Breaking Bharat: মৃত্যুর আগে জল্লাদকে ঠিক কোন প্রশ্ন করেছিলেন ক্ষুদিরাম (Khudiram Bose)? কেনই বা ফাঁসুরে অবাক হয়েছিলেন কিশোরের প্রশ্নে?
একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি…
ফাঁসির মঞ্চে প্রথম জীবনের জয়গান গাইলেন শহীদ ক্ষুদিরাম
এবার ৭৫ বছর স্বাধীনতার প্রাক্কালে আজ যাঁরা স্বর্গগত তাঁরা বড়ই প্রিয়। তাঁদের চলে যাওয়া আজও বেদনাদায়ক। আর হাসতে হাসতে ফাঁসির মঞ্চে প্রাণ বলিদান দিয়ে শহীদ হয়েছেন যাঁরা, তাঁদের প্রণাম করি আমরাও। আজ দেশের সর্বকনিষ্ঠ স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসাবে হাসিমুখে ফাঁসিতে চড়েছিলেন যিনি তাঁকে স্মরণ করব আমরা (Khudiram Bose was an Indian revolutionary)।
ক্ষুদিরাম বসুর আত্মজীবনী (khudiram bose story):
জন্ম ১৮৮৯ সালের ৩ ডিসেম্বর, দেশের সন্তান ক্ষুদিরাম বসু (Khudiram Bose)। দিনটা ছিল ১৯০৮ সালের ১১ আগস্ট। ক্ষুদিরামের বয়স তখন ১৮ বছর ৭ মাস ১১ দিন। হাসতে হাসতে ফাঁসির মঞ্চে উঠেছিলেন তিনি। যা রীতিমতো অবাক করে দিয়েছিল ইংরেজ সরকারকেও।
দেশপ্রেমের কথা যখনই স্মরণে আসে, তখনই যেন অবচেতনেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে ১৮ বছরের এক তরতাজা যুবকের হাসিখুশি মুখ। তিনি ক্ষুদিরাম বসু । ছোটবেলা থেকেই ক্ষুদিরাম বসু ছিলেন দৃঢ়চেতা। ছোট থেকে রীতিমতো লড়াই করে বড় হয়েছেন তিনি।
জন্ম মেদিনীপুর শহরের নিকটবর্তী কেশপুর থানার অন্তর্গত মৌবনী গ্রামে। বাবা ছিলেন ত্রৈলক্যনাথ বসু, মা লক্ষ্মীপ্রিয়া দেবী। তিন কন্যার পর ক্ষুদিরামের জন্ম দেন লক্ষ্মীপ্রিয়া দেবী। কিন্তু আগে লক্ষ্মীপ্রিয়া দেবীর আরও দুই পুত্র সন্তান অকালে মারা যান।
তাই এই ছেলেও মারা যেতে পারে এমন আশঙ্কায় ৩ মুঠো চাল বা খুদের বিনিময়ে তাঁকে নিজের বড় দিদির কাছে দান করে দেন লক্ষ্মীপ্রিয়া দেবী। যেহেতু খুদের বিনিময়ে পাওয়া গিয়েছে তাই সেই ছেলের নাম দেওয়া হয় ক্ষুদিরাম। তমলুকের হ্যামিল্টন স্কুল ও মেদিনীপুর কলিজিয়েট স্কুলের পড়াশোনা করেন ক্ষুদিরাম (khudiram bose story)।
দেশপ্রেম যেন তাঁর রন্ধ্রে রন্ধ্রে ধ্বনিত হয়েছিল। মাত্র ১৫ বছর বয়সেই অনুশীলন সমিতি স্বেচ্ছাসেবী হয়ে ওঠেন তিনি। ব্রিটিশ শাসন বিরোধী পুস্তিকা বিতরণের জন্য একবার গ্রেফতারও হয়েছিলেন। ১৬ বছর বয়সে সরকারি আধিকারিকদের আক্রমণের উদ্দেশ্যে থানার কাছেই বোমা মজুত করতে শুরু করেন ক্ষুদিরাম।
