Breaking Bharat: “মুকুল, তুমি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছ?” ঠিক এই ভাবেই ডক্টর হাজরা মুকুলকে হিপনোটাইজ করেছিলেন, মনে আছে নিশ্চয়ই? জীবনে কখনো না কখনো, কোনও না কোনও পর্যায়ে সম্মোহনের মধ্যে আপনিও নিশ্চয়ই পড়েছেন। ধরুন প্রেমে পড়েছেন ,প্রিয় মানুষকে দেখেই সম্মোহিত হয়ে গেছেন বা ধরুন সিনেমা দেখছেন এতটাই তার ঘোর, যে আপনি বিভোর হয়ে গেছেন। এগুলো কিন্তু সম্মোহনের জন্যই হয়েছে। আসলে হিপনোটিজম নিয়েই আজকের কিছু কথাবার্তা (Learn about hypnotism)।
সম্মোহন বিদ্যা অতি প্রাচীনকাল থেকেই সমাজে প্রচলিত:
সম্মোহন যাকে ইংরেজিতে বলে হিপনোটিজম, সেটা কিন্তু আজকের বিষয় নয়। সম্মোহন বিদ্যা অতি প্রাচীনকাল থেকেই সমাজে প্রচলিত। আগে যখন শিক্ষার প্রসার হয়নি তখন এইসব সম্মোহন ব্যাপারটিকে অলৌকিক বলে বিশ্বাস করতেন অনেকে (Hypnosis was believed to be a miracle)। অনেকে আবার যাদুবিদ্যা (Magic) আখ্যা দিয়েছেন। এক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো, ম্যাজিক বা যাদুবিদ্যার ক্ষেত্রেও সম্মোহন বিশেষ ভাবে ব্যবহার করা হয়।
ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় অষ্টাদশ শতক থেকে সম্মোহন বিদ্যা নিয়ে চর্চা শুরু হয়। ১৮৪০ সালে স্কটল্যান্ড দেশের এক ডাক্তার জেমস ব্রেড এর নামকরণ করেন। তবে যাই বলুন, কী করে সম্মোহন সম্ভব হয়, এর কোন ব্যাখ্যা আজ পর্যন্ত কেউই দিতে পারেননি। এটা একটা কল্পিত অবস্থা মানে একটা ঘোরের মতো। আপনি তার মধ্যে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছেন। অনেকে বলেন ঘুমিয়ে থাকলে স্বপ্ন হিসেবে অনেক কিছু ধরা দেয়। যখন আপনি স্বপ্ন দেখেন তখন তার মধ্যে ডুবে থাকেন। বুঝতে পারেন না যে গোটা ঘটনা ঘুমের মধ্যে ঘটছে।
বা ধরুন কোন একটা সিনেমা দেখছেন সিনেমার মধ্যে এতটাই ডুবে গেলেন যে পারিপার্শ্বিক কী রয়েছে, বা কী হয়েছে সে সম্পর্কে আপনার কোন ধারনাই রইল না। কিছু সময়ের জন্য আপনি পুরোপুরি সিনেমা দ্বারা সম্মোহিত। এটা অনেকের ক্ষেত্রে গল্পের বই পড়তে পড়তেও হয়। হিপনোটিজম বা সংবহন পদ্ধতি চলাকালীন মস্তিষ্কের সচেতন অংশকে সাময়িকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এবং এক দিকে মনোনিবেশ করানো সম্ভব হয়। অবশ্য এটার জন্য আপনাকে পড়াশুনা করতে হবে। মনস্তাত্ত্বিক বিদ্যায় এটা অলৌকিক কিছু নয়, বিজ্ঞানসম্মত ভিত্তি আছে এই ঘটনার।
সম্মোহনের সময় কিছু শারীরিক আর চরিত্রগত পরিবর্তন দেখা যায়:
যেমন ধরুন হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া, রক্ত সঞ্চালন বাড়তে বা কমতে পারে। সাধারনত হিপনোটাইজ হয়ে অনেক মানুষ অনেক কথা বলেন যার বেশির ভাগটাই ফলস মেমরি মানে সেরকম কোনো ভিত্তি নেই। তবে এটা বলার পর তাদের মনের ভার কেটে যায়, মানসিকভাবে নিজেকে সুস্থ আর হালকা বোধ করেন অনেকেই।
তবে আবারও বলছি এই বিষয়ে দক্ষতা অর্জনের জন্য পড়াশোনা প্রয়োজন। কোনও কুসংস্কারকে আমরা প্রশ্রয় দিই না বা তার প্রচার করি না। কারোর কাছে আজগুবি, কেউ বলেন বুজরুকি।কেউ ভাবেন ব্ল্যাক ম্যাজিক, তর্কবিতর্ক, কুসংস্কার, আলোচনা – এই সবকিছু নিয়ে হিপনোটিজম বিষয়টি আমাদের জীবনের এক অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে।তবে এর পুরোটাই দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু ইচ্ছা শক্তির উপর। যেমন ধরুন কোন মানুষের মাথার মধ্যে আপনি এটা ঢুকিয়ে দিলেন যে তার মধ্যে এমন কিছু আছে এটা স্বাভাবিক নয়।
আরো পড়ুন- যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন ? মুঠো মুঠো পেইনকিলার খেয়ে নিচ্ছেন না তো? জানেন পেইনকিলার আসলে কি?
ব্যাস মস্তিষ্ক সেটা নিয়ে ভাবতে থাকবে। এর জেরে হয়তো শক্তিশালী আবার হয়তো বা অসহায় ভাববেন নিজেকে । আসলে মনের চরাচর সর্বস্থানে। ১৮৮২ সালে হিপনোটিজম নিয়ে গবেষণার জন্য ব্রিটেনে “the society for physical research ” গড়ে ওঠে। ব্রিটিশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন জানিয়ে দেয় যে হিপনোটিজম একটি বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি।
আরো পড়ুন- জোয়ার ভাটা কি ভাবে সৃষ্টি হয়? জীবনের উত্থান পতনের সাথে এর কি কোন সম্পর্ক আছে?
আবারো বলি চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এটা আসলে প্রোগ্রামিং অফ সাবকনসাস মাইন্ড । মানে বলতে পারেন হিপনোথেরাপি । যারা এই বিষয়ে পড়াশোনা করে ডিগ্রী অর্জন করেছেন সেই সমস্ত হিপনোথেরাপিস্ট এর কাছে গিয়ে চিকিৎসা করাতে পারেন কিন্তু কোন রকমের কুসংস্কার বা ফাঁদের প্রলোভনে পা দেবেন না ।
আরো পড়ুন- নিজের সন্তানকে অভাবের যন্ত্রণাটা বুঝতে দিন? এটাও দরকারি! Breaking Bharat
পরিশেষে বলি ‘বশীকরণ’ এই শব্দটা আপনার মাথায় আসতেই পারে। কিন্তু বিজ্ঞান এবং বিজ্ঞানীরা বলেন মনের জোর আর ইচ্ছেশক্তির জোরের কাছে আর কিছুই নেই। তাই আত্মবিশ্বাসী হোন, নিজের উপর আস্থা রাখুন।