Breaking Bharat: মকর সংক্রান্তিতে যাদের ভিড় গঙ্গাসাগর জুড়ে, সেই নাগা সন্ন্যাসীদের জীবন (Naga Sanyasi) কেমন? সাধনার পথ বড়ই কঠিন! কাম ক্রোধ ভয় মায়া ত্যাগ করে এই কঠিন পথ ধরে এগিয়ে যাওয়া নাগা সন্ন্যাসীদের জীবনের ভয়ঙ্কর পথ সম্বন্ধে জানেন?
মনুষ্য জীবনের উদ্দেশ্যই হলো ঈশ্বর লাভ। বাকি সবকিছু তো সাময়িক অর্থ, মোহ, যশ, প্রতিপত্তি – এই সব কিছু একটা সময়ের পড়ার মানুষের সঙ্গে থাকে না। শুধু থেকে যায় কর্ম। আর সেই কর্ম দিয়ে ভক্তির পথ অর্জন করে ঈশ্বরকে লাভ করার চেষ্টা করে যাওয়াটাই, জীবনে মুক্তির পথ খুঁজে পাওয়ার একমাত্র রাস্তা।
নাগা সন্ন্যাসীদের জীবনের ভয়ংকর পথ (Naga Sanyasi):
এই পথ সহজ নয় হাজার হাজার নাগা সন্ন্যাসীরা প্রত্যেকটা মুহূর্তে কৃচ্ছ সাধন করে এভাবেই জীবন যাপন করছেন। মকর সংক্রান্তিতে যাদের ভিড় গঙ্গাসাগর জুড়ে, তাদের জীবনের ভয়ংকর পথ জানলে অবাক হয়ে যাবেন আপনিও।
আমরা বিশ্বাস করি ধর্ম যার যার কিন্তু ভক্তি সবার। একজন প্রকৃত ভক্ত না হলে ভগবানকে লাভ করা সম্ভব নয়। ভক্তি ভরে নিষ্ঠা ভরে ভগবানকে ডাকতে হয় সে ডাকার মধ্যে কোন স্বার্থ থাকলে চলে না, লোভ থাকলে চলে না। চারিদিকে কি হচ্ছে না হচ্ছে সেসবের খেয়াল না রেখে, সেই দিকে নিজেকে মগ্ন না করে, ঈশ্বর চিন্তায় বিভোর হয়ে না থাকলে কি আর ঈশ্বরকে পাওয়া যায়?
নাগা সন্ন্যাসীদের ইতিহাস (Naga monks):
যে ধর্ম যে দেবতাকেই বিশ্বাস করুক না কেন আসল কথাটি পরম ঈশ্বরের। তাই সেই আরাধ্য দেবতার আরাধনায় গা-ভর্তি ছাইভষ্ম মাখা মানুষগুলি যেন শীত-গ্রীষ্ম বর্ষা – সব ঋতুতেই নির্বিকার। আমাদেরই প্রতিবেদনের সব কটি তথ্য কিছুটা গবেষণা করে কিছুটা মানুষের বিশ্বাস থেকে উপলব্ধ।
অনেকে মনে করেন শাস্ত্রের ব্যাখ্যা অনুযায়ী কঠিনতম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরই একজন সন্ন্যাসী ‘নাগা সন্ন্যাসী’ হতে পারেন। জাগতিক যাবতীয় কামনা বাসনা ঈশ্বরের কাছে সমর্পণ করেই তিনি হয়ে ওঠেন নাগা সন্ন্যাসী। এই পথ বলতে যতটা সহজ বাস্তবে তা মোটেও নয়।
নাগা সাধুদের কুম্ভমেলায় স্নানের অগ্রাধিকার:
সনাতন ভারত বর্ষের ধর্ম সম্পর্কিত নানা তথ্যাবলী অনেকটাই প্রচলিত বিশ্বাস এবং মিথ থেকে চলে আসছে। সেই তথ্যের উপর ভিত্তি করেই জানা যায়, অন্যধর্মের আগ্রাসন থেকে হিন্দুধর্মকে রক্ষা করার জন্য আদিগুরু শঙ্করাচার্য সাধুদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেছিলেন।
এবং পরবর্তীতে তাঁরই কথামতো এই নাগা সন্ন্যাসীরা ধর্মকে রক্ষার জন্য অস্ত্রশিক্ষা গ্রহণ করেন। তাদের যথাযোগ্যস্থানে মর্যাদা দিতে নাগা সাধুদের কুম্ভমেলায় স্নানের অগ্রাধিকার দেওয়ার রীতি প্রচলিত আছে (Bathing priority in Kumbh Mela for Naga Saints)। মকর সংক্রান্তিতে গঙ্গাসাগরে তাদের ভিড় চোখে পড়ার মতো।
শুধুমাত্র হিন্দুরাই বুঝি নাগা সন্ন্যাসী হওয়ার উপযুক্ত?