তখন ভারতে বাড়ছে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অত্যাচার। দেশের সন্তানেরা মায়ের পরাধীনতা মেনে নিতে পারছেন না। গর্জে উঠছেন তাঁরা ভেতরে ভেতরে, প্রস্তুত হচ্ছেন গোপনে। ইংরেজ সংরকারের প্রিয় নিষ্ঠুর ম্যাজিস্ট্রেট ডগলাস কিংসফোর্ডকে হত্যার ছক কষেন বিপ্লবীরা।
প্রথমে একবার বইয়ের মধ্যে বোমা রেখে কিংসফোর্ডকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। বইয়ের মধ্যে বিশেষ প্রক্রিয়ায় রাখা হয়েছিল বোমা। কিন্তু সেই বই খোলেননি কিংসফোর্ড। ফলে বিস্ফোরণও ঘটেনি। তবে সেই পরিকল্পনা ব্যর্থ হলেও কিংসফোর্ডকে হত্যার চেষ্টা থেমে থাকেনি। এরপর মুজফফরপুরে ব্রিটিশ ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ডকে খুনের পরিকল্পনা করেন ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকি।
আরো পড়ুন- Virginity Test : ভার্জিনিটি নিয়ে ভ্রূ কুঁচকান? বিয়ের বাজারে কুমারী মেয়ের কদর কেন বেশি?
কিন্তু সেবারেও ভাগ্য সহায় হয় কিংসফোর্ডের। যে গাড়িতে বোমা মারা হয় তাতে কিংসফোর্ডের পরিবর্তে ছিলেন দুই ব্রিটিশ মহিলা, মিসেস কেনেডি ও তাঁর মেয়ে। বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় দুজনেরই। এরপর সেখান থেকে পালিয়ে যান ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকি । কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।
ফাঁসির দড়িতে মোম কেন লাগান হয়?
ওয়াইনি রেল স্টেশনে ধরা পড়ে যান ক্ষুদিরাম। আর প্রফুল্ল ব্রিটিশের সঙ্গে লড়াই করতে করতে করতে আত্মহত্যা করতে প্রাণ বিসর্জন দেন। এরপর বন্দি ক্ষুদিরামকে আদালতে তোলে ব্রিটিশ পুলিশ। যখন ফাঁসির সাজা দেওয়া হয় তখন তাঁর মুখে হাসি লেগেছিল। যা দেখে চমকে যান বিচারক কর্নডফ। এমনকী ফাঁসির মঞ্চে উঠেও তাঁর মুখে ছিল হাসি (khudiram bose fasi)।
আরো পড়ুন- Harmful aspects: সাজগোজের মধ্যেই রয়েছে ভয়ঙ্কর বিপদ! জানেন কি সাজের ক্ষতিকর দিক ?
আরো পড়ুন- Ratan Tata : রতন টাটা মানেই আদর্শ, টাটা কোম্পানির কর্ণধার। তিনিই বহু মানুষের অনুপ্রেরণা
একরকম হাসতে হাসতেই তিনি জল্লাদ কে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘ফাঁসির দড়িতে মোম কেন লাগান হয়?’ ফাঁসির মঞ্চে সে কথা শুনে কার্যত তাজ্জব বনে যান জল্লাদও। এই সেই ছেলে যে ভারতের বুকে সেদিন স্বাধীনতার সোপান এঁকে দিয়ে ছিল। ক্ষুদিরাম বসুকে ফাঁসি দেওয়া হয় মুজফফপুর সংশোধনাগারে। বর্তমানে সেই কারাগারের নাম বদলে বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুর নামেই নামকরণ করা হয়েছে।
আজ ক্ষুদিরাম নেই, কিন্তু বেঁচে আছে তাঁর বলিদান। তাঁকে প্রণাম জানায় আপামর ভারতবাসী।