Breaking Bharat: লেডিকেনির রহস্য সমাধান করেছেন কখনো? কেন উত্তর আর দক্ষিণের এই লড়াই একটা মিষ্টিকে ঘিরে? এই লেডিকেনি মিষ্টি (Ledikeni sweet) কেনার জন্য নাকি ট্রেন দাঁড়াতো এক ঘন্টা?
কথায় বলে রসে বশে বাঙালি। তাই রস নাই তৃপ্তি পাওয়া বাঙালির জীবন বাঁচার একটা অন্যতম উদ্দেশ্য বটে। অনুষ্ঠান বাড়ি হোক কিংবা বাড়িতে মহা ভোজের আয়োজন, মিষ্টি ছাড়া সবটাই কেমন যেন বিচ্ছিরি মনে হয়। অনেকে আবার শুকনো মিষ্টি খেতে পছন্দ করেন। সেক্ষেত্রে রসের মর্ম তারা বোঝেন না। তাই রসালো গল্পের স্বাদ আজ এই প্রতিবেদনে তাদের উপহার দিলাম আমরা।
রসগোল্লা চিনতে পারেন তো? কিন্তু যদি বলি এক হাড়ি লেডিকেনি কিনে আনতে হবে, পারবেন? মানে বলতে চাইছি পান্তুয়া আর লেডিকেনির মধ্যে তফাৎটা কজন জানেন? তাহলে একটু মিষ্টি নিয়ে গবেষণা করে আপনাকে উত্তরটা দিতে হবে।
লেডিকেনির ভেতরটা ফাঁপা, ছানার তৈরি, রসে টইটম্বুর:
যেমন ধরুন পান্তুয়া আর লেডিকেনি দুটো মিষ্টি তৈরীর উপাদান আলাদা আলাদা হয়ে থাকে। এক ঝলকে যারা দেখে চিনবেন না খেয়ে নিশ্চয়ই বুঝবেন যে পান্তুয়া তৈরি হয় ক্ষীর দিয়ে আর লেডিকেনি তৈরি হয় ছানা দিয়ে। এখানেই শেষ নয়, লেডিকেনির ভেতরটা ফাঁপা, ছানার তৈরি, রসে টইটম্বুর।
আর একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল ভেতরের এলাচ। ইতিহাস ঘেটে জানা যায় এই মিষ্টির সঙ্গে নাকি ব্রিটিশদের সম্পর্ক আছে। সময়কালটা সিপাহী বিদ্রোহের প্রাক্কালে,১৮৩৫ সালে শার্লট স্টুয়ার্টের সঙ্গে লর্ড ক্যানিং-এর বিয়ে হয়।
লেডি ক্যানিং হয়ে ওঠেন এক জনপ্রিয় চরিত্র:
এরপর ১৮৫৬ সালে সিপাহি বিদ্রোহর আগের বছর ব্রিটিশ সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, লর্ড ডালহৌসির পরে ভারতের গভর্নর হিসেবে যিনি দায়িত্ব পালন করবেন তার নাম হলো লর্ড ক্যানিং। মূলত তার হাত ধরেই শার্লট ভারতে আসেন। আজকালকার যুগের সেলিব্রেটিদের মত লেডি ক্যানিং হয়ে ওঠেন এক জনপ্রিয় চরিত্র।
আরো পড়ুন – ‘মহিলাদের সঙ্গে সেক্স’ নিয়ে আলোচনা! অন্যদিকে ‘সেক্সের গল্প’ শুনতে কি ভালো লাগে?
ভারতীয় সংস্কৃতির ওপর তার ভালোবাসা আর সহানুভূতি ছিল। তিনি প্রকৃতি খুব ভালোবাসতেন। নিজের হাতে ছবি আঁকতেন। ব্যারাকপুরে তার বাড়ি এবং নিজের পরিচর্যায় গড়ে তোলা বাগান দর্শনীয় স্থান বটে। ১৮৬১ সালে দার্জিলিং যেতে গিয়ে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়।
লেডিকেনি মিষ্টির জন্য ট্রেন দাঁড়াতো এক ঘন্টা?
এর বেশ কিছু বছর পরে কলকাতার বিখ্যাত ভীমচন্দ্র নাগ বানিয়ে ফেললেন এক নতুন মিষ্টি, যার নাম দিলেন ‘লেডি ক্যানিং’। বুঝতে অসুবিধে নেই যে সেই মিষ্টি হল আজকের লেডিকেনি। ওই উচ্চারণের ব্যাপারটা কিছুটা অপভ্রংশ বলতে পারেন। ব্যাস এইভাবে এইভাবে ভাইসরয় পত্নীর নাম জুড়ে গেল বাঙালির ঐতিহ্য আর অহংকারের মিষ্টির সঙ্গে ।
আরো পড়ুন – abortion : সন্তান ধারণে সমস্যা! ‘সন্তান ধারণ’ করা সত্ত্বেও বারবার তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে! কি করবেন?
জানা যায় এই লেডিকেনি মিষ্টি কেনার জন্য নাকি ট্রেন দাঁড়াতো এক ঘন্টা। কারণ ট্রেন থেকে প্যাসেঞ্জার নেমে এই মিষ্টি কিনতেন। এই মিষ্টি বরাবরই রসালোই ছিল। অনেকটা রসগোল্লার সঙ্গে টক্কর দেয়ার মত ব্যাপার। এবার তাহলে আরো এক জনশ্রুতির কথা বলি এই মিষ্টির সৃষ্টি নিয়ে (Ledikeni sweet Mystery in bengal)।
ইতিহাস আমাদের নানা ধরনের তথ্যের সূত্র খুঁজে পেতে সাহায্য করে। সেভাবেই মিষ্টির ইতিহাস ঘাটতে ঘাটতে একটি নাম উঠে আসে ,হরিদাস পাল । অনেকে বলেন তিনি নাকি এই মিষ্টির স্রষ্টা। তৎকালীন সময়ে রানাঘাটের জমিদার ছিলেন পালচৌধুরীরা। তাদের রাজত্বে রাণাঘাট ভ্রমণে আসেন লেডি ক্যানিং।
আরো পড়ুন – diet for child : ‘শিশুর খাওয়া দাওয়া’ নিয়ে চিন্তিত! শিশুদের কি ধরনের খাবার দেওয়া উচিত?
তাকে খুশি করতেই এই স্পেশাল মিষ্টি বানানো হয়। আর তার নামের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নামকরণ হয় ‘লেডিকেনি’। একটা বিষয় কিন্তু মনে রাখতে হবে, লেডিকেনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তার ভিতরে থাকা এলাচ। উত্তরের মিষ্টির দোকান বলে এটা তাদের সৃষ্টি দক্ষিণ কলকাতা বলে, এটা তাদের।
মিষ্টি কার সেটা নিয়ে যতই তর্ক চলুক না কেন, নিঃসন্দেহে বাঙালির পাতে লেডিকেনির বাহার চোখে দেখে এবং জিভ চেখেও আরাম!