Breaking Bharat : না,মেয়ে পড়া শোনা করে বড় হলেও , গাড়ি ঘোড়া চড়ে না সে। কারন রেল গাড়ি চড়ে আসা যাওয়া করা মানুষের প্রিয় পানীয় তাদের হাতে তুলে দেয় সে হাসিমুখে। কারন এনি টাইম ইস টি টাইম- নাম “এম.এ ইংলিশ চা-ওয়ালী” , হাতে গরম পেয়ালা তুলে দিতে হাজির হাবড়া ষ্টেশনে।
মেয়ে একদিন অনেক বড় হবে – সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সরকারি চাকরি করবে মেয়ে হবে স্কুল শিক্ষিকা, সমাজ গড়বে। এই ছোট্ট প্রত্যাশা ছিল বাবা মায়ের। মেয়ে বড় হয়ে, ইংরেজিতে এমএ পাসও করেছে, সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছে। তবে মেয়ে যে সরকারি চাকরি করবেন সেই সাধ পূরণ হলো না বাবা মায়ের।
সেই মেয়ে এখন এম এ পাশ করে চাকরি না পেয়ে সংসারের হাল ফেরাতে বাবা-মায়ের পাশে দাঁড়ানোর জন্য স্বনির্ভর হওয়ার স্বপ্ন দেখতে দেখতে শেষমেষ স্টেশনের উপরের চায়ের দোকান দিয়ে বসলেন (Tea shop above the station)। আর দোকানের নাম দিলেন ‘এম.এ ইংলিশ চাওয়ালী’। এটা গল্প নয় এক লড়াকু তরুনীর বাস্তব জীবনের গল্প
উত্তর ২৪ পরগনার হাবরা কৈপুকুর বেলতলা এলাকার বছর ছাব্বিশের টুকটুকি দাসের (Tuktuki Das) জীবন আজ আমাদের ফ্রেম বন্দি। বাবা প্রশান্ত দাস ভ্যান চালক মা বাড়িতে ছোট একটি মুদি দোকান চালায়। তিন ছেলেমেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে প্রশান্ত বাবুর ছোট সংসার আর এই ছোট সংসারে, ছোট মেয়ে টুকটুকি দাশকে নিয়ে ছিল অনেক স্বপ্ন। মেয়ে একদিন বড় হয়ে স্কুল শিক্ষিকা হবেন।
সেইমতো মেয়েকে ছোটবেলা থেকেই শত অভাবের মধ্যেও পড়াশুনা করিয়েছেন। ২০১৬ সালে টুকটুকি ইংরেজিতে অনার্স পাশ করেন তার পরে এমএ পাস করে। বেশ কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন চাকরি পরীক্ষা দিয়েও সফল হতে পারেননি, একটা সময় মানসিক ভাবেও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন এই তরুণী, প্রতি মুহূর্তে যেন বেকারত্বের জ্বালা দ্বিগুণ হচ্ছিল। আর ঠিক তখনই সবকিছু ভুলে আবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা এবং নিজেকে স্বনির্ভর করে তোলার নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন।
সোশ্যাল মাধ্যমে অনেক উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তিকে ছোট ছোট নিজস্ব ব্যবসা করে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার গল্প শুনেছেন সেখান থেকেই অনেকটা অনুপ্রেরণা তরুনীর। তাই আর দেরি না করে হাবরা ২ নম্বর প্লাটফর্মে একটি ছোট দোকান ভাড়া নিয়ে চায়ের দোকান দিয়ে বসে পড়লেন। যদিও এই কাজে প্রথমে বাবা মায়ের সমর্থন পাচ্ছিলেন না।
তরুণী টুকটুকি দাস জানিয়েছেন কোন কাজই ছোট নয় তাই নিজেই একটি চায়ের দোকান দিলাম ভবিষ্যতে এই ছোট ব্যবসাটি বড় করার চেষ্টা করব।এমএ পাস মেয়েকে স্টেশনের উপরে চা বানাতে দেখে মনে কষ্ট হচ্ছিলো ঠিকই, তবুও মেয়ে স্বনির্ভর হচ্ছে এটা দেখে ভালো লাগছে জানিয়েছেন বাবা প্রশান্ত দাস। তরুনীর দোকানে চা খেতে এসে এই তরুনীর সাহসী পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন সাধারন মানুষ। কেউ বলছেন আমরা হলাম চা পিপাসু বাঙালি ভীষণ ভালোবাসি চা খেতে । তবে আজ প্রথম এমএ পাস করা কোন তরুনীর চায়ের দোকানে চা খেলাম।
প্লাটফর্মের উপরের পার্শ্ববর্তী দোকানদারেরাও জানিয়েছেন তাদের দোকানের পাশে এরকম একটি শিক্ষিত মেয়ে চায়ের দোকান দেওয়াতে তারা খুশি এবং গর্বিত তারা এর পরে ওই দোকান থেকেই চা খাবেন । চাকরী নেই, তবু স্বপ্ন তো আছে, অন্তত ছিল। বাস্তব কি এমনটাই হওয়ার কথা। গল্পের নায়িকা নয় , বাস্তবের কেন্দ্রীয় চরিত্র টুকটুকি দাস কি বলছেন?
কোন কাজ ছোট নয়, ইচ্ছে থাকলে হয়তো উপায় হয়। হয়তো এভাবেই ভালো রাখার ইচ্ছে গুলো ভালো থাকা কে বাঁচিয়ে রাখে। এই “এম এ ইংলিশ চা-ওয়ালি” টুকটুকি দাস এই মুহূর্তে শুধু আমাদের রাজ্য নয় গোটা ভারতবর্ষের বেকার যুবক যুবতীদের কাছে এক নতুন আইকন।