব্যতিক্রম এই মাস্টারমশাই। শুধু জানেন মানুষকে শিক্ষা দিতে। কেউ তাকে বেশি টাকা দিতে চাইলে তিনি বলেন টাকায় যদি নিই, তাহলে আর শিক্ষক হলাম কেন? তার ব্যাপারে একটু বিস্তারিত জানা যাক। আসলে এমন মানুষদের সঙ্গে পরিচয় করার সুযোগ খুব একটা তো আমাদের হয় না।
নিজেদের ব্যস্ত জীবনে শুধুই প্রতারণা আর স্বার্থের খেলা দেখতে দেখতে আপনি আমি পুরোপুরি ক্লান্ত হয়ে গেছি। সেখানে যখন একজন সৎ মানুষের কথা আমরা জানতে পারি মনে হয় এই মানুষগুলোর জন্যই পৃথিবী এখনো এত সুন্দর। গত ২০২১ সালে পদ্মশ্রী বিজয়ীদের যে তালিকা আমাদের সামনে এসেছে, তার মধ্যে এমন অনেক নাম রয়েছে যাদের হয়তো আমরা চিনতামই না।
কারণ তারা কখনোই সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের সামনে আসেনি। এটাই আসল কথা। আমাদের জীবনটা যে আজকাল সোশ্যাল মিডিয়া নির্ভর হয়ে গেছে। তাই এর বাইরে জগত আছে এটা আমরা জানি না। এই প্রতিবেদনে আজ আপনাদের বলবো এমনই একজন পদ্মশ্রী বিজেতা। প্রচারের জন্য নয় বরং সমাজের জন্য যিনি কাজ করে চলেছেন অবিরাম। যিনি করে চলেছেন অসম্ভব একটা কাজ।
আরো পড়ুন – job permanent: নিজের চাকরিটা স্থায়ী করতে চাই! উপায় রয়েছে এই প্রতিবেদনে
দেখুন কথায় বলে, ভালো কাজ একদিন না একদিন ঠিকই প্রকাশ্যে আসে কেউ সেটাকে লুকিয়ে রাখতে পারে না। মানুষটির নাম সুজিৎ চট্টোপাধ্যায় (Sujit Chatterjee), মাস্টারমশাই এর ঠিকানা পূর্ব বর্ধমানের আউসগ্রাম-এর রামনগর এলাকা। তার ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা যায় তার বয়স যখন ২৩, গ্রাজুয়েশন করার পর স্থানীয় এক উচ্চমাধ্যমিক স্কুলে চাকরি পেয়েছিলেন।
আরো পড়ুন – Buying a white car: গাড়ির রং সাদা! এই সাদা রঙের ‘চার চাকা গাড়ি’ কেনার রহস্যটা কি?
যে সমস্ত ছাত্ররা পড়াশোনায় পিছিয়ে থাকতো, তিনি তাদের জন্য স্কুল ছুটির পর রাখতে শুরু করলেন বিশেষ ক্লাস। কারন তিনি সুস্থ একটা নাগরিক সমাজ গড়তে চেয়েছিলেন। এই ক্লাসে শুধু পাঠ্যবই নয়, মৌলিক শিক্ষার পাঠও দিলেন তিনি। শুধু এইটুকুই নয় স্থানীয় আদিবাসী ও পিছিয়ে পড়া মানুষদেরও পড়াশোনার প্রতি উৎসাহিত করতে তাদেরকেও শিক্ষা দিতে শুরু করেন মাস্টারমশাই।
এরপর ২০০৪ সালে চাকরি থেকে অবসর নেন ঠিকই, কিন্তু এরপর থেকেই শুরু হয় আসল লড়াই। নিজের পেনশনের টাকা দিয়ে ছেলেমেয়েদের কিনে দিতে শুরু করলেন বই, খাতা, পেন্সিল, যাবতীয় প্রয়োজনীয় জিনিস। ভাবতে পারছেন এলাকার সমস্ত ছেলেমেয়েদের পড়াতে শুরু করলেন বিনামূল্যে?
আরো পড়ুন –মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘরে প্রবেশ করে অবাক সলমন খান! কেন জানেন?
একেবারে ঘড়ির কাঁটা ধরে সকাল সাতটা থেকে শুরু হতো তার পাঠশালা, চলতো বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত। বেলা একটু বাড়লে শুরু রোল কল করা থেকে শুরু করে কেউ উপস্থিত না থাকলে ডাকতে চলে যেতেন তার বাড়িতে। সবটাই বিনামূল্যে!
এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না তাই যদি সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তার লাইনে ধার্য হল মাত্র দুই টাকা। ব্যাস ওইটুকুই এর থেকে বেশি নয়। এই মুহূর্তে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ৩০০ জন, যাদের মধ্যে প্রায় ৮০% ছাত্র। দাদু বাবা নাতি তিন প্রজন্ম একসঙ্গে তার কাছে পড়াশোনা শিখছে এমন ঘটনা দেখা গেছে।
আরো পড়ুন – স্প্যাম ফোন কলে জেরবার? WhatsApp এর স্প্যাম কল থেকে মুক্তি দেবে Truecaller
ভারতবর্ষকে বদলানোর স্বপ্ন দেখেন তিনি। তাই এই মানুষগুলো পৃথিবীটাকে এতটা সুন্দর করে রেখেছেন। শুনলে মনে হবে বোকা কিন্তু এই বোকা মানুষগুলো আছেন বলেই আমরা আছি।