কথিত আছে সব তীর্থ বারবার গঙ্গাসাগর একবার। এই গঙ্গাসাগরে কনকনে ঠান্ডায় পৌষ মাসের সংক্রান্তিতে নাগা সন্ন্যাসীদের ভিড় দেখে ধারণা করাই যায় কতটা কঠিন তাদের সাধন পথ। অনেকেই মনে করেন শুধুমাত্র হিন্দুরাই বুঝি নাগা সন্ন্যাসী হওয়ার উপযুক্ত। কিন্তু একথা ঠিক নয়।
ইতিহাস এবং শাস্ত্র ঘেঁটে যতটুকু বোঝা যায় তার ভিত্তিতে বলা যায়, যে ব্যক্তির বৈরাগ্য লাভের ইচ্ছে প্রবল তিনি নাগা সন্ন্যাসী হিসেবে ব্রত পালনের যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হন। অনেকেই মুসলিম এবং খ্রিস্টান ধর্ম থেকে ঈশ্বর লাভের আশায়, নাগা সন্ন্যাসী হয়ে সাধনের পথ বেছে নিয়েছেন (Sadhana by becoming a Naga monk)।
তাই শুধুমাত্র হিন্দুরাই যে নাগা সন্ন্যাসী হতে পারেন। এ কথা ঠিক নয়। আবার অনেক শিক্ষিত ডাক্তার ইঞ্জিনিয়াররা যারা সমাজের সুপ্রতিষ্ঠিত বিলাশবহুল জীবনযাপনের অধিকারী , তারাও ঈশ্বরের টানে সব ছেড়ে এই রাস্তায় হাঁটতে শুরু করেছেন এমন নজিরও আছে।
শুধু পুরুষেরা নয় মহিলারাও হতে পারেন নাগা সন্ন্যাসিনী:
সন্ন্যাস গ্রহণ করতে গেলে নিজের আগের জীবনকে বিসর্জন দিয়ে আসতে হয়। চতুরাশ্রমে বলাই আছে ব্রহ্মচর্য, গার্হস্থ, বানপ্রস্থ আর সন্ন্যাসের কথা। এই সময় সাংসারিক জীবনকে সম্পূর্ণরূপে ভুলে নিজের এবং প্রিয়জনদের পিন্ডদান করে এক নতুন রূপে জন্ম নিতে হয়।
কোন জাগতিক মোহ, মায়া, কাম, লোভ ,বাসনা, অহংকার পিছুটান থাকবে না। শুধুই ঈশ্বরের কাজ করে যাওয়া। কুড়ি বছরের একটা লম্বা সফর থাকে এই জীবনে। পাশাপাশি যে কোনও পরিস্থিতিতে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয় , অবিচল থাকতে হয়। প্রয়োজনে মাতৃভূমি এবং সমাজের জন্য অস্ত্র ধারণ করতে হয় এদের। ১২ বছর কঠোর সাধনা করতে হয়।
আরো পড়ুন – Dada Boudi Biryani : দাদা বৌদির বিরিয়ানি! কোন ম্যাজিকে মানুষের মন জয় করল এই বিরিয়ানি?
তারপর গুরুদেবের কাছ থেকে দীক্ষা লাভের মন্ত্র পেতে হয়। এই সময় নিজের কাজ নিজেকেই করতে হয় আর জাগতিক সুখ স্বাচ্ছন্দ থেকে সেসবের ভাবনা থেকেও নিজেকে বিরত রাখতে হয় মনকে পবিত্র রাখতে। শুধু পুরুষেরা নয় মহিলারাও হতে পারেন নাগা সন্ন্যাসিনী। সেক্ষেত্রে সন্ন্যাসিনীরা নগ্ন থাকেন না।
আরো পড়ুন – Domestic violence : কেউ অত্যাচার করবে আর সেটা মুখ বুঝে মেনে নেবেন? এটা হতে দেবেন না!
লজ্জা নিবারণের জন্য শরীরে সেলাইবিহীন একটুকরো হলুদ রঙের কাপড় জড়িয়ে রাখতে হয় তাঁদের। পুরুষের মতো নারীকেও প্রমাণ করতে হয় তিনি ঈশ্বরে নিবেদিত প্রাণ। আরো একটা বিষয় বলে রাখা দরকার। এইযে নাগা সন্ন্যাসীরা সায়ী ভস্ম মেখে থাকেন বলে জানা যায়, সেই ছাই, ভস্ম তৈরি করা হয় বিশেষ উপায় ব্যবহার করে।
আরো পড়ুন – Women’s shirts : মেয়েদের শার্ট কেনার চল আছে? ছেলেদের ও মেয়েদের শার্টের পার্থক্য কোথায় জানেন?
যজ্ঞের ভস্মে গোবর, কলাপাতা, বেলপাতা, কলা, ঘি, কাঁচা দুধ মিশিয়ে তৈরি করা হয় ওই বিশেষ মিশ্রনকে। এবং নাগা সন্ন্যাসীরা বিশ্বাস করেন ওই ছাই গায়ে মাখলে মশা বা বিষাক্ত সাপ ধারে কাছে ঘেঁষে না। এভাবেই যুগের পর যুগ ধরে কঠিন সাধন পথে এক পা এক পা করে এগিয়ে চলেছেন তারা ঈশ্বর লাভের উদ্দেশ্যে